ঢাকা ১৬ বৈশাখ ১৪৩২, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫
English
মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২

ভাষার মাস পলাশী ব্যারাকে হামলায় সম্মিলিত প্রতিবাদ

প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:৩৪ এএম
পলাশী ব্যারাকে হামলায় সম্মিলিত প্রতিবাদ
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

ভাষাসৈনিক আহমদ রফিক তার ‘একুশের মুহূর্তগুলো’ গ্রন্থে লিখেছেন, উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য পাকিস্তান শিক্ষা কমিশনের সুপারিশের পর ঢাকার ছাত্রসমাজে যে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের সূচনা হয় তাতে ঢাকা শহরের অধিকাংশ স্কুল, প্রতিটি কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ছাত্রাবাসের ছাত্ররা অংশগ্রহণ করে। তবে তখন পর্যন্ত এই আন্দোলন (বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার) পুরোনো ঢাকার যুব-মানসে সাড়া জাগাতে পারেনি। তাদের সমর্থন লাভ করেনি। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি উত্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে সরকার পক্ষের নানা অপপ্রচার, ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের নেতাদের বক্তৃতা-বিবৃতি এবং সেই সঙ্গে ঢাকার নবাববাড়ীর উর্দুর পক্ষে অবস্থান ও তাদের প্রচার-প্রভাবই ছিল এর কারণ। তবে আরও একটি কারণ কিছুটা হলেও কাজ করে থাকতে পারে। পুরোনো ঢাকার বাসিন্দা যাদের ‘ঢাকাইয়া’ নামে ডাকা হয়, তাদের কথ্যভাষা ছিল বাংলা-উর্দু মেশানো এক রকম দো-আঁশলা ভাষা। তাই তাদের উর্দুর পক্ষে টানা সহজ হয়েছিল।

শিক্ষা কমিশনের একপেশে নীতি এবং রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার দাবি উপেক্ষা করার প্রতিক্রিয়ায় এর আগে ছাত্রদের যে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ সংঘটিত হয়, তা সীমাবদ্ধ ছিল উত্তর ঢাকা তথা বৃহত্তর রমনা এলাকায়। পুরোনো ঢাকায় বাংলা ভাষাবিরোধী প্রচারণার ফলে রক্ষণশীল চেতনার স্থানীয় যুবকদের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। তাদেরই কয়েকজন ১৯৪৭ সালের ৯ ডিসেম্বর কয়েকটি বাস ও ট্রাকে চড়ে উর্দুর পক্ষে স্লোগান দিতে দিতে রমনা এলাকায় এসে পড়েন। তারা পলাশী ব্যারাক এবং পার্শ্ববর্তী মেডিকেল কলেজ ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্রদের ওপর হামলা চালায়। পলাশী ব্যারাক তখন ছিল বেশকিছুসংখ্যক মেডিকেল ছাত্রের আবাসস্থল। অন্যরা সলিমুল্লাহ কিংবা ফজলুল হক হলে থাকতেন। মেডিকেল ছাত্রদের হোস্টেল তখনো তৈরি হয়নি। 

ঢাকাই যুবাদের এই হামলার খবর দ্রুত আশপাশে ছড়িয়ে পড়লে পলাশী ব্যারাকের সরকারি কর্মচারী, বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা আক্রান্ত ছাত্রদের সহায়তায় এগিয়ে আসেন। তাদের প্রতিরোধের মুখে দুর্বৃত্তরা দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। তবে পালানোর আগে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ হোস্টেলের যথেষ্ট ক্ষতিসাধন করে। 

ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় স্থানীয় নাগরিকদের মধ্যে যথেষ্ট ক্ষোভ ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। বাংলা রাষ্ট্রভাষার পক্ষে সচেতনতা বাড়তে থাকে। ইতোমধ্যে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ মাঠে ঘটনার প্রতিবাদ এবং এই হামলার প্রতিকার চেয়ে বিরাট ছাত্রসভা অনুষ্ঠিত হয়। তাতে বহু স্থানীয় মানুষ অংশগ্রহণ করেন। সভায় ঘটনার নিন্দা এবং রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।

শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১২:১৮ পিএম
শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের মৃত্যুবার্ষিকী আজ
শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক

উপমহাদেশের প্রজ্ঞাবান রাজনীতিবিদ শেরেবাংলা আবুল কাশেম (এ কে) ফজলুল হকের ৬৩তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ ২৭ এপ্রিল। ১৯৬২ সালের এই দিন ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। তিনি ‘হক সাহেব’ নামেও পরিচিত। শিক্ষানুরাগী ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জীবন্ত কিংবদন্তি হিসেবে ইতিহাসের পাতায় তার রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ স্থান।

শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক ১৮৭৩ সালের ২৬ অক্টোবর ঝালকাঠি জেলার রাজাপুরের সাতুরিয়া গ্রামের মিঞা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। 

বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে তিনি অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী, পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর, যুক্তফ্রন্ট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী, কলকাতা সিটি করপোরেশনের প্রথম মুসলিম মেয়র এবং আইনসভার সদস্যসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।

এ কে ফজলুল হক ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে রাখেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। ১৯৪০ সালে তিনি ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব উত্থাপন করেন। তিনি ২১ দফা দাবিরও প্রণেতা ছিলেন।

হবিগঞ্জে দুই শতাব্দীর বৈশাখী মেলা

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:২৮ এএম
আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৪২ পিএম
হবিগঞ্জে দুই শতাব্দীর বৈশাখী মেলা
হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী মেলা। ছবি: খবরের কাগজ

বাংলা নববর্ষ মানেই উৎসব, আর উৎসব মানেই মানুষে মানুষে মিলন। তবে হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে নববর্ষ উদযাপনের রীতিতে আছে ব্যতিক্রমী সৌন্দর্য। সরকারি হিসাব অনুযায়ী গত মঙ্গলবার বাংলা বছরের দ্বিতীয় দিন হলেও, পঞ্জিকা অনুসারে এখানেই উদযাপন হয় নববর্ষের মূল আয়োজন। এ উপলক্ষে বসে এক দিনের বৈশাখী মেলা, যা টিকে আছে টানা দুই শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে। কথিত আছে, এই মেলার শুরু ব্রিটিশ আমল থেকেই।

চুনারুঘাট উপজেলার প্রাণকেন্দ্র ঘিরেই বসে এই ঐতিহ্যবাহী মেলা। গ্রামীণ বাংলার নানা উপকরণ, কৃষিপণ্য ও দেশীয় খাবারের পসরা নিয়ে হাজির হন দোকানিরা। মেলার প্রতিটি কোণে ছড়িয়ে থাকে বাংলার মাটি ও মানুষের গন্ধ।

মেলায় ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন কৃষিপণ্য ও উপকরণের ভিড়। লাঙল, জোয়াল, মই, ঘাইল-ছিয়া, মাছ ধরার ঝাঁকি জাল, ভাঁড়, কলসি ইত্যাদি। স্থানীয় কৃষকরা জানান, এ মেলাই তাদের জন্য বছরের সবচেয়ে বড় কৃষিপণ্য কেনাকাটার সুযোগ।

এই মেলায় আসেন অনেক প্রবীণ মানুষ, যারা ছোটবেলায় বাবার হাত ধরে প্রথম এসেছিলেন। এখন একাই আসেন। কিন্তু চোখে-মুখে সেই পুরোনো দিনের ঝলক। স্থানীয় আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের এলাকায় এই মেলাটি ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ছোটবেলা বাবা-দাদার সঙ্গে মেলা ঘুরতে আসতাম। এখন নিজের নাতি-নাতনিদের নিয়ে আসি।’

মমরাজ মিয়া বলেন, ‘বছরে কৃষিকাজে যত সরঞ্জাম দরকার, সবগুলো এই এক দিনেই এখান থেকে কেনা হয়। এমন কোনো কৃষিপণ্য নেই, যা এখানে পাওয়া যায় না। এমনকি কোনো কোনো জিনিস এখন বিলুপ্ত, বাজারে পাওয়া যায় না, কিন্তু এখানে ঠিকই পাওয়া যায়।’ 

তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যাচ্ছে ছবিটা। আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার বাড়ায় আগের মতো কৃষি উপকরণের চাহিদা কমেছে। 

অনেক বিক্রেতা জানান, তারা এবার আগের তুলনায় কম পণ্য এনেছেন। বিক্রেতা ছাবু মিয়া বলেন, ‘আগের মেলা আর এখনের মেলার মধ্যে রাত-দিন তফাত। আগে মই, লাঙল বিক্রি করে দম ফেলতে পারতাম না। এখন বিক্রি কমে গেছে। মানুষ আধুনিক যন্ত্রে চাষ করে। এসব কিনে কী করবে? তবুও ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য আমরা এসেছি। কম-বেশি বিক্রি হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘ধান চাষে না লাগলেও, নানা সবজি চাষের জন্য লাঙল লাগে। এ কারণে কম-বেশি বেচা-বিক্রি হয়।’

এদিকে মেলায় বসেছে মুখরোচক খাবারের পসরা। খৈ, মুড়ি, বাতাসা, জিলাপি, নাড়ু, মোয়া, সন্দেশসহ নানা ঘরোয়া মিষ্টান্ন। অনেকেই এই খাবার কেনেন দূর-দূরান্ত থেকে বেড়াতে আসা আত্মীয়-স্বজনের জন্য। 

নার্গিস বেগম প্রতিবছর ভাইয়ের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। তিনি বলেন, ‘বাচ্চাদের জন্য খেলনা কিনেছি, আর বাড়ির সবার জন্য দেশি মিষ্টি। নববর্ষের আনন্দ এখানেই খুঁজে পাই।’ অন্যদিকে শিশুদের জন্য থাকে নাগরদোলা, বেলুন, বাঁশির দোকান- সব মিলিয়ে এক প্রাণবন্ত পরিবেশ।’

চুনারুঘাটের এই মেলার কোনো লিখিত ইতিহাস নেই, নেই সরকারি তত্ত্বাবধানও। তবুও মানুষের মুখে মুখে, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বেঁচে আছে এ মেলা। নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার আনন্দ যেমন আছে, তেমনি আছে এক গভীর শিকড়ের সন্ধান।

বৈশাখে চিরচেনা ‘শখের হাঁড়ি’

প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩৮ এএম
আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ১২:১৩ পিএম
বৈশাখে চিরচেনা ‘শখের হাঁড়ি’
শখের হাঁড়িতে আলপনার সাহায্যে রং করছেন সুশান্ত কুমার পালের সহধর্মিণী মমতা রানী পাল। শনিবার (১২ এপ্রিল) রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটা পৌরসভার বসন্তপুর গ্রামে। ছবি: খবরের কাগজ

চিত্রিত মৃৎপাত্র অর্থাৎ রং দিয়ে নকশা আঁকা একধরনের পাত্র হচ্ছে শখের হাঁড়ি। আকার-আকৃতির দিক থেকে সাধারণ হাঁড়ির মতোই, পার্থক্য শুধু গায়ে। সাধারণ হাঁড়িতে খুব একটা রং ও নকশা করা থাকে না, কিন্তু শখের হাঁড়ির গায়ে উজ্জ্বল রং দিয়ে দৃষ্টিনন্দন চিত্র আঁকা হয়। দৃশ্যমান করা হয় ফুল, লতা-পাতা, পাখি, মাছসহ নানা কিছু।

মাটির তৈরি বিভিন্ন আকারের হাঁড়িতে শৈল্পিক এমন কারুকার্য দেখে মন ছুঁয়ে যাবে যে কারও। প্রতিবছর বৈশাখে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়াগায় বিপুল চাহিদা থাকে এই শখের হাঁড়ির। আসন্ন বৈশাখী মেলাকে ঘিরে রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটা পৌরসভার বসন্তপুর গ্রামে শখের হাঁড়িসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরির কারুশিল্পীদের ব্যস্ততা বেড়েছে। দিন-রাত সমানতালে কাজ করছেন তারা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পবার বসন্তপুরের পালপাড়ায় প্রতিটি পরিবার মাটির তৈরি নানান জিনিসপত্র তৈরি করছেন। এসব জিনিসপত্র বিক্রি করে তারা জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। তাদের তৈরি করা পণ্যের বেশির ভাগই গৃহস্থালি ও সাংসারিক সাজসজ্জার পণ্য। তবে ব্যতিক্রম কিছু পণ্য তৈরি করে পালপাড়ার কয়েকটি পরিবার। তারা মূলত দেশের বিভিন্ন মেলাকে টার্গেট করে মাটি দিয়ে হাঁড়ি, পুতুল, মুখোশ, ঘোড়া, কচ্ছপ, ছোট-বড় পুতুল, মাছ, সিংহ, হাতি, কবুতর, পেঁচা, বাঘ তৈরি করে। এ পণ্যগুলো বিভিন্ন মেলায় বিক্রি করেন তারা। ফলে আসন্ন বৈশাখী মেলাকে ঘিরে কারুশিল্পীদের ব্যস্ততা বেড়েছে।

কারিগররা জানান, বৈশাখ এলেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গার মানুষ। এতে কাজের চাপ বাড়ে। তবে বৈশাখ শেষ হলে আর কোনো বিশেষ চাহিদা থাকে না। শখের হাঁড়ির কারিগর মৃত্যুঞ্জয় কুমার পাল জানান, বৈশাখী মেলার আয়োজন নিয়ে তাদের ব্যস্ত থাকতে হয়। সারা দেশ থেকে ক্রেতারা আসেন শখের হাঁড়ি কিনতে। ৪ পিসের শখের হাঁড়ি, ছোট পাতিল, সাজি, পঞ্চ সাজি, মাটির পুতুল, খেলনা এসব কিনে নিয়ে যান ক্রেতারা।

ওই গ্রামের আনন্দ কুমার পাল বলেন, ‘অনেক আগে থেকেই দেখে আসছি শখের হাঁড়ি। আগে অনেক পরিবারই এ কাজ করত। এখন কারিগরের সংখ্যা কমছে। শৌখিন মানুষের কাছে শখের হাঁড়ির চাহিদা আছে। তবে আগের মতো নেই। তবে শুধু শখের হাঁড়িকে কেন্দ্র করে শখের হাঁড়ির কারিগর সুশান্ত কুমার পাল জায়গা করে নিয়েছেন চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বইয়ে। সেখানে তার ছবিসহ গল্প রয়েছে। আর রাষ্ট্রীয় পদক ছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন পুরস্কার। ঘুরে বেরিয়েছেন জাপান, শ্রীলঙ্কা ও নেপালে। 

সরেজমিনে সুশান্ত কুমার পালের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বৈশাখী মেলাকে কেন্দ্র করে শখের হাঁড়ি তৈরিতে সবাই ব্যস্ত। কেউ মাটি তৈরি করছেন, কেউবা শখের হাঁড়ি তৈরি করছেন। আবার কেউ কেউ সেগুলোতে রং চড়াচ্ছেন। রং আর শখের হাঁড়িগুলো শুকানোর কাজে সুশান্তকে সহযোগিতা করেন পরিবারের অন্য সদস্যরাও।

সুশান্ত কুমারের পুত্রবধূ করুণা রানী পাল বলেন, ‘হাতে সময় নেই। ঢাকার দুই জায়গায় বৈশাখী মেলা উপলক্ষে অর্ডার আছে। তাই সাতসকালে কাজে বসেছি। দুপুর গড়িয়ে গেছে। তাও কাজ শেষ হয়নি। সেখানে সাজসজ্জা ছাড়াও অনেক কাজ রয়েছে। তাই বাড়ির সবাই শখের হাঁড়ি তৈরির কাজে লেগে গেছি। সকাল থেকে ১০০ সেট রং-তুলি শেষ করেছি। একেকটা সেটে চারটি করে শখের হাঁড়ি আছে। এর মধ্যে ৪ পিসের শখের হাঁড়ি, ছোট পাতিল, সাজি, পঞ্চ সাজি, মাটির পুতুল, খেলনা। 

তিনি আরও বলেন, এ বছর ২০ টাকা থেকে শুরু করে ১ হাজার টাকা দামের শখের হাঁড়ি রয়েছে। এখানে দামটা বিষয় নয়, শখের হাঁড়ি রাজশাহীর ঐহিত্য। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, রাজশাহীর শখের হাঁড়ি রাজশাহীর মানুষ তেমন চেনেন না। শখের হাঁড়িতে বিভিন্ন প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তোলা হয়। হাঁড়ির শরীরে লাল, নীল, সবুজ, বেগুনি বা খয়েরি রঙে আঁকা থাকে পদ্ম, মাছ, ধানের ছড়া, লক্ষ্মীপ্যাঁচা, সিঁদুরের কৌটা ইত্যাদি।

শখের হাঁড়ির কারিগর সুশান্ত কুমার পাল বলেন, ‘৩৭ বছর ধরে ঢাকার বিসিকে মেলা করছি। এবার আমাকে মেলার জন্য বলেনি। প্রতিযোগিতার জন্য ২৭ মার্চ শখের হাঁড়ি জমা দিয়েছিলাম। তবে মেলায় অংশগ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষ আমাকে কিছু বলেনি। বিসিক কর্তৃপক্ষ আমার সঙ্গে যোগাযোগও করেনি। সোনারগাঁও মেলায় যাওয়া-আসা আছে। সেখানে আমার দোকান আছে। বৈশাখে আমি ছয়টি মেলা করি। কিন্তু এবার মাত্র একটি মেলা করতে হবে।’

এ বিষয়ে সুশান্ত কুমার পাল বলেন, ‘শুধু শখের হাঁড়ির কারণে আমার এত পরিচিতি। আমি দক্ষতা পুরস্কার পেয়েছি ১৮টি, শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পেয়েছি ৪টি। এ ছাড়া গত বছর লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন থেকে আজীবন সম্মাননা পেয়েছি।’ 

পাহাড়ে লেগেছে উৎসবের রং

প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৪৫ পিএম
আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৫৯ পিএম
পাহাড়ে লেগেছে উৎসবের রং
বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, বিহু ও পাতাবাহা উৎসব ঘিরে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা মিলিত হয়েছেন। ছবি: খবরের কাগজ

পুরোনো বছর বিদায় ও নতুন বছরকে বরণ করতে পাহাড়ে এখন বর্ণাঢ্য আয়োজন। উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে প্রতিটি পাড়া-মহল্লা। বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, বিহু ও পাতাবাহা উৎসব ঘিরে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা মিলিত হচ্ছে মিলনের মোহনায়। প্রাণের উৎসবকে ঘিরে প্রফুল্ল হয়ে উঠেছে সব বয়সী পাহড়িয়াদের মন ও মনন।

আগামী ১২ এপ্রিল থেকে শুরু হবে পাহাড়িদের প্রধান এই সামাজিক উৎসব। এ উৎসব ঘিরে সব সম্প্রদায়ের কৃষ্টি, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটছে। তাই এই উৎসবকে প্রাণের উৎসব হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। 

এ উৎসবকে ঘিরে মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) সকালে খাগড়াছড়িতে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা করেছে সর্বজনীন বৈসাবি উৎযাপন কমিটি। এ উৎসব চলবে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত।

শোভাযাত্রা ও মেলা উৎযাপন কমিটির সভাপতি রবি শংকর তালুকদার বলেন, ‘পাহাড়ে বসবাসরত বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, কৃষ্টি ধরে রাখতে প্রতিবছর বৈসাবিতে নানা অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়। এই ধারাবাহিতা অব্যাহত রাখা জরুরি।’

সম্প্রদায়ভেদে উৎসবকে চাকমারা বিজু, মারমারা সাংগ্রাই, ত্রিপুরারা বলে বৈসু বা বৈসুক, তঞ্চঙ্গ্যারা বিষু, অহমিয়ারা বিহু এবং চাক, ম্রো, বম, খুমিরা চাংক্রান নামে পালন করেন। সমতলের লোকজনের কাছে এই উৎসব বৈসাবি নামে পরিচিত। বৈসুর বৈ, সাংগ্রাইয়ের সা ও বিজুর বি থেকে বৈসাবি শব্দের উৎপত্তি।

তবে ‘বৈসাবি’ শব্দে অন্য সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর উৎসবের কথা উঠে আসে না। ফলে পাহাড়ি সামাজিক সংগঠনগুলো সব জনগোষ্ঠীর নামে মেলা কিংবা উৎসব আয়োজন করে যাচ্ছে। 

মেলা ও শোভাযাত্রা উৎযাপন কমিটির সমন্বয়ক ভোলাস ত্রিপুরা বলেন, ‘আমরা বৈসাবি শব্দটি এখন আর ব্যবহার করি না। কারণ, সেখানে শুধু পাহাড়ের তিন সম্প্রদায়ের উৎসবের কথা উঠে আসে। যেহেতু এটি সার্বজনীন উৎসব সে কারণে পার্বত্যাঞ্চলের সব সম্প্রদায়ের কথা বিবেচনায় রাখা সমীচীন।’

রাজু/পপি/

বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফের ৫৪তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৪৫ এএম
বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফের ৫৪তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

বীরশ্রেষ্ঠ শহিদ ল্যান্স নায়েক মুন্সি আব্দুর রউফের ৫৪তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। মহান মুক্তিযুদ্ধের এই দিনে রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার বাকছড়িতে সম্মুখযুদ্ধে শহিদ হন তিনি।

মুন্সি আব্দুর রউফের জন্ম ১৯৪৩ সালের ৮ মে ফরিদপুরের বোয়ালমারী থানার সালামতপুর গ্রামে। ১৯৬৩ সালের ৮ মে ২০ বছর বয়সে তিনি যোগ দেন ইপিআরে। প্রশিক্ষণ শেষে নিয়োগ পান পূর্ব পাকিস্তানের সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বে। মহান মুক্তিযুদ্ধ যখন শুরু হয় তখন তিনি কর্মরত ছিলেন ইপিআরের ১১ নম্বর উইং চট্টগ্রামে। যুদ্ধের প্রথমভাগেই চট্টগ্রাম ইপিআরের বাঙালি সদস্যরা রুখে দাঁড়ান, তারা বিদ্রোহ ঘোষণা করেন পাকিস্তানি আর্মির বিরুদ্ধে। ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামানের নেতৃত্বে অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগ দেন আব্দুর রউফ। তিনি এ রেজিমেন্টের প্রথম এলএমজি চালক।

সহযোদ্ধাদের পিছু হটার সুযোগ করে দিয়ে নিজে বাঙ্কারে দাঁড়িয়ে অনবরত গুলি করতে থাকেন আব্দুর রউফ। পাক বাহিনীর সাতটি স্পিডবোট তিনি একাই ডুবিয়ে দেন। দুটি লঞ্চ নিয়ে পিছু হটতে বাধ্য হয় পাক সেনারা। পরে পাকিস্তানি বাহিনী লঞ্চ থেকে মর্টারের গোলাবর্ষণ শুরু করে। হঠাৎ একটি মর্টারের গোলা তার বাঙ্কারে এসে পড়ে। শহিদ হন আব্দুর রউফ। সেদিন তার বিচক্ষণতায় ১৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা প্রাণে বেঁচে যান।