ঢাকা ৩ বৈশাখ ১৪৩২, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫
English

অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের ৮৮তম জন্মদিন আজ

প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৪২ এএম
অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের ৮৮তম জন্মদিন আজ
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান

বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের ৮৮তম জন্মদিন আজ মঙ্গলবার। ১৯৩৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বসিরহাটে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। 

ভাষা আন্দোলন, রবীন্দ্র উচ্ছেদবিরোধী আন্দোলন, রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী আন্দোলন এবং ঐতিহাসিক অসহযোগ আন্দোলনে তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের অংশ ছিলেন তিনি।

অধ্যাপক আনিসুজ্জামান দীর্ঘদিন চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পোস্ট ডক্টরাল ডিগ্রিধারী এই শিক্ষাবিদ গবেষণা করেছেন বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস নিয়েও। গবেষণা গ্রন্থ রচনার পাশাপাশি অনুবাদ ও সম্পাদনার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন তিনি। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে কাজের জন্য ১৯৭০ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ও ১৯৮৫ সালে একুশে পদক পেয়েছেন তিনি।

শিক্ষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে ভারত সরকার তাদের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মভূষণ পদক প্রদান করে। সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০১৫ সালে তাকে বাংলাদেশ সরকার সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করে। ২০১৮ সালের ১৯ জুন তাকে জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

বৈশাখে চিরচেনা ‘শখের হাঁড়ি’

প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩৮ এএম
আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ১২:১৩ পিএম
বৈশাখে চিরচেনা ‘শখের হাঁড়ি’
শখের হাঁড়িতে আলপনার সাহায্যে রং করছেন সুশান্ত কুমার পালের সহধর্মিণী মমতা রানী পাল। শনিবার (১২ এপ্রিল) রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটা পৌরসভার বসন্তপুর গ্রামে। ছবি: খবরের কাগজ

চিত্রিত মৃৎপাত্র অর্থাৎ রং দিয়ে নকশা আঁকা একধরনের পাত্র হচ্ছে শখের হাঁড়ি। আকার-আকৃতির দিক থেকে সাধারণ হাঁড়ির মতোই, পার্থক্য শুধু গায়ে। সাধারণ হাঁড়িতে খুব একটা রং ও নকশা করা থাকে না, কিন্তু শখের হাঁড়ির গায়ে উজ্জ্বল রং দিয়ে দৃষ্টিনন্দন চিত্র আঁকা হয়। দৃশ্যমান করা হয় ফুল, লতা-পাতা, পাখি, মাছসহ নানা কিছু।

মাটির তৈরি বিভিন্ন আকারের হাঁড়িতে শৈল্পিক এমন কারুকার্য দেখে মন ছুঁয়ে যাবে যে কারও। প্রতিবছর বৈশাখে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়াগায় বিপুল চাহিদা থাকে এই শখের হাঁড়ির। আসন্ন বৈশাখী মেলাকে ঘিরে রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটা পৌরসভার বসন্তপুর গ্রামে শখের হাঁড়িসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরির কারুশিল্পীদের ব্যস্ততা বেড়েছে। দিন-রাত সমানতালে কাজ করছেন তারা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পবার বসন্তপুরের পালপাড়ায় প্রতিটি পরিবার মাটির তৈরি নানান জিনিসপত্র তৈরি করছেন। এসব জিনিসপত্র বিক্রি করে তারা জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। তাদের তৈরি করা পণ্যের বেশির ভাগই গৃহস্থালি ও সাংসারিক সাজসজ্জার পণ্য। তবে ব্যতিক্রম কিছু পণ্য তৈরি করে পালপাড়ার কয়েকটি পরিবার। তারা মূলত দেশের বিভিন্ন মেলাকে টার্গেট করে মাটি দিয়ে হাঁড়ি, পুতুল, মুখোশ, ঘোড়া, কচ্ছপ, ছোট-বড় পুতুল, মাছ, সিংহ, হাতি, কবুতর, পেঁচা, বাঘ তৈরি করে। এ পণ্যগুলো বিভিন্ন মেলায় বিক্রি করেন তারা। ফলে আসন্ন বৈশাখী মেলাকে ঘিরে কারুশিল্পীদের ব্যস্ততা বেড়েছে।

কারিগররা জানান, বৈশাখ এলেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গার মানুষ। এতে কাজের চাপ বাড়ে। তবে বৈশাখ শেষ হলে আর কোনো বিশেষ চাহিদা থাকে না। শখের হাঁড়ির কারিগর মৃত্যুঞ্জয় কুমার পাল জানান, বৈশাখী মেলার আয়োজন নিয়ে তাদের ব্যস্ত থাকতে হয়। সারা দেশ থেকে ক্রেতারা আসেন শখের হাঁড়ি কিনতে। ৪ পিসের শখের হাঁড়ি, ছোট পাতিল, সাজি, পঞ্চ সাজি, মাটির পুতুল, খেলনা এসব কিনে নিয়ে যান ক্রেতারা।

ওই গ্রামের আনন্দ কুমার পাল বলেন, ‘অনেক আগে থেকেই দেখে আসছি শখের হাঁড়ি। আগে অনেক পরিবারই এ কাজ করত। এখন কারিগরের সংখ্যা কমছে। শৌখিন মানুষের কাছে শখের হাঁড়ির চাহিদা আছে। তবে আগের মতো নেই। তবে শুধু শখের হাঁড়িকে কেন্দ্র করে শখের হাঁড়ির কারিগর সুশান্ত কুমার পাল জায়গা করে নিয়েছেন চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বইয়ে। সেখানে তার ছবিসহ গল্প রয়েছে। আর রাষ্ট্রীয় পদক ছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন পুরস্কার। ঘুরে বেরিয়েছেন জাপান, শ্রীলঙ্কা ও নেপালে। 

সরেজমিনে সুশান্ত কুমার পালের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বৈশাখী মেলাকে কেন্দ্র করে শখের হাঁড়ি তৈরিতে সবাই ব্যস্ত। কেউ মাটি তৈরি করছেন, কেউবা শখের হাঁড়ি তৈরি করছেন। আবার কেউ কেউ সেগুলোতে রং চড়াচ্ছেন। রং আর শখের হাঁড়িগুলো শুকানোর কাজে সুশান্তকে সহযোগিতা করেন পরিবারের অন্য সদস্যরাও।

সুশান্ত কুমারের পুত্রবধূ করুণা রানী পাল বলেন, ‘হাতে সময় নেই। ঢাকার দুই জায়গায় বৈশাখী মেলা উপলক্ষে অর্ডার আছে। তাই সাতসকালে কাজে বসেছি। দুপুর গড়িয়ে গেছে। তাও কাজ শেষ হয়নি। সেখানে সাজসজ্জা ছাড়াও অনেক কাজ রয়েছে। তাই বাড়ির সবাই শখের হাঁড়ি তৈরির কাজে লেগে গেছি। সকাল থেকে ১০০ সেট রং-তুলি শেষ করেছি। একেকটা সেটে চারটি করে শখের হাঁড়ি আছে। এর মধ্যে ৪ পিসের শখের হাঁড়ি, ছোট পাতিল, সাজি, পঞ্চ সাজি, মাটির পুতুল, খেলনা। 

তিনি আরও বলেন, এ বছর ২০ টাকা থেকে শুরু করে ১ হাজার টাকা দামের শখের হাঁড়ি রয়েছে। এখানে দামটা বিষয় নয়, শখের হাঁড়ি রাজশাহীর ঐহিত্য। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, রাজশাহীর শখের হাঁড়ি রাজশাহীর মানুষ তেমন চেনেন না। শখের হাঁড়িতে বিভিন্ন প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তোলা হয়। হাঁড়ির শরীরে লাল, নীল, সবুজ, বেগুনি বা খয়েরি রঙে আঁকা থাকে পদ্ম, মাছ, ধানের ছড়া, লক্ষ্মীপ্যাঁচা, সিঁদুরের কৌটা ইত্যাদি।

শখের হাঁড়ির কারিগর সুশান্ত কুমার পাল বলেন, ‘৩৭ বছর ধরে ঢাকার বিসিকে মেলা করছি। এবার আমাকে মেলার জন্য বলেনি। প্রতিযোগিতার জন্য ২৭ মার্চ শখের হাঁড়ি জমা দিয়েছিলাম। তবে মেলায় অংশগ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষ আমাকে কিছু বলেনি। বিসিক কর্তৃপক্ষ আমার সঙ্গে যোগাযোগও করেনি। সোনারগাঁও মেলায় যাওয়া-আসা আছে। সেখানে আমার দোকান আছে। বৈশাখে আমি ছয়টি মেলা করি। কিন্তু এবার মাত্র একটি মেলা করতে হবে।’

এ বিষয়ে সুশান্ত কুমার পাল বলেন, ‘শুধু শখের হাঁড়ির কারণে আমার এত পরিচিতি। আমি দক্ষতা পুরস্কার পেয়েছি ১৮টি, শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পেয়েছি ৪টি। এ ছাড়া গত বছর লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন থেকে আজীবন সম্মাননা পেয়েছি।’ 

পাহাড়ে লেগেছে উৎসবের রং

প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৪৫ পিএম
আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৫৯ পিএম
পাহাড়ে লেগেছে উৎসবের রং
বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, বিহু ও পাতাবাহা উৎসব ঘিরে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা মিলিত হয়েছেন। ছবি: খবরের কাগজ

পুরোনো বছর বিদায় ও নতুন বছরকে বরণ করতে পাহাড়ে এখন বর্ণাঢ্য আয়োজন। উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে প্রতিটি পাড়া-মহল্লা। বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, বিহু ও পাতাবাহা উৎসব ঘিরে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা মিলিত হচ্ছে মিলনের মোহনায়। প্রাণের উৎসবকে ঘিরে প্রফুল্ল হয়ে উঠেছে সব বয়সী পাহড়িয়াদের মন ও মনন।

আগামী ১২ এপ্রিল থেকে শুরু হবে পাহাড়িদের প্রধান এই সামাজিক উৎসব। এ উৎসব ঘিরে সব সম্প্রদায়ের কৃষ্টি, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটছে। তাই এই উৎসবকে প্রাণের উৎসব হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। 

এ উৎসবকে ঘিরে মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) সকালে খাগড়াছড়িতে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা করেছে সর্বজনীন বৈসাবি উৎযাপন কমিটি। এ উৎসব চলবে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত।

শোভাযাত্রা ও মেলা উৎযাপন কমিটির সভাপতি রবি শংকর তালুকদার বলেন, ‘পাহাড়ে বসবাসরত বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, কৃষ্টি ধরে রাখতে প্রতিবছর বৈসাবিতে নানা অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়। এই ধারাবাহিতা অব্যাহত রাখা জরুরি।’

সম্প্রদায়ভেদে উৎসবকে চাকমারা বিজু, মারমারা সাংগ্রাই, ত্রিপুরারা বলে বৈসু বা বৈসুক, তঞ্চঙ্গ্যারা বিষু, অহমিয়ারা বিহু এবং চাক, ম্রো, বম, খুমিরা চাংক্রান নামে পালন করেন। সমতলের লোকজনের কাছে এই উৎসব বৈসাবি নামে পরিচিত। বৈসুর বৈ, সাংগ্রাইয়ের সা ও বিজুর বি থেকে বৈসাবি শব্দের উৎপত্তি।

তবে ‘বৈসাবি’ শব্দে অন্য সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর উৎসবের কথা উঠে আসে না। ফলে পাহাড়ি সামাজিক সংগঠনগুলো সব জনগোষ্ঠীর নামে মেলা কিংবা উৎসব আয়োজন করে যাচ্ছে। 

মেলা ও শোভাযাত্রা উৎযাপন কমিটির সমন্বয়ক ভোলাস ত্রিপুরা বলেন, ‘আমরা বৈসাবি শব্দটি এখন আর ব্যবহার করি না। কারণ, সেখানে শুধু পাহাড়ের তিন সম্প্রদায়ের উৎসবের কথা উঠে আসে। যেহেতু এটি সার্বজনীন উৎসব সে কারণে পার্বত্যাঞ্চলের সব সম্প্রদায়ের কথা বিবেচনায় রাখা সমীচীন।’

রাজু/পপি/

বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফের ৫৪তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৪৫ এএম
বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফের ৫৪তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

বীরশ্রেষ্ঠ শহিদ ল্যান্স নায়েক মুন্সি আব্দুর রউফের ৫৪তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। মহান মুক্তিযুদ্ধের এই দিনে রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার বাকছড়িতে সম্মুখযুদ্ধে শহিদ হন তিনি।

মুন্সি আব্দুর রউফের জন্ম ১৯৪৩ সালের ৮ মে ফরিদপুরের বোয়ালমারী থানার সালামতপুর গ্রামে। ১৯৬৩ সালের ৮ মে ২০ বছর বয়সে তিনি যোগ দেন ইপিআরে। প্রশিক্ষণ শেষে নিয়োগ পান পূর্ব পাকিস্তানের সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বে। মহান মুক্তিযুদ্ধ যখন শুরু হয় তখন তিনি কর্মরত ছিলেন ইপিআরের ১১ নম্বর উইং চট্টগ্রামে। যুদ্ধের প্রথমভাগেই চট্টগ্রাম ইপিআরের বাঙালি সদস্যরা রুখে দাঁড়ান, তারা বিদ্রোহ ঘোষণা করেন পাকিস্তানি আর্মির বিরুদ্ধে। ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামানের নেতৃত্বে অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগ দেন আব্দুর রউফ। তিনি এ রেজিমেন্টের প্রথম এলএমজি চালক।

সহযোদ্ধাদের পিছু হটার সুযোগ করে দিয়ে নিজে বাঙ্কারে দাঁড়িয়ে অনবরত গুলি করতে থাকেন আব্দুর রউফ। পাক বাহিনীর সাতটি স্পিডবোট তিনি একাই ডুবিয়ে দেন। দুটি লঞ্চ নিয়ে পিছু হটতে বাধ্য হয় পাক সেনারা। পরে পাকিস্তানি বাহিনী লঞ্চ থেকে মর্টারের গোলাবর্ষণ শুরু করে। হঠাৎ একটি মর্টারের গোলা তার বাঙ্কারে এসে পড়ে। শহিদ হন আব্দুর রউফ। সেদিন তার বিচক্ষণতায় ১৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা প্রাণে বেঁচে যান।

টাঙ্গাইলে ঈদে ঐতিহ্যবাহী ঘোড়দৌড় ও গ্রামীণ প্রতিযোগিতা

প্রকাশ: ০১ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৫৫ এএম
আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২৫, ১১:১০ এএম
টাঙ্গাইলে ঈদে ঐতিহ্যবাহী ঘোড়দৌড় ও গ্রামীণ প্রতিযোগিতা
ছবি : খবরের কাগজ

টাঙ্গাইলে ঈদ আনন্দকে আর একটু বাড়িয়ে তুলতে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। একইসঙ্গে হাড়ি ভাঙা, বালিশ খেলা, সাইকেল প্রতিযোগিতা দেখতে আসেনয় হাজারো মানুষ।

সোমবার (৩১ মার্চ) বিকেলে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার দ্যাইনা ইউনিয়নের চিলাবাড়ি স্কুলের মাঠে এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল।

প্রধান আলোচক ছিলেন, সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রৌফ।

সানজিদা করিম কুরআন ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন- সদর উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি হাদিউজ্জামান সোহেল, সহসভাপতি, মামুন সরকার, জেলা তাঁতীদলের সাবেক আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব, জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক রাকিব হোসেন, সদর উপজেলা ছাত্রদলের সদস্যসচিব আব্দুর রাজ্জাক।

৮৩ বছর ধরে ঈদুল ফিতরের প্রথম দিনে দ্যাইনা ঘোড়দৌড় কমিটি এই ঐতিহ্যবাহী ঘোড়দৌড় ও গ্রামীণ বিভিন্ন খেলার প্রতিযোগিতা এবং মেলার আয়োজন করে আসছে। প্রতিযোগিতার মূল আকর্ষণ ঘোড়দৌড়। ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা দেখতে  দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন নানা বয়সী মানুষ। কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে উঠে স্কুল মাঠ। 

ঘৌড়া দৌড় ছাড়াও হাড়ি ভাঙা, মেয়েদের বালিশ খেলা এবং ছেলেদের সাইকেল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।

এ প্রতিযোগিতা উপলক্ষে মেলাও বসে। বিনোদনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিতে নাগরদোলা ও চরকিও ছিল।

৬৫ বছরের বৃদ্ধ আজিজুল ইসলাম বলেন, ছোটবেলা থেকেই ঘোড়ার দৌড়সহ বিভিন্ন খেলা দেখে আসছি। মুরব্বিসহ সব বয়সের মানুষ তা উপভোগ করেছি।

সানজিদা করিম কুরআন ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা রেজাউল করিম বলেন, ৮৩তম বারের মতো এমন আয়োজন করা হয়েছে। আমাদের পূর্বপুরুষরা এমন আয়োজন করতেন। এর ধারাবাহিতায় আমরাও করে আসছি। এই ধারা অব্যাহত থাকবে।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল বলেন, ঈদের আনন্দে এই আয়োজন প্রসংসনীয়। আশা করছি এমন আয়োজন অব্যাহত থাকবে।

জুয়েল রানা/অমিয়/

ঐতিহ্যের সাক্ষী গোয়ালবাথান মসজিদ

প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৫, ০৮:৩৮ এএম
আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৫, ০৮:৪৬ এএম
ঐতিহ্যের সাক্ষী গোয়ালবাথান মসজিদ
নড়াইল সদর উপজেলার ৫০০ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী গোয়ালবাথান মসজিদ। ছবি: খবরের কাগজ

নড়াইলের গোয়ালবাথান গ্রামের ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি সবাই দেখেছে, তবে কেউ সঠিকভাবে বলতে পারেনি এটির বয়স কত! কেউ বলছে ৪০০ বছর, কেউ বলছে সাড়ে ৪০০ বছর আবার অনেকের মতে প্রায় ৫০০ বছর। স্থানীয়রা বলছেন এটিই বৃহত্তর যশোরের সবচেয়ে পুরোনো মসজিদ।

জানা গেছে, নড়াইল সদর উপজেলার চণ্ডিবরপুর ইউনিয়নের একটি গ্রামের নাম গোয়ালবাথান। জেলা সদর থেকে সাত কিলোমিটার দূরে গ্রামটির অবস্থান। এখান থেকে এক কিলোমিটার সোজা গিয়ে ধুড়িয়া গ্রামে যাওয়ার পথে রাস্তার বামপাশে নীল রঙের ছোট একটি মসজিদ চোখে পড়ে। এটিই গোয়ালবাথান মসজিদ।

মসজিদটি বৃহত্তর যশোরের সবচেয়ে পুরোনো মসজিদ। ৫ একর ৭০ শতক জায়গার ওপর নির্মিত মসজিদটি দৈর্ঘ্যে ৫০ ফুট এবং প্রস্থে ৩৫ ফুট। ছোট ছোট ইট আর চুন-সুরকির গাঁথুনিতে এক গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ। ওপরে চারটি ছোট মিনার রয়েছে। আছে বজ্রপাত নিরোধক লোহার দণ্ড। তবে নেই কোনো পিলার। কোনো রডের ব্যবহার ছাড়াই মসজিদের গম্বুজটি অপূর্ব স্থাপত্য নির্মাণশৈলী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে।

স্থানীয়রা জানান, প্রায় ৫০০ বছর আগে এই গ্রামে এসে বসবাস শুরু করেন মুন্সী হবৎউল্লাহ নামে এক ব্যক্তি। এর কিছুদিন পর তিনি ওই জায়গায় এ মসজিদটি নির্মাণ এবং এর সংলগ্ন একটি পুকুর খনন করেন। সেই থেকে এ গ্রামে আস্তে আস্তে জনবসতি শুরু হয় এবং আশপাশের মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষরা মসজিদটিতে নিয়মিত নামাজ আদায় শুরু করেন। 

এলাকাবাসী জানান, এখানে কোনো বসতি ছিল না। গাছপালায় ভরা ছিল এলাকাটি। মুন্সী হবৎউল্লাহই এ গ্রামের প্রথম বাসিন্দা। তিনি এখানে আসার পর এ মসজিদটি স্থাপন করেন এবং একটি পুকুর খনন করেন। মসজিদটি তৈরির সঠিক সময় বলতে পারেন না তারা। তবে ধারণা করা হয়, প্রায় সাড়ে ৪০০ বছর থেকে ৫০০ বছরের আগের হবে। 

ঢাকা থেকে মসজিদ দেখতে আসা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি গোয়ালবাথান মসজিদে এসে নামাজ পড়েছি। ৫০০ বছরের পুরোনো মসজিদটি দেখে খুব ভালো লাগছে। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের উদ্যোগে মসজিদটির সংরক্ষণ করা হলে আরও ভালো হতো।’
স্থানীয় মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে আমার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। যখনই এখানে আসি এ মসজিদে নামাজ আদায় করি। প্রায় ৫০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী মসজিদে নামাজ পড়তে পেরে আমি আনন্দিত।’

মসজিদের নিয়মিত মুসল্লি মো. সুলতান কাজী বলেন, ‘আমরা নিয়মিত এখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করি। মসজিদটি চুন-সুরকি দিয়ে তৈরি। এ কারণে শীতের সময় এর ভেতরে গরম অনুভূত হয় আর গরমের সময় শীত অনুভূত হয়।’ 
মুন্সী হবৎউল্লাহের বংশধর মুন্সী তফসির উদ্দিন বলেন, ‘মসজিদটির যেমন উন্নয়ন হওয়ার কথা ছিল, সেটা হয়নি। আমরা জেলা পরিষদসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে অর্থ এনে এটি সংস্কার করেছি। এখানে ভালো শৌচাগার কিংবা পানির ব্যবস্থা নেই। এসব সমস্যা সমাধানে জোর দাবি জানাচ্ছি।’ 

গোয়ালবাথান জামে মসজিদের ইমাম মুন্সী রহমতউল্লাহ বলেন, আমার পূর্বপুরুষের গড়া এই মসজিদ। এখানে একসময় শুক্রবারে বিরাট আয়োজনে জুমার নামাজ আদায় হতো। দূর-দূরান্ত থেকে দুই থেকে তিন দিন আগেই মানুষ হেঁটে নামাজ আদায় করতে আসতেন। এ উপলক্ষে খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন হতো। এখানে ইমামতি করতে পেরে আমার খুব ভালো লাগছে।’

গোয়ালবাথান জামে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক এইচ এম তৈয়েবুর রহমার বলেন, ‘এটি ঐতিহ্যবাহী মসজিদ। তবে এখানে তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। দেশের পুরোনো স্থাপনাগুলো প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে সংরক্ষণ করা হয়। কিন্তু মসজিদটি নিয়ে তাদের কোনো কার্যক্রম আমরা দেখছি না। অবিলম্বে এটি সংরক্ষণ করার দাবি জানাই।’