
ইতিহাসের এক নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার গাজনা ইউনিয়নে মুঘল আমলে প্রতিষ্ঠিত মথুরাপুর দেউল।
ষোড়শ শতাব্দীর শেষার্ধে নির্মিত এ দেউলটি শুধু স্থাপত্য নয়, বাংলার ঐতিহ্যবাহী শিল্প ও সংস্কৃতির এক অনন্য নিদর্শন হিসেবেও বিবেচিত। তবে কালের বিবর্তনে অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে স্থাপনাটি।
এটি ফরিদপুর শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ফরিদপুরের ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মধুখালী বাজার থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে মধুখালী-বালিয়াকান্দি আঞ্চলিক সড়কের পাশেই এর অবস্থান। রাস্তার বিপরীতে শান্তভাবে বয়ে চলেছে চন্দনা নদী। নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা এ মনোমুগ্ধকর দেউলটি দেখতে প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন পর্যটক ও ইতিহাসপ্রেমীরা। অথচ, পর্যটকদের জন্য নেই কোনো মৌলিক সুযোগ-সুবিধা। ফলে তাদের মুখোমুখি হতে হয় নানারকম বিড়ম্বনার।
দেশের ইতিহাসে মুঘল সাম্রাজ্যের যেসব স্মৃতি বিদ্যমান, তার মধ্যে এ দেউলটি অন্যতম। সরকারের উদাসীনতার কারণে দেউলটির ইতিহাস ধরে রাখতে নেওয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা। কাগজে-কলমে ইতিহাসে থাকলেও বাস্তবিক অর্থে নেই কোনো সংরক্ষণের ব্যবস্থা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ৪০ শতাংশ জায়গাজুড়ে বিস্তৃত ৮০ ফুট উচ্চতার দেউলটির গায়ে খচিত টেরাকোটার চিত্রকর্ম ও স্থাপত্যশৈলী। প্রাচীন ইট ও চুন-সুরকির মিশ্রণে নির্মিত এ দেউলের দেয়ালে ফুটে উঠেছে হিন্দু পুরাণের রামায়ণ ও কৃষ্ণলীলা, গায়ক, নৃত্যশিল্পী, পবনপুত্র হনুমান ও যুদ্ধদৃশ্যের নিপুণ চিত্র। প্রতিটি কোনের মাঝে স্থাপন করা হয়েছে কৃত্রিম মুখাবয়ব, যা সেই যুগের শিল্পভাবনার পরিচায়ক।
দেউলটির একমাত্র প্রবেশপথটি দক্ষিণমুখী এবং এটি বারো কোনাবিশিষ্ট, যা বাংলার স্থাপত্যধারায় বিরল। রেখা প্রকৃতির এ দেউল বাংলায় নির্মিত একমাত্র এরকম কাঠামো বলেই প্রত্নতত্ত্ববিদদের কাছে এটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
দেউলটি নিয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যে রয়েছে ভিন্নমত। সূত্রমতে, সংগ্রাম সিং নামে এক সেনাপতি এটি নির্মাণ করেন। ১৬৩৬ সালে ভূষণার জমিদার সত্রাজিতের মৃত্যুর পর সংগ্রাম সিংকে এ অঞ্চলের রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠার পর তিনি মথুরাপুরে বসবাস শুরু করেন এবং এক স্থানীয় বৈদ্য পরিবারের মেয়েকে বিয়ে করেন। ধারণা করা হচ্ছে, তারই উদ্যোগে এ দেউলটি নির্মিত হয়।