কসোভোতে ‘নওরোজ’ উপলক্ষে বক্তাশি মুসলিমদের একটি সম্মেলন। ছবি:সংগৃহীত
বিশ্বের ২০০ কোটিরও বেশি মুসলিমের মাঝে ‘বক্তাশি’ নামে একটি ক্ষুদ্র সুফি সম্প্রদায় সম্প্রতি আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন এক্সামিনার দাবি করছে, একটি ব্যতিক্রমধর্মী মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা নিয়ে এই সম্প্রদায় সন্তোপনে সংগঠিত হয়ে উঠছে।
বৃহস্পতিবার ( ১৭ এপ্রিল ) একটি প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন এক্সামিনার দাবি করে, আলবেনিয়ার রাজধানী তিরানায় বক্তাশিদের আধ্যাত্মিক সদর দপ্তরকে কেন্দ্র করে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। রাষ্ট্রটি বিশ্বের ক্ষুদ্রতম ও প্রথম ইসলামি ভ্যাটিকান হিসেবে পরিচিতি পেতে পারে।
একটি নতুন রাষ্ট্র গঠনের প্রথম চ্যালেঞ্জ হলো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করা। সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর একটি প্রয়াস হিসেবে ২০২৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে আলবেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী এদি রামা বক্তাশিদের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা ঘোষণা করেন।

তিনি বলেন, ‘বক্তাশিদের বৈশ্বিক কেন্দ্রকে তিরানার ভেতরে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রে রূপান্তরের মাধ্যমে আমরা একটি নতুন শান্তির কেন্দ্র তৈরি করতে চাই।’
যদিও সেসময় অনেকেই এই বক্তব্যটিকে রামার আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি উন্নয়নের কৌশল হিসেবে দেখেন।
প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে ধোঁয়াশা থাকলেও বর্তমানে বক্তাশিদের প্রকৃত সংখ্যা ৭০ লাখ থেকে ২ কোটি পর্যন্ত হতে পারে বলে ধারনা করা হয়। আলবেনিয়ায় বক্তাশিরা সংখ্যালঘু হলেও তারা ধর্মীয় সহনশীলতার প্রতীক হিসেবে সমাদৃত।
বক্তাশিদের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত উদার। এমনকি বক্তাশিরা অন্যান্য অনেক ধর্মের মতো মদ্যপানকে নিষিদ্ধ করে না। তবে তারা সহিংসতার বিরোধী এবং রাজনীতি থেকে দূরেন অবস্থান নিয়ে অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মনোভাব দেখায়।
বক্তাশি মূলত একটি সুফি মতবাদের উপর প্রতিষ্ঠিত তরিকা। এই সুফি মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা ত্রয়োদশ শতকের সুফি সাধক হাছি বক্তাশ বেলি। বক্তাশিদের ধর্মীয় বিশ্বাস শিয়া ইসলামের ছায়ায় গড়ে উঠলেও এতে খ্রিষ্টধর্ম ও প্রাচীন আনাতোলীয় উপাদানেরও প্রভাব রয়েছে। বক্তাশিবাদের মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ধর্মীয় সহনশীলতা, মানবতাবাদ এবং ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা বা শরিয়াহর প্রতি শৈথিল্য।
একসময় ওসমানীয় সাম্রাজ্যের অভিজাত বাহিনী জানিসারি বাহিনীর ধর্ম হিসেবে বক্তাশিবাদ প্রতিষ্ঠা পায়। বহু আলবেনীয় তখন বক্তাশিতে ধর্মান্তরিত হন। তবে ১৮২৬ সালে জানিসারি বাহিনী ভেঙে দিলে দ্বিতীয় সুলতান মাহমুদ বক্তাশিদের উপর দমন-পীড়ন চালান। পরবর্তী সময়ে ১৯২৫ সালে কামাল আতাতুর্কের ধর্মনিরপেক্ষ নীতির আওতায় বক্তাশিবাদ তুরস্কে নিষিদ্ধ হলে তাদের সদর দপ্তর আলবেনিয়ায় স্থানান্তরিত হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আলবেনিয়ার কমিউনিস্ট শাসনামলে দেশটিতে সকল ধর্ম নিষিদ্ধ হলে বক্তাশিরা পরিচয় লুকিয়ে গোপনে টিকে থাকে। এরপর নব্বইয়-এর দশকে সমাজতন্ত্রের পতনের পর বক্তাশিবাদ নতুন করে জনসমক্ষে আবির্ভূত হয়। সূত্র: ওয়াশিংটন এক্সামিনার
দিনা