জার্মানির কোলন শহরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার ১০ থেকে ২০ টন ওজনের তিনটি অবিস্ফোরিত বোমা নিষ্ক্রিয় করতে শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে প্রায় ২০ হাজার ৫০০ বাসিন্দাকে সরিয়ে নেওয়া হয়।
শহরের কর্মকর্তারা জানান, প্রথমত, তাদের বোমাগুলো নিষ্ক্রিয় করার পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে আরেকটি বিকল্প হতে পারে নিরাপদে বিস্ফোরণ ঘটানো।
তবে সেটি অনেক বড় একটি অভিযান হবে। বিস্ফোরণের ক্ষয়ক্ষতি সীমিত করার জন্য এই এলাকায় বালি এবং পানি আনতে হবে। কর্তৃপক্ষ এটিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় অভিযান বলে উল্লেখ করেছে।
কর্তৃপক্ষ আশা করছে, সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী হলে, বোমা নিষ্ক্রিয়করণ বিশেষজ্ঞরা সময়মতো বোমা নিষ্ক্রিয় করতে সক্ষম হবেন যাতে বুধবার রাতের মধ্যে মানুষ তাদের ঘরে ফিরে যেতে পারে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কোলন হচ্ছে প্রথম জার্মান শহর যেটি রয়্যাল এয়ার ফোর্সের ১,০০০ বোমারু বিমানের আক্রমণের সম্মুখীন হয়েছিল। ১৯৪২ সালের ৩০শে মে এক রাতে শহরটিতে প্রায় ১,৪০০ টন বোমা ফেলা হয়েছিল। তবে আজ যে বোমাগুলো নিষ্ক্রিয় করা হচ্ছে সেগুলো কোন অঞ্চলের তা স্পষ্ট নয়।
সোমবার (০২ জুন) ডয়ৎস এলাকার একটি জাহাজ নির্মাণকেন্দ্রে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এই বোমাগুলো শনাক্ত করা হয়। বোমাগুলোর এখনও বিপজ্জনক হতে পারে বলে জানায় জার্মানির বোমা নিষ্ক্রিয়কারী সংস্থা।
বুধবার (০৪ জুন) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানায় মার্কিন সংবাদ সংস্থা দ্য বস্টন গ্লোব।
বুধবার (০৪ জুন) নিষ্ক্রিয়করণ কাজ শুরুর আগে ১ হাজার মিটার ব্যাসার্ধের একটি এলাকা পুরোপুরি সিল করে দেওয়া হয়। ওই এলাকার আবাসিক ভবন থেকে শুরু করে দোকান, হোটেল, সরকারি ভবন, নয়টি স্কুল এবং ৫৮টি হোটেলসহ একটি বড় হাসপাতাল এবং মেসে/ডয়ৎস ট্রেন স্টেশন খালি করে ফেলা হয়।
কর্তৃপক্ষ জানায়, যদি কেউ নিজ থেকে না বের হয়, তাহলে তাকে পুলিশ জোরপূর্বক সরিয়ে নেবে। প্রয়োজনে মোটা অঙ্কের জরিমানাও করা হবে।
সকালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে লোকজনকে সতর্ক করে দেওয়া হয়। এসময় শহরের ব্যস্ত রাস্তাগুলো ফাঁকা হয়ে যায়। ফিলহারমোনি কনসার্ট হল ও বিভিন্ন জাদুঘরসহ সব সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দিনের বেলায় কার্যক্রম বন্ধ রাখে। এডুয়ারডাস হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে থাকা রোগীদের অ্যাম্বুলেন্সে করে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়।
এদিকে যেসব মানুষ এ সময়ে থাকার জায়গা পাচ্ছেন না তাদের জন্য দুটি জরুরি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের বলা হয়েছে, শান্ত থাকুন, আইডি কার্ড, প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং পোষা প্রাণী সঙ্গে নিয়ে বের হন।
যদিও কোলন বন বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলবে, তবে ট্রেন ও সড়ক যোগাযোগে বিপর্যয়ের কারণে সেখানে পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
তবে এই অভিযানের কারণে অনেক মানুষের ব্যক্তিগত পরিকল্পনাও ভেস্তে গেছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, শহরের ঐতিহাসিক টাউন হল ভবনে বুধবার ১৫টি বিয়ের অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল। সেগুলো শহরের অন্য একটি জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সূত্র: দ্য বস্টন গ্লোব
সুলতানা দিনা/