১৫ শতকের বিখ্যাত অভিযাত্রী ক্রিস্টোফার কলম্বাস স্পেনীয় ও ইহুদি ছিলেন কি না তা নিয়ে বিতর্ক চলছে বহুকাল ধরে। তবে সম্প্রতি স্পেনের জাতীয় টেলিভিশনে প্রচারিত ‘কলম্বাস ডিএনএ: হিজ ট্রু অরিজিনস’ নামের এক ডকুমেন্টারিতে তার উৎপত্তি বা জাতীয়তা নিয়ে নতুন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। যা এরইমধ্যে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
এ ডকুমেন্টারিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ডিএনএ গবেষণায় মাধ্যমে জানা গেছে, কলম্বাস সেফার্দিক ইহুদি ছিলেন। তার জন্ম বর্তমান স্পেনের অন্তর্ভুক্ত আইবেরিয়ান উপদ্বীপে। ঐতিহ্যগতভাবে তাকে ইতালির জেনোয়ার অধিবাসী মনে করা হলেও এই গবেষণা তার জন্ম বা জাতীয়তা নিয়ে নতুনভাবে আলোচনার দিগন্ত খুলেছে।
গ্রানাডা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিশেষজ্ঞ দল এই গবেষণা পরিচালনা করেছেন।
কলম্বাসের ইতিহাস নিয়ে দীর্ঘদিনের যে বিতর্ক রয়েছে তা সমাধানের চেষ্টা করাই ছিল এ গবেষণার লক্ষ্য। যদিও গবেষণার পূর্ণ বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া এখনও প্রকাশিত হয়নি।
জার্মানির লাইপজিগে অবস্থিত ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর ইভল্যুশনারি অ্যানথ্রোপলজির গবেষক রদরিগ্রো বারকেরা।
তিনি কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, এই ধরনের গবেষণায় ডিএনএ নমুনা বিশ্লেষণ করে প্রাচীন মানুষের উৎপত্তি এবং জাতীয়তা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। তবে ডিএনএ থেকে ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক পরিচয় নির্ণয় করা সম্ভব নয়।
ডকুমেন্টারি অনুযায়ী, কলম্বাস পশ্চিম ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের বাসিন্দা ছিলেন। সেখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে তার জেনেটিক মিল খুঁজে পাওয়া গেছে।
তার জন্মস্থান সম্পর্কে প্রচলিত যে ধারণা ছিল সেটাকে এ গবেষণায় বাতিল করা হয়েছে।
এদিকে কয়েক দশক ধরে কলম্বাসকে নিয়ে গবেষণা করা এক স্থপতি ফ্রান্সেস অ্যালবার্ডেনার আল-জাজিরাকে বলেন, ‘কলম্বাসের বাবা জেনোয়া প্রজাতন্ত্রের এবং তার মা ছিলেন ভ্যালেন্টিয়ার এক ইহুদি নারী। সময়ের প্রেক্ষাপটে ইহুদিদের প্রতি বিরূপ মনোভাবের কারণে কলম্বাস তার পরিচয় গোপন করেছিলেন বলে ধারণা করা হয়।’
১৪৯২ সালে আমেরিকা মহাদেশের আবিষ্কারক ক্রিস্টোফার কলম্বাসের আদি উৎস নিয়ে বিতর্ক চলছে বহুকাল ধরে।
ফ্রান্সেস অ্যালবার্ডেনারের মতে, কলম্বাস সম্ভবত ইহুদিদের প্রতি নিপীড়নের কারণে বাবার পরিচয়ে নিজেকে তুলে ধরতেন।
তার মতে, আরাগনের ফার্দিনান্দের তৈরি নথিতে কলম্বাসের আদি স্থান নির্দিষ্ট করে উল্লেখ না থাকায় ‘জেনোয়া তত্ত্বের’ সমর্থকরা সমস্যায় পড়েন। অথচ কাস্তিলের শাসনে বিদেশিদের আদি স্থান সাধারণত উল্লেখ করা হতো। যেমন ইতালির অভিযাত্রী ক্যাবোটোকে ‘ভেনিসের’ বলে নিবন্ধিত করা হয়েছিল।
কলম্বাস সম্পর্কে এমন ধারণা প্রচলিত আছে তিনি ইহুদি হিসেবে ফার্দিনান্দের শাসনআমলে জন্মেছিলেন। একজন বিদেশি হিসেবে তাকে রাজ্যের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া ছিল বিরল ঘটনা।
অ্যালবার্ডেনারের মতে, গবেষণার মাধ্যমে কলম্বাসের প্রাথমিক জীবনের রহস্য উন্মোচন করা গেলে ইতিহাসবিদদের বিভ্রান্তী দূর হবে।
উদাহরণস্বরূপ ১৫০১ সালে কলম্বাস দাবি করেন- তিনি ১৪৭০ সালের আগেই বহু স্থান ভ্রমণ করেছিলেন। যা অনেক ইতিহাসবিদ অসম্ভব বলে মনে করেন।
ডিএনএ গবেষণার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য উদাহরণ
কলম্বাস সম্পর্কে গবেষণা ছাড়াও বিজ্ঞানীরা ডিএনএর সাহায্যে বিভিন্ন ঐতিহাসিক চরিত্রের অজানা তথ্য বের করছেন।
১৯৮৯ সালে স্পেনের ভ্যালেন্সিয়া প্রদেশের কোভা নেগ্রা প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান খনন করে টিনা নামের এক ছয় বছর বয়সী শিশুর জীবাশ্ম উদ্ধার করা হয়েছিল। এ বছরের শুরুতে এ জীবাশ্ম পরীক্ষা করা হয়।
পরীক্ষা থেকে জানা যায়, টিনা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত থাকা সত্ত্বেও ছয় বছর জীবিত ছিল।
আরেকটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হলো- বিখ্যাত জার্মান সুরকার লুডভিগ ভান বিথোভেনের ডিএনএ গবেষণা।
এ গবেষণায় দেখা যায়, বিথোভেন হেপাটাইটিস বি রোগে আক্রান্ত ছিলেন। এই গবেষণার মাধ্যমে ঐতিহাসিক তথ্যের সত্যতা পাওয়া গেছে।
এই ডিএনএ গবেষণাগুলো আধুনিক বিজ্ঞানকে ইতিহাসের অনেক পুরনো প্রশ্নের উত্তর দিতে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে এবং ভবিষ্যতে আরও বিস্ময়কর তথ্য উন্মোচিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সূত্র: আল জাজিরা
তাওফিক/পপি/