
একের পর এক ভুল করে চলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তার প্রতিটি ভুলে নড়ে উঠছে ডেমোক্র্যাট শিবিরের ভিত। অনেক ডেমোক্র্যাট সদস্যই এখন যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাইডেনকে দাঁড়াতে দিতে রাজি নন।
পত্রপত্রিকাতেও এ নিয়ে লেখালেখি হচ্ছে প্রচুর। তবে পুরো বিষয়টি নিয়ে নজিরবিহীনভাবে নীরব রয়েছেন তার প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার এই আচরণ ‘বৈশিষ্ট্যবহির্ভূত’ বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞ ও পর্যবেক্ষকরা।
তবে অবশেষে গত বৃহস্পতিবার নিজ নীরবতার খোলস ভেঙেছেন ট্রাম্প। বাইডেন ওইদিন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় কমলা হ্যারিসের নাম নিতে গিয়ে বলে বসেন ‘ভাইস প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প’। পরে ওই মুহূর্তটির ভিডিও শেয়ার দিয়ে ট্রাম্প নিজ সামাজিক যোগাযোগামাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘ভালোই করেছো জো!’
ট্রাম্পের কাছ থেকে আসলে এ ধরনের আচরণই প্রত্যাশা করেন ভোটাররা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প যে দুই সপ্তাহ ৮১ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি এবং শৃঙ্খলার এক প্রতিচ্ছবি দেখিয়েছেন, তা আদতে তার কৌশল। ২০১৬ ও ২০২০ সালের প্রচার কৌশল থেকে সরে দাঁড়ানোর চেষ্টা।
রিপাবলিকান স্ট্র্যাটেজিস্ট এবং সিনেট ও হাউসের নেতৃস্থানীয়দের সাবেক সহায়তাকারী রন বনজিন বলেন, ‘ডেমোক্র্যাটদের সংকটের বিষয়ে তিনি কিছু না বলে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সামাল দিয়েছেন গোটা বিষয়টি। যখন তারা নিজেদের কবর খোঁড়ায় ব্যস্ত, তখন কেন আপনি কোদাল সরিয়ে নেবেন?’
ট্রাম্প অবশ্য একেবারে নিজেকে মাঠ থেকে সরিয়ে নেননি। বিতর্কের পর একাধিক রেডিও সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তিনি। ভার্জিনিয়া ও ফ্লোরিডায় রাজনৈতিক সমাবেশেও উপস্থিত হয়েছেন, ট্রুথ সোশ্যালেও ছিল তার সরব উপস্থিতি।
একেবারেই যে বাইডেনকে নিয়ে ট্রাম্প চুপ ছিলেন, তা-ও না। মায়ামিতে গত মঙ্গলবার এক সমাবেশে রিপাবলিকান এই নেতা বলেন, ‘কট্টর বাম ডেমোক্র্যাটিক পার্টি এখন বিশৃঙ্খলায় বিভক্ত। তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না কে বেশি অযোগ্য প্রেসিডেন্ট হবে – ঘুমন্ত ও কূটকৌশলী জো বাইডেন, না কি হাস্যকর কমলা।’ এ ছাড়া বাইডেনকে গলফ খেলার আমন্ত্রণও জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের অতীত ব্যবহারের সঙ্গে তুলনা করলে তার সাম্প্রতিক আচরণ যথেষ্ট সংযত। অনেকে তো বলছেন, ট্রাম্প প্রচার শিবির থেকে ভাইস প্রেসিডেন্টের জন্য কাকে পছন্দ, সে ঘোষণা আরও পরে আসতে পারে। কারণ তারা বাইডেনের এসব আলোচনা বন্ধ হয়ে যাক তা চায় না।
মিট রমনির প্রেসিডেনশিয়াল প্রচারে কাজ করে আসা রিপাবলিকান যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ কেভিন ম্যাডেন বলেন, আপনি যদি এই কৌশল ও প্রয়োগকে ২০১৬ ও ২০২০ সালের সঙ্গে মেলান, তা হলে দেখবেন এটি অনেক বেশি কৌশলী, অনেক বেশি শৃঙ্খলাবদ্ধ।
অন্যদিকে ২০১৬ সালে ট্রাম্প প্রচার শিবিরে ব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্বপালনকারী কোরে লেওয়ানডাওনস্কি বলছেন, ট্রাম্প বিতর্কের পর থেকে যে পন্থা অবলম্বন করছেন তা কার্যকরী ভূমিকা রাখছে।
বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, সাম্প্রতিক মতামত জরিপে ট্রাম্পকে বাইডেনের চেয়ে কিছুটা এগিয়ে থাকতে দেখা গেছে। তবে ট্রাম্প শিবিরে উদ্বেগ রয়েছে, বাইডেন যোগ্য-অযোগ্য সংক্রান্ত আলোচনা বেশি আগে শুরু হয়ে গেছে। তাকে আরও অল্পবয়সী প্রার্থী দিয়ে বদলে দেওয়া হতে পারে। এতে করে ট্রাম্পের হাতে থাকা বড় দুটি অস্ত্র– বয়স ও দুর্বলতা আর থাকবে না।
এ ছাড়াও নতুন প্রার্থীকে আগের প্রেসিডেন্টের অর্থনীতি ও সীমান্তসংক্রান্ত নীতিগত ভুলের জন্য দোষারোপ করাটাও কঠিন হয়ে যাবে।
এ প্রসঙ্গে স্ট্র্যাটেজিস্ট রন বনজিন বলেছেন, ‘তারা নীরবভাবে আশা করছে, বাইডেন যাতে প্রার্থী থাকেন। তারা মনে করছে, বাইডেন প্রতিদ্বন্দ্বী হলে নির্বাচনে জিতে যাবেন।’ আর এ কারণেই হয়তো ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা বাইডেনের পক্ষে কথা বলছেন। যেমন- বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে গোলমাল করার পরও বাইডেনের প্রশংসা করতে দেখা গেছে ট্রাম্পের ছেলে ডন জুনিয়রকে।
গত সপ্তাহে ট্রাম্পের পুত্রবধূ ও রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটির সহ-সভাপতি লারা ট্রাম্পও বলেছেন, বাইডেনকে সরিয়ে দেওয়া হবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে যাওয়া।
এদিকে, বাইডেন তো সরতেই রাজি হচ্ছেন না। গত শুক্রবার ডেট্রয়টে অনুষ্ঠিত এক জনসভায় তিনি ট্রাম্পকে হুমকি হিসেবে অভিহিত করে বলেন, ‘আমি কোথাও যাচ্ছি না।’ সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স