রাশিয়ার ভূখণ্ডের বেশ বড় একটা অংশ এখন ইউক্রেনের সেনাদের দখলে। কয়েক ডজন গ্রামের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে দেশটি। মূলত কিয়েভের আচমকা হামলার মুখেই ওই ঘটনা ঘটেছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানিয়েছেন, এ ঘটনার জবাব দেওয়া হবে। তিনি বলেছেন, ‘বের করে দেওয়া হবে শত্রুকে।’
ইউক্রেনের অভিযানের পরিসর গত সোমবার স্পষ্ট হতে শুরু করে। রুশ প্রেসিডেন্ট সীমান্ত এলাকার স্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে ঘটনার প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারেন। ওই বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন রাশিয়ার শীর্ষ সুরক্ষা কর্মকর্তা, সরকারি কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধিরা।
কারস্ক অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান অ্যালেক্সেই স্মিরনভ পুতিনকে বলেছেন, তার অঞ্চলে ২৮টি অবকাঠামো এখন ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে। তিনি আরও জানান, ইউক্রেনীয় সেনারা সীমান্তের প্রায় ১২ কিলোমিটার ভেতরে প্রবেশ করে। আর দখলে যাওয়া এলাকার ব্যাপ্তি প্রস্থে হবে ৪০ কিলোমিটার। তবে ইউক্রেনের সামরিক প্রধান ওলেক্সান্ডার সিরস্কি গত সোমবার বলেন, প্রায় ১ হাজার বর্গ কিলোমিটার হাতছাড়া হয়ে গেছে রাশিয়ার।
অন্যদিকে পুতিন বলেছেন, এলাকা দখলে নেওয়ার মধ্য দিয়ে মূলত ইউক্রেন আলোচনায় নিজেদের দরকষাকষির অবস্থান উন্নত করবে। তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু নির্বিচারে বেসামরিকদের ওপর, বেসামরিক অবকাঠামোর ওপর, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে হামলা চালায় এমন মানুষদের সঙ্গে আমরা কী ধরনের আলোচনা করতে পারি।’
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এক প্রতিবেদনে জানায়, ইউক্রেন অনুপ্রবেশ করতে গিয়ে বেসামরিকদের ওপর হামলা চালিয়েছে এমনটাই দাবি করছেন পুতিন। তবে রাশিয়ার পক্ষ থেকেও বিভিন্ন সময়ে ইউক্রেনের বেসামরিকদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত, জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ একাধিকবার রাশিয়ার এভাবে হামলা চালানোর বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তবে রাশিয়া কখনই হামলার দায় স্বীকার করেনি।
সিএনএন পুতিনের দাবির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি। পুতিন তার সুরক্ষা প্রধানদের ইউক্রেনের বাহিনীকে বের করে দেওয়ার কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মূল কাজ হলো- সীমান্ত রক্ষীদের সঙ্গে কাজ করে আমাদের ভূখণ্ড থেকে অনুপ্রবেশকারীদের জোর করে বের করে দেওয়া, সীমান্তে নির্ভরযোগ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা।’
ইউক্রেনীয় বাহিনীর অগ্রসর হওয়ার কারণে সীমান্ত এলাকার অনেকেই সরে গেছে। স্মিরনভ বলেছেন, ১ লাখ ৮০ হাজার মানুষকে সরতে বলা হয়েছে। ১ লাখ ২১ হাজার মানুষ এরই মধ্যে এলাকা ত্যাগ করেছে।
দক্ষিণ রাশিয়ার বেলগোরোদ অঞ্চলের গভর্নর ভিয়াচেস্লাভ গ্ল্যাদকভ বলেছেন, ক্রাসনোইয়ারুঝস্কি জেলার মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
গভর্নর তার টেলিগ্রাম চ্যানেলে এক পোস্টে বলেন, ‘আমরা বিরক্তিকর একটি সকাল দেখছি- ক্রাসনোইয়ারুঝস্কি সীমান্ততে শত্রুপক্ষের কার্যক্রম দেখলাম। আমি নিশ্চিত যে আমাদের সামরিক বাহিনী এই হুমকির সঙ্গে মোকাবিলায় সবকিছু করবে। জীবন ও স্বাস্থ্যের সুরক্ষায় আমরা ক্রাসনোইয়ারুঝস্কি জেলায় বসবাসরত মানুষকে অন্য নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া শুরু করেছি।’
এ ছাড়া জেলা প্রশাসনের আন্দ্রেই মিসকভ বলেন, প্রায় ১১ হাজার মানুষকে ক্রাসনোইয়ারুঝস্কি জেলা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সূত্র: সিএনএন