স্নায়ুযুদ্ধের পর বর্তমান বিশ্বব্যবস্থা সবচেয়ে বড় হুমকির মুখে রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) প্রধান বিল বার্নস ও যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থা এমআই-৬ এর প্রধান স্যার রিচার্ড মুর।
সিআইএ প্রধান এবং এমআই৬ প্রধান সম্প্রতি দ্য ফিন্যান্সিয়াল টাইমসে প্রকাশিত এক নিবন্ধে লিখেছেন, তারা ইউক্রেনের যুদ্ধের পূর্বাভাস দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সতর্ক করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এর অংশ হিসেবে তারা কিছু গোপনীয় তথ্য প্রকাশ করেছিল যা কিয়েভকে যুদ্ধে সাহায্য করেছে।
তারা আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ইউরোপে রাশিয়ার বেপরোয়া ও নাশকতামূলক কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ, গাজা যুদ্ধ বন্ধে তৎপরতা এবং পুনরুত্থিত ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের উপ-সম্পাদকীয়তে তারা লিখেছেন, ‘এটা নিশ্চিত যে আমাদের আন্তর্জাতিক বিশ্বব্যবস্থা এবং ভারসাম্য ব্যবস্থা যেটি শান্তি ও স্থিতিশীলতার বজায়, আমাদের জীবনযাত্রার মান, সুযোগ এবং সমৃদ্ধি বৃদ্ধি করেছে- স্নায়ুযুদ্ধের পর থেকে এখন হুমকির মুখে রয়েছে।’ তারা আরও বলেন, এই ঝুঁকির বিরুদ্ধে সফলভাবে লড়াই করা যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সম্পর্কের ভিত্তি। দুটি দেশই ইউক্রেন যুদ্ধের মতো নজিরবিহীন হুমকিগুলোর মোকাবিলা একসঙ্গে করছে, যেটি ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া আগ্রাসন চালানোর পর থেকে তিন বছর যাবৎ চলমান।
শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) লন্ডনের কেনউড হাউসে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস আয়োজিত এক উৎসবে প্রথমবারের মতো জনসমক্ষে বক্তব্য রাখেন দুই দেশের গোয়েন্দা প্রধান।
সিআইএ প্রধান বার্নস উপস্থিতদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘ইউক্রেনের সম্প্রতি রাশিয়ার ভূখণ্ড পুনরুদ্ধার একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত বিজয়’, তবে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের ক্ষমতা খর্ব হওয়ার কোনো লক্ষণ তিনি দেখেননি। ইউক্রেন পশ্চিমকে আরও অস্ত্র সরবরাহের আহ্বান জানিয়েছে এবং রাশিয়ার অভ্যন্তরে তাদেরকে পশ্চিমা অস্ত্র ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার অনুরোধ করেছে।
রাশিয়ার পারমাণবিক হুমকিতে পশ্চিমের ভীত হওয়া উচিত নয়
রাশিয়ার পারমাণবিক হুমকিকে পশ্চিমাদের ভয় পাওয়া উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সিআইএ প্রধান বিল বার্নস। রাশিয়ার অভ্যন্তরে ইউক্রেনকে পশ্চিমাদের তৈরি স্টর্ম-শ্যাডো ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হবে কি না এ নিয়ে বিতর্কের মধ্যে এই মন্তব্য করলেন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাপ্রধান। তবে রাশিয়ার হুমকিকে একেবারে আক্ষরিক অর্থে নেওয়া উচিত নয় বলেও সতর্ক করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘পুতিন একজন গুন্ডা, তিনি সময়ের পর সময় ধরে সামরিক আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে আগ্রাসন চালিয়ে আমাদের ভয় পাইয়ে দেওয়ার সামর্থ্য তার নেই।.....যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে ব্যাপক সহায়তা দিয়েছে। এবং আমি নিশ্চিত আমাদের প্রেসিডেন্ট (বাইডেন) অন্যান্য বিষয়গুলোও (অস্ত্র ব্যবহারে শর্ত তুলে নেওয়া) বিবেচনা করবেন যাতে আমরা তাদের সহযোগিতা করতে পারি।’
যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দাপ্রধান গাজায় যথাসম্ভব দ্রুত যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে বলেন, ‘উভয় পক্ষের নেতারা স্বীকার করুন আর না করুন ইতোধ্যে যা হয়েছে তা যথেষ্টরও বেশি, এখনই সময় কঠিন কিছু শর্ত মেনে নিয়ে হলেও চুক্তিটি (যুদ্ধবিরতি) সম্পন্ন করার।’ সূত্র: বিবিসি ও রয়টার্স