ঢাকা ১০ আষাঢ় ১৪৩২, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫
English

বিদ্যুতের পাওনা টাকা চেয়ে ড. ইউনূসকে আদানির চিঠি

প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:১৫ পিএম
বিদ্যুতের পাওনা টাকা চেয়ে ড. ইউনূসকে আদানির চিঠি
বিদ্যুতের পাওনা টাকা চেয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি দিয়েছেন আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানি

বিদ্যুত্‍ বাবদ বকেয়া টাকা চেয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি দিয়েছেন আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানি। দ্রুত ৮০ কোটি ডলার পরিশোধের জন্য চিঠিতে সরকারপ্রধানের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন ভারতীয় ওই ব্যবসায়ী। 

গতকাল সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) দ্য ইকোনমিক টাইমস এই চিঠির বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ সরবরাহ বাবদ আদানি গ্রুপ বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কাছে এই বিশাল অঙ্কের টাকা পায়। চিঠিতে আদানি লিখেছেন, ‘ঋণদাতারা এখন আমাদের প্রতি কঠোর হয়েছে। কারণ আমরা বাংলাদেশের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতি বজায় রেখেছি। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কাছে থেকে আমরা যে ৮০ কোটি ডলার পাই, সেই অর্থ দ্রুত পরিশোধ করার জন্য হস্তক্ষেপ নিতে আপনাকে অনুরোধ করছি। আপনার দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ও অবকাঠামো উন্নয়নে আমাদের প্রতিশ্রুতি পুনরায় ব্যক্ত করছি।’

আদানি বিদ্যুৎ বিক্রি বাবদ পাওনা অর্থ নিয়মের ভিত্তিতে পরিশোধ করারও অনুরোধ জানান। এ বিষয়ে জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান জানিয়েছেন, আদানি বাংলাদেশের কাছে যে ৮০ কোটি ডলার পান, তার মধ্যে ৪৯ কোটি ২০ লাখ ডলার পরিশোধ বিলম্বিত হয়েছে। 

উল্লেখ্য, বিদ্য়ুত্‍ সরবরাহের জন্য় বাংলাদেশের সঙ্গে আদানি গ্রুপের ২৫ বছরের চুক্তি রয়েছে।

বাংলাদেশে ৮ থেকে ৯ মাস ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাবদ আদানির ৮০ কোটি ডলার পাওনা। ঝাড়খণ্ডের গড্ডায় অবস্থিত ১৬০০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে আদানি গোষ্ঠী বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে। একটি নির্দিষ্ট সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে গত জুন থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে। আধুনিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও প্রয়োজনীয় সঞ্চালনব্যবস্থা তৈরি করতে আদানি পাওয়ার ২০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। আদানি তার কোম্পানির ভোজ্যতেল ও উন্নত মানের চালও বাংলাদেশে পাঠান।

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির খবরে তেলের বাজারে বড় পরিবর্তন

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৫, ০২:৫২ পিএম
ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির খবরে তেলের বাজারে বড় পরিবর্তন
ছবি: সংগৃহীত

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি খবরের পর মঙ্গলবার (২৪ জুন) ইউরোপে তেলের দাম কমেছে। ফলে সম্ভাব্য সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ কমেছে। 

মার্কিন ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) অপরিশোধিত তেলের দাম গত সপ্তাহে ৩.৭ শতাংশ কমে ব্যারেল প্রতি ৬৫.৯ ডলারে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া  বিশ্বব্যাপী বেঞ্চমার্ক  অপরিশোধিত তেলের দাম ৩.৮ শতাংশ কমে ব্যারেল প্রতি ৬৮.৮ ডলারে দাঁড়িয়েছে।

মঙ্গলবার (২৪ জুন) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্টে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে  সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেন। পরে তিনি জানান, দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি এখন কার্যকর। ইরানি ও ইসরায়েলি গণমাধ্যমও যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে। 

সোমবার (২৩ জুন) কাতারের দোহাতে মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর তেলের দাম ৭% শতাংশের বেশি কমেছে। মার্কিন অপরিশোধিত তেলের দাম ৭.২ শতাংশ  কমে ব্যারেল প্রতি ৬৮.৫১ ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা এপ্রিলের শুরুর পর থেকে একদিনের সবচেয়ে বড় পতন এবং গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ দরপতন।

রয়টার্সের মতে, ২০২২ সালের আগস্টের পর থেকে এটি সবচেয়ে বড় দরপতন।

সুলতানা দিনা/

ইরানের সরকার পরিবর্তন নিয়ে আবার ট্রাম্পের পোস্ট

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৫, ০১:৪০ পিএম
ইরানের সরকার পরিবর্তন নিয়ে আবার ট্রাম্পের পোস্ট
ডোনাল্ড ট্রাম্প

ইরানের তিন পরমাণু স্থাপনায় গত রবিবার ভোরে বিমান হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। হামলার পর বিজয়ী বক্তব্যে কিছু না বললেও ওইদিন সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল পোস্টে ইরানের ‘সরকার পরিবর্তনের সম্ভাবনা’ নিয়ে ফের আলাপ তুলেছেন। 

ওই পোস্টে তিনি বলেন, ‘‘রাজনৈতিকভাবে ‘রেজিম চেঞ্জ’ এই পরিভাষা ব্যবহার করা ঠিক হয় না, কিন্তু ইরানিদের এখনকার শাসনব্যবস্থা যদি মেইক ইরান গ্রেট অ্যাগেইন না করতে পারে, তাহলে সেখানে রেজিম চেঞ্জ কেনইবা হবে না।’’

তার পোস্টের শেষে ইংরেজি বড় অক্ষরে লেখা এমআইজিএকে ‘মেইক ইরান গ্রেট অ্যাগেইন’ এর সংক্ষিপ্ত রূপ ধরা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে তিনি ও তার সমর্থকরা প্রায়ই তাদের স্লোগান ‘মেইক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’-কে সংক্ষিপ্ত করে এমএজিএ বা মাগা বলে থাকেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ট্রাম্প এমন এক সময়ে ইরানে শাসনব্যবস্থা বদলানোর প্রসঙ্গ তুললেন, যখন ইরানে হামলা নিয়ে তার ‘মাগা’ সমর্থকরা দ্বিধাবিভক্ত; তার প্রশাসনের বেশির ভাগ কর্মকর্তাও ইরানে শাসনব্যবস্থা বদলানোর লক্ষ্য ওয়াশিংটনের নেই বলে বারবার আশ্বস্ত করে যাচ্ছেন।

গত রবিবার ভোরে যুক্তরাষ্ট্রের পাঠানো ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের ‘বাংকার-বাস্টার’ বোমা ইরানের ফোর্দো পারমাণবিক স্থাপনার ওপরে থাকা পাহাড়ে আছড়ে পড়েছে। 

কেবল ফোর্দো নয়, যুক্তরাষ্ট্র কাছাকাছি সময়ে ইরানের নাতাঞ্জ ও ইস্ফাহান পারমাণবিক স্থাপনায়ও আঘাত হেনেছে।

হামলার পর ট্রাম্প একে ‘চমকপ্রদ সামরিক সাফল্য’ অ্যাখ্যা দিয়ে ইরানের মূল পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ স্থাপনা ‘পুরোপুরি ও সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে’ বলে জোর গলায় বলেছিলেন।

কিন্তু তার প্রশাসনের কর্মকর্তারা এতটা নিশ্চিতভাবে বলতে পারছেন না। উপগ্রহের ছবিতে মাটির অনেক গভীরে থাকা ফোর্দো স্থাপনাটির ওপরে থাকা পাহাড়ের গায়ে গর্ত দেখা গেলেও ভেতরে আদৌ কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান।

গত ১৩ জুন ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় আচমকা আঘাত হানা ইসরায়েলের কর্মকর্তারা গত কয়েকদিন ধরে প্রায়ই বলেছেন, তাদের লক্ষ্য হচ্ছে ১৯৭৯ সাল থেকে ইরানে শাসন করে আসা কট্টরপন্থি শিয়া মুসলিম মোল্লাতন্ত্রকে উচ্ছেদ করা।
গত রবিবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সাংবাদিকদের বলেছেন, তারা ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক হুমকি নির্মূল করার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন, তা অর্জনের কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন।

ইরাকে ২০০৩ সালে মার্কিন আগ্রাসনের পর রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের জনপ্রিয়তা কমতে দেখা মার্কিন প্রশাসনের বর্তমান কর্মকর্তাদের অনেকেই জোর গলায় বলছেন, তারা ইরানের সরকার ফেলে দিতে কাজ করছেন না।

মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বলেছেন, ‘রেজিম চেঞ্জের জন্য এই অভিযান হয়নি, হচ্ছে না।’ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির কারণে আমাদের জাতীয় স্বার্থের জন্য যে হুমকি সৃষ্টি হয়েছিল তা দূর করার লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছিলেন।’ 

তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই পোস্ট পিট হেগসেথের দাবিকে প্রতিষ্ঠা করে না।

এদিকে, হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ট্রাম্প খুব সাধারণ অর্থে কথাটি বলেছেন। ট্রাম্পের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলাইন লেভিট প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ সংক্রান্ত পূর্ববর্তী এক মন্তব্যের সূত্র ধরেই কথাটি বলেছেন। ট্রাম্প বলতে চেয়েছেন, যদি ইরানের বর্তমান সরকার কূটনীতির পথে না আসে, তবে দেশটির জনগণ কেন সরকারের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠবে না। সূত্র: বিবিসি। 

নেতানিয়াহু যেভাবে ট্রাম্পকে যুদ্ধে জড়ালেন

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৫, ০১:২০ পিএম
নেতানিয়াহু যেভাবে ট্রাম্পকে যুদ্ধে জড়ালেন

দুঃসাহস, নির্মমতা ও ভাগ্যের এক মিশ্রণে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইসরায়েল ও এর আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানের মধ্যকার শক্তির ভারসাম্য ওলট-পালট করে দিয়েছেন। তবে তার সবচেয়ে বড় সাফল্য হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর পূর্ণ শক্তি দিয়ে তেহরানে হামলার প্রয়োজনীয়তায় রাজি করানো। 

টাইমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনায় যুক্ত দুই ইসরায়েলি কর্মকর্তার মতে, ট্রাম্পকে নিজেদের পক্ষে আনার নেতানিয়াহুর সাফল্য কৌশলগত কয়েকটি সিদ্ধান্তের ফল। এর শুরু হয় ৪ ফেব্রুয়ারি। যখন দ্বিতীয় দফায় ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর নেতানিয়াহু প্রথমবারের মতো হোয়াইট হাউসে যান। কেবিনেট রুমে দীর্ঘ টেবিল ঘিরে বসে নেতানিয়াহু ট্রাম্পকে মনে করিয়ে দেন, ইরান তার (নেতানিয়াহুর) বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার ষড়যন্ত্র করেছিল। 

এরপর তিনি একটি বিশদ স্লাইড উপস্থাপন করেন, যেখানে দেখানো হয় উচ্চমাত্রার ইউরেনিয়াম মজুত ও সেন্ট্রিফিউজ প্রযুক্তি উন্নয়নের মাধ্যমে ইরান কীভাবে ধীরে ধীরে পারমাণবিক সীমা অতিক্রমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। 

নেতানিয়াহু বলেন, দেখুন ডোনাল্ড, এটা থামাতে হবে। কারণ ওরা খুব দ্রুত এগোচ্ছে। এরপর তিনি নাটকীয় বিরতি নিয়ে ট্রাম্পের চোখের দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘আপনার আমলে পারমাণবিক ইরান হতে দেওয়া যাবে না।’ 

এতে ট্রাম্প কিছুটা প্রভাবিত হন। কিন্তু তখনো তিনি সরাসরি ইসরায়েলি হামলায় সম্মতি দেননি। ট্রাম্প বলেন, তিনি প্রথমে কূটনীতির চেষ্টা করতে চান। তিনি তো নির্বাচিত হয়েছিলেন যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে, নতুন যুদ্ধ শুরুর জন্য নয়। এ জন্য তিনি তার পুরোনো বন্ধু, রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী স্টিভ উইটকফকে তেহরানের সঙ্গে সমঝোতার মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিয়োগ দেন। এ পর্যায়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও নেতানিয়াহু ট্রাম্পকে কিছু সময় দেন সমঝোতার সম্ভাবনা যাচাই করতে। শেষ পর্যন্ত ট্রাম্পের টিম ৬০ দিনের একটি কাঠামো ঠিক করে আলোচনা এগিয়ে নিতে।

ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলেন, এই সময়সীমা পর্যন্ত আলোচনা চালিয়ে যাওয়াই কৌশলগত ছিল, কারণ ইরান যখন সময়সীমা অতিক্রম করে, তখন ট্রাম্প ইসরায়েলের সামরিক পরিকল্পনার প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে ওঠেন। ‘এটা ট্রাম্পকে বুঝিয়ে দিয়েছিল, আমাদের কারও সঙ্গে কথা বলার সুযোগ নেই,’ ওই কর্মকর্তা টাইম ম্যাগাজিনকে বলেন। এটাই ইসরায়েলিদের দাবি। তবে ট্রাম্প এখনো তার অবস্থান পরিবর্তনের পেছনের ব্যাখ্যা পুরোপুরি দেননি। যেখানে তেহরান আক্রমণে সরাসরি অংশগ্রহণকারী হয়ে ওঠেন। 

হোয়াইট হাউস বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে, ট্রাম্প স্বীকার করেন যে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চলাকালে তিনি নেতানিয়াহুকে সামরিক পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকতে বলেছিলেন। কিন্তু সেই সময়ে নেতানিয়াহু পুরোমাত্রার হামলার পরিকল্পনা করছিলেন। তার কিছু সহায়তাও ছিল। ৩১ মে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা জানায়, ইরান তাদের পারমাণবিক কার্যক্রম গোপন করছে, যা ২০১৯ সালের একটি চুক্তির লঙ্ঘন। এরপর ইসরায়েলিরা ট্রাম্পকে এমন গোয়েন্দা তথ্য দেয়, যা তাদের মতে প্রমাণ করে, ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির উপকরণ সংগ্রহ করছে এবং আলোচনার মাধ্যমে সময় নষ্ট করছে। একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘ওরা স্টিভের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ ব্যবহার করে এমন অবস্থানে যেতে চাচ্ছিল, যেখানে তারা বলতে পারবে, ‘আমরা প্রস্তুত, মাত্র এক দিন বাকি।’

ইউএস গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বিশ্বাস করে- জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ড মার্চে কংগ্রেসকে বলেন, তেহরান এখনো পারমাণবিক বোমা তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়নি। কিন্তু ট্রাম্পের ৬০ দিনের সময়সীমা শেষ হওয়ার পর ইসরায়েলি কর্মকর্তারা ট্রাম্পের হতাশাকে কাজে লাগান। তারা বলেন, ইরান কয়েক মাসের মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্র পেতে পারে। তারা আমেরিকানদের জানান, ইসরায়েল ভোরবেলায় ইরানি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাবে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইরান পাল্টা হামলা করে, কেন্দ্রীয় ইসরায়েলে তিনজন বেসামরিক মানুষ নিহত হন। তবে দ্রুতই ইসরায়েল ইরানের আকাশসীমার ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। আইডিএফের মুখপাত্র মাস্কা মিশেলসন বলেন, ‘মাত্র দুই দিনেই আমরা ওদের এক-তৃতীয়াংশ অস্ত্রভান্ডার ধ্বংস করেছি।’ 

ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা আশা করেন, তেহরান আবার আলোচনায় ফিরে আসবে ও স্থায়ীভাবে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করতে রাজি হবে। তবে ট্রাম্পের কিছু মিত্র, যেমন স্টিফেন ব্যানন ও টাকার কার্লসন আশঙ্কা করছেন, ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রকে একটি দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে টেনে নিয়েছে। 

এদিকে ইসরায়েলের চূড়ান্ত লক্ষ্য এখনো স্পষ্ট নয়। নেতানিয়াহু বলেছেন, তার লক্ষ্য সরকার পরিবর্তন নয়, তবে সেটাও হতে পারে। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টারাও জানেন না শেষ পর্যন্ত কী হবে। তবে তারা আরও যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। 

ইসরায়েলের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি চমক দেখিয়েছি। সম্ভবত আরও কিছু চমক আমাদের হাতের মুঠোয় আছে।’

বস্তুত, এটা পরিষ্কার যে ইরানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে নিজের দৃষ্টিভঙ্গিতে ট্রাম্পকে রাজি করাতে সফল হয়েছেন নেতানিয়াহু।

ইরানের ভেতর থেকেই ঘুণ ধরায় ইসরায়েল

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৫, ০১:০৩ পিএম
ইরানের ভেতর থেকেই ঘুণ ধরায় ইসরায়েল
ছবি: সংগৃহীত

গত ১৩ জুন ইরানে হামলা চালায় ইসরায়েল। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ হামলা চালানো হয় ইরানের অভ্যন্তর থেকেই। যার প্রতিবাদে ইরানও পাল্টা হামলা চালায়। এতে শুরু হয়েছে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ। ইরানে ইসরায়েলের হামলা কয়েক বছরের পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়ন। যার শুরুটা হয় ইরানের নিরাপত্তাবাহিনীতে ইসরায়েলিদের অনুপ্রবেশ দিয়ে। এ ছাড়া স্থানীয় এজেন্টের মাধ্যমে ইরানের অভ্যন্তরে অস্ত্র চোরাচালান ও অস্ত্র উৎপাদন ছিল এ পরিকল্পনার অংশ।

এসব তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশের মাধ্যমে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, ইরানের ভেতর থেকেই ঘুণ ধরায় ইসরায়েল, তারপর এক সময় সেটি ভেঙে ফেলার জন্য সক্রিয় হয়।

প্রায় ১ হাজার মাইল দূরে অবস্থিত ইসরায়েল ইরানের ওপর স্থলপথে হামলা চালায়। 

বিভিন্ন সংবাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাবমেরিন বিধ্বংসী ব্যবস্থা, ক্ষেপণাস্ত্রের ভাণ্ডার ছিল তাদের হামলার নিশানা। এ ছাড়া ইরানের কমান্ড সেন্টার, নির্বাচিত ব্যক্তিবিশেষকে লক্ষ্য করে একযোগে হামলা চালানো হয়েছিল। একমাত্র সে দেশের অভ্যন্তরে সক্রিয় গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমেই এ ধরনের সুপরিকল্পিত এবং নিখুঁত হামলা চালানো সম্ভব।

তবে এই পুরো ঘটনায় ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের ভূমিকা কতটা ছিল তা এখনো স্পষ্ট নয়। ধারণা করা হচ্ছে মোসাদ নয়, ইরানে চালানো কর্মকাণ্ডের সঙ্গে অন্য গোয়েন্দা সংস্থা জড়িত।

ইরানের অভ্যন্তরে অস্ত্র চোরাচালান, সমাবেশ ও অস্ত্র উৎপাদন

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসরায়েল শুধু ইরানের সংবেদনশীল তথ্য সংগ্রহ করা নয়, ইরানের মাটিতে আক্রমণাত্মক অস্ত্র তৈরি ও মোতায়েনের জন্য একটা সংগঠিত ব্যবস্থা তৈরি করে ফেলেছিল।

অভিযোগ রয়েছে, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্থানীয় এজেন্টের নেটওয়ার্ক ও নিজেদের পরিবহনব্যবস্থা তৈরি করে তাদের গোপন কর্মকাণ্ড দীর্ঘ দিন ধরে চলেছে। 

আর এই প্রস্তুতির ভিত্তিতেই সাম্প্রতিক হামলার ভিত্তি স্থাপন হয়েছে। সামরিকবিষয়ক পর্যবেক্ষক সংস্থা ‘দ্য ওয়ার জোন’ এবং অন্য সূত্রের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ইসরায়েল অল্প অল্প করে সংবেদনশীল ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র সরঞ্জাম ইরানে চোরাচালান করেছে। আর এ জন্য ব্যবহার করা হয়েছে, ইরাকের মধ্য দিয়ে যাওয়া ট্রাক, বাণিজ্যিক কনটেইনার এবং যাত্রী স্যুটকেস। এসবের মধ্যে বিভিন্ন অংশে লুকিয়ে রেখে সেগুলো ইরানে আনা হয়েছে। 

এই ডিভাইসগুলোর মধ্যে বৈদ্যুতিক ফিউজ, উন্নত ইলেক্ট্রো-অপটিক্যাল ক্যামেরা, লিথিয়াম ব্যাটারি, হালকা ওজনের ইঞ্জিন, জিপিএস-ভিত্তিক গাইডেন্স সিস্টেম এবং সুরক্ষিত যোগাযোগ ডিভাইস অন্তর্ভুক্ত ছিল বলে মনে করা হচ্ছে। এই সব যন্ত্রাংশ পরে ইরানের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা মোসাদের গোপন ঘাঁটিতে নিয়ে গিয়ে একত্রিত করে তাকে আক্রমণাত্মক অস্ত্রের আকার দেওয়া হয়েছে।

ইরানের বার্তা সংস্থাগুলো জানিয়েছে, মোসাদের সদস্যরা গত কয়েক বছর ধরে ইরানের বিভিন্ন অঞ্চলে গোপন ডেরা তৈরি করেছিল। তেহরানের কাছে এমনই এক তিনতলা ভবনের সন্ধান পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ওই ভবন ছিল আত্মঘাতী ড্রোন তৈরি ও সংরক্ষণের জন্য তৈরি করা ঘাঁটি। ওই ভবনের একটি ঘরের টেবিল এবং তাকের ওপরে অন্তত একটি ড্রোন, ড্রোন প্রপেলার, বিভিন্ন যন্ত্রাংশ এবং সেটিকে কন্ট্রোল করার সরঞ্জাম রাখা ছিল। সেখানে একটি থ্রিডি প্রিন্টারও পাওয়া গেছে। এ ধরনের থ্রিডি প্রিন্টার ইউক্রেনে ড্রোনের যন্ত্রাংশ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে। 

ইরানের পুলিশের এক মুখপাত্র জানান, তেহরানের একটা এলাকায় দুটো পৃথক অভিযানে মোসাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুজন ‘এজেন্টকে’ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে ২০০ কেজির বেশি বিস্ফোরক, ২৩টা ড্রোনের যন্ত্রাংশ, লঞ্চার, কন্ট্রোল সিস্টেম এবং একটা নিশান গাড়ি উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া ইস্ফাহানে যেখানে ইরানের সবচেয়ে স্পর্শকাতর পরমাণু স্থাপনা রয়েছে, সেখানে এক কর্মশালায় অভিযান চালিয়ে বিপুল সংখ্যক ড্রোন এবং মাইক্রো-ড্রোন তৈরির সরঞ্জাম এবং যন্ত্রাংশ জব্দ করা হয়। এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে চারজনকে ইতোমধ্যে আটক করা হয়েছে।

আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে নষ্ট করা

ইসরায়েল ইরানের ওপর বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণ শুরুর আগে তাদের (ইরানের) আকাশ প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্ককে নিষ্ক্রিয় করতে সমন্বিত হামলা চালায়। এ হামলায় ছোট আত্মঘাতী ড্রোন, ইরানের মাটিতে মোতায়েন করা গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়। এগুলোর সম্মিলিত ব্যবহারের লক্ষ্য ছিল ইরানের রাডার সিস্টেমকে ব্যর্থ করে দেওয়া এবং ডিফেন্স মিসাইল লঞ্চ প্ল্যাটফর্মকে ধ্বংস করা। হামলা চালানোর জন্য ইসরায়েল যেন একটা নিরাপদ করিডর পেয়ে যায়।

ধারণা করা হচ্ছে, হামলার শুরুতে ছোট এবং হালকা কোয়াডকপ্টারের মতো ড্রোন এবং মাইক্রো-ড্রোনের মাধ্যমে একযোগে সক্রিয় করা হয়েছিল। এসব ড্রোন গত কয়েক মাসে ইরানের বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। ইরানে হামলার প্রথম দিনই একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জানায়, মোসাদ কমান্ডোরা ইরানি ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশ করেছে এবং ইরানি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার চারপাশে নির্ভুল-নির্দেশিত ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেছে। সমন্বিত এসব আক্রমণ কেবল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দেওয়ার জন্যই নয়, বরং ইরানের প্রাথমিক উৎক্ষেপণ ক্ষমতা ধ্বংস করার জন্যও তৈরি করা হয়েছিল। অর্থাৎ ইসরায়েল প্রথমে যুদ্ধবিমান দিয়ে নয়, বরং ইরানের মাটিতে লুকানো ডিভাইস দিয়ে আক্রমণ করেছিল।

স্মার্ট অস্ত্রের ব্যবহার

ইসরায়েল ইরানের মাটিতে হালকা ওজনের, নির্ভুল ও রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে কাজ করে এমন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে। এই ধরনের আধুনিক ও বিশেষ প্রযুক্তিতে তৈরি অস্ত্র কোনো অপারেটরের উপস্থিতি ছাড়াই ইরানের ভেতর থেকে নিক্ষেপ করা যায়। 

ইরানের ইংরেজি নিউজ চ্যানেল প্রেস টিভি জানায়, ইরানের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এমন ধরনের স্পাইক মিসাইল লঞ্চার উদ্ধার করেছে, যেগুলো ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে লক্ষ্যবস্তু হিসাবে নিশানা করার জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছিল। এই সিস্টেমগুলো ইন্টারনেট-অটোমেশন এবং রিমোট কন্ট্রোল দ্বারা সজ্জিত ছিল। আর মোসাদের এজেন্টরা এই সিস্টেমগুলো পরিচালনা করছিল। এই লঞ্চারগুলো ইলেক্ট্রো-অপটিক্যাল গাইডেন্স সিস্টেম, অত্যাধুনিক ক্যামেরা এবং স্যাটেলাইট যোগাযোগ অ্যান্টেনা দিয়ে সজ্জিত। তাই দূর থেকেই কমান্ড (নির্দেশ) নিতে পারে এই ডিভাইস।

স্মার্ট অস্ত্র ব্যবহার করায় ইরান নিরাপত্তায় নিয়োজিত কর্মকর্তা এমনকি জনসাধারণকেও মোবাইল ফোন, স্মার্ট ওয়াচ বা ল্যাপটপের মতো নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত ডিভাইস ব্যবহার না করার বিষয়ে সতর্ক করে দেওয়া হয়। সবাইকে এসব ডিভাইস ব্যবহার কমিয়ে ফেলার কথা বলা হয়। 

টার্গেটেড কিলিং এবং কমান্ড সিস্টেমের ক্ষতি

ইসরায়েল ইরানের সামরিক বাহিনী ও রেভল্যুশনারি গার্ডকে দুর্বল করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ব্যক্তিত্বদের লক্ষ্যবস্তু হিসেবে নিশানা করে। মোসাদ ও তার মিত্ররা গোপন তথ্য ও স্মার্ট অস্ত্রের সাহায্যে ইরানের কমান্ড সিস্টেম ভাঙার চেষ্টা করে। শুরুর দিকে কয়েকটা হামলায় সামরিক ঘাঁটি বা ক্ষেপণাস্ত্র প্ল্যাটফর্মকে নিশানা করা হয়নি বরং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বাড়িতে বা অফিসে হামলা চালানো হয়েছিল। ইরানের মাটি থেকেই স্পাইক মিসাইল লঞ্চার দিয়ে এসব হামলা চালানো হয়েছিল। এই জাতীয় ক্ষেপণাস্ত্র ভবনের ভেতরে থাকা মানুষকেও সরাসরি নিশানা করতে পারে। 

যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের হামলা: ইরানে উসকে উঠছে জাতীয়তাবাদ

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৫, ১২:৪৬ পিএম
যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের হামলা: ইরানে উসকে উঠছে জাতীয়তাবাদ
ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল একযোগে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। বহু মানুষ হতাহত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুলছে ইরান। দেশটির শাসকগোষ্ঠীর বিরোধীরাও এই মুহূর্তে দেশের পক্ষে অবস্থান নিচ্ছে। জাতীয়তাবাদ জেগে উঠছে। 

প্রায় ৪৫ বছর ধরে নিঃশব্দে চলছিল ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সংঘাত। মাঝে মাঝে উত্তেজনা চরমে উঠলেও দুপক্ষ কখনো সরাসরি একে অন্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি। সংঘর্ষ হয়েছে মূলত তৃতীয় দেশের ভেতর, বিশেষ করে ইরাকে। ইরাকের মাটিতে ইরানের সমর্থিত হামলায় ছয়জন মার্কিন সেনা নিহত হন। এই ঘটনা সামনে এনে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, সেটিই ছিল যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা হামলার কারণ। 

তিনি ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার ঘোষণা দিয়ে বলেন, এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এমন এক শাসকের বিরুদ্ধে, যিনি কখনো নিজের হাতে আক্রমণ চালাননি, বরং সব সময় অন্যদের ব্যবহার করে কাজ করিয়ে নিয়েছেন।

ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা ছিলেন দখলদার বাহিনী। সড়কে টহলের সময় তারা চলতেন ভারী বর্মে আচ্ছাদিত হামভিতে। কারণ ইরান-সমর্থিত বিদ্রোহীরা ব্যবহার করত এমন বোমা, যেগুলো তামার গোলক ছুড়ে এই বর্ম ভেদ করতে পারত। এম১ আব্রামস ট্যাংকও এসব থেকে রক্ষা পেত না। যারা বেঁচে যেতেন, তারা অনেক সময় হাত বা পা হারাতেন। 

ইরাক যুদ্ধের মার্কিন সামরিক নথি অনুযায়ী, এই বিস্ফোরকে ব্যবহৃত তামার পাতের একটি চালান আটক করা হয়েছিল। যেগুলো ছিল ইরানের একটি ল্যাবে তৈরি।

ইসরায়েলি কর্মকর্তারা আগেই যুক্তরাষ্ট্রকে এসব অস্ত্র সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন। তারা নিজেরাও লেবাননে হিজবুল্লাহর হামলায় এসব বোমা হামলার শিকার হয়েছিলেন। হিজবুল্লাহ গড়ে তোলে যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ত্র দেয় ইরান। ২০০৩ সালে আমেরিকার ইরাক আগ্রাসনের পর তেহরান এসব প্রযুক্তি হিজবুল্লাহর মাধ্যমে মাঠে নামায়।

ইরান-যুক্তরাষ্ট্র বৈরিতার শুরু ১৯৭৯ সালে। তখন সাধারণ ইরানিরা বিদ্রোহ করেন যুক্তরাষ্ট্রপন্থি শাহের বিরুদ্ধে। এই শাহ ছিলেন সিআইএ ও ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের সহায়তায় ক্ষমতায় আসা একজন রাজা, যিনি হটিয়ে দিয়েছিলেন তেল জাতীয়করণের পক্ষে থাকা এক জনপ্রিয় নির্বাচিত সরকারকে। ওই সরকার এক ব্রিটিশ তেল কোম্পানিকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল।

আজও তেহরানের একটি ভবনের দেয়ালে আঁকা আছে আমেরিকার পতাকা, যেখানে তারার জায়গায় খুলি ও ডোরাকাটা অংশে বোমার চিত্র। বহু বছর পরও দেয়ালচিত্রটি নতুন করে রং করা হয়। ওই স্থানে এখনো স্পষ্ট ‘আমেরিকার মৃত্যু হোক’- এই বিখ্যাত স্লোগান লেখা।

এই ভবনটিই একসময় ছিল যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস, এখন পরিচিত ‘গোয়েন্দাদের গুহা’ নামে। ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের সময় এখানেই হামলা চালায় খোমেনির অনুসারীরা। আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি ছিলেন ওই বিপ্লবের নেতা। তাকেই টাইম ম্যাগাজিন ১৯৭৯ সালের বর্ষসেরা ব্যক্তি হিসেবে ঘোষণা করেছিল। (তাকে যেন মিলিয়ে না ফেলা হয় বর্তমান সর্বোচ্চ নেতা ৮৬ বছর বয়সী আলী খামেনির সঙ্গে। যিনি এখন নাকি নিজের উত্তরসূরি বেছে নিচ্ছেন)।

দূতাবাস ভবনটি এখন একটি জাদুঘর। যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রমণবিষয়ক তথ্য এবং বুকিং ওয়েবসাইট ট্রিপঅ্যাডভাইজার একে কার্যকর জাদুঘর হিসেবে বর্ণনা করেছে। বিপ্লবীরা যখন দেয়াল ডিঙিয়ে ভেতরে ঢুকছিলেন, তখন মার্কিন কূটনীতিকরা গোপন নথি কুচিয়ে ফেলছিলেন। ওই এক-আধ ইঞ্চি টুকরো করা কাগজ এখন টেবিলে সাজানো, অনেক কাগজ জোড়া লাগানো হয়েছে-গোটা দৃশ্যেই ধরা পড়ে বিপ্লবের উত্তেজনা।

৪৪৪ দিন ধরে ৫০ জনের বেশি মার্কিন কূটনীতিক সেখানে বন্দি ছিলেন। ওই অপমানের ইতিহাসে আমেরিকা এখনো ক্ষুব্ধ। এবার তাদের হামলায় ইরানও একই রকম অপমানবোধ করছে।

তবে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বিপজ্জনক জায়গা হলো- যখন যুদ্ধ ইরানের ভেতরে শুরু হয়, তখন তা ২ হাজার ৫০০ বছরের পুরোনো এক জাতিকে জাগিয়ে তোলে। 

ইরানের অনেক নাগরিক শাসকদের ঘৃণা করলেও বিদেশি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এক হয়ে দাঁড়ান। ১৩ জুন ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের ঘাঁটি থেকে তেহরানে ড্রোন ও যুদ্ধবিমান হামলা চালানো হয়। অনেকে বিস্ময়ে দেখছিলেন। তেহরানে রসিকতা চলছে- ইরানের পাল্টা হামলায় লক্ষ্যবস্তু ছিল মোসাদের সদর দপ্তর, কিন্তু ওটা খালি ছিল। কারণ সব এজেন্ট তখন তেহরানেই!

২০০২ সালে ইরানের গোপন পারমাণবিক কর্মসূচি প্রথম প্রকাশ্যে আসে। সে সময় সংস্কারের পক্ষে একটি আন্দোলন হয়। তখন অনেকে ভেবেছিলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার বদলানো সম্ভব। কিন্তু ওই সংস্কারবাদী আন্দোলন ব্যর্থ হয়। সরকার বুঝে যায়, জনসমর্থন নেই। তখন তারা প্রতিবাদ দমন করা শুরু করে এবং গোপনে পরমাণু কর্মসূচি গড়ে তোলে।

ইরানের নানা প্রান্তেই বহু মানুষ শাসকবিরোধী। ছোট শহর থেকে রাজধানী পর্যন্ত প্রতিবাদের ঢেউ ওঠে। তবে বোমা আঘাত হানলে হিসাব বদলায়। প্রথম রাতে ইসরায়েল শুধু সামরিক স্থাপনায় হামলা চালালেও পরে তারা তেল শোধনাগার ও পানি সরবরাহ লাইনেও আঘাত হানে। রাজধানীর উত্তরের তাজরিশ স্কয়ারে এক বোমায় মারা যান খ্যাতনামা এক গ্রাফিক ডিজাইনার, যিনি সেই সময় ট্রাফিক সিগনালে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
গাজা যেন ছায়ার মতো তাড়া করছে ইসরায়েলের প্রতিটি অভিযানে। ইরানের পাল্টা হামলায় যখন ইসরায়েলিরা নিহত হন, তখন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুমকি দেন- ‘তেহরান পুড়ে ছাই হয়ে যাবে।’

এদিকে ইরানের ভেতরে যারা সরকারের সমালোচক, তারাও এখন বিদেশি হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করছেন। টেলিগ্রামে এক বিবৃতিতে মানবাধিকারকর্মী ও রাজনৈতিক আন্দোলনকারীরা বলেন-

‘এই দেশের ইতিহাসের সংকটময় মুহূর্তে, যখন আমরা একটি বর্ণবাদী ইসরায়েলি সরকারের আগ্রাসনের মুখে, তখন আমরা এই হামলার নিন্দা জানাই। আমরা যেকোনো বিদেশি হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করি। কারণ আমরা মনে করি, এটি আমাদের নাগরিক সমাজের গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রয়াসকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। আমরা আমাদের মাতৃভূমির অখণ্ডতা, স্বাধীনতা ও মর্যাদা রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ। আমরা এই অঞ্চলে শান্তির পক্ষেও।’

তেহরানে পারমাণবিক গবেষণা চুল্লির আশপাশে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। সরকার পটাসিয়াম আয়োডাইড ট্যাবলেট বিতরণ শুরু করেছে। যেটি তেজস্ক্রিয়তা থেকে গলা রক্ষা করতে সাহায্য করে। ফোর্দো, নাতাঞ্জ ও ইস্ফাহানে যেসব স্থাপনায় বোমা পড়েছে, সেগুলো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র। সেখানে রেডিয়েশন ছড়ানোর ঝুঁকি কম। কিন্তু তেহরানের চুল্লি ব্যতিক্রম। এটি ১৯৬৭ সালে আমেরিকা স্থাপন করেছিল। শহরের মাঝখানে ৯০ লাখ মানুষের আবাস। বলা হয়েছে, কেবল রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের নির্দেশ পেলে নির্দিষ্ট বয়সীদের এই ওষুধ খেতে হবে। অথচ ওই টেলিভিশন চ্যানেলেও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।

এখন প্রশ্ন, এরপর কী হবে? এই প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করছে ইরানের শাসকদের আচরণের ওপর। তারা কখনো খুব জনপ্রিয় ছিলেন না। কিন্তু যখন ইরানের ভেতরে বিদেশি সেনা আসে, তখন জাতি একত্র হয়। ইরানে সরকারবিরোধিতা আছে, কিন্তু মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসাও প্রবল।

এই জাতীয় গর্ব ইসলামের আগের সময় থেকে চলে আসছে। ইরানের মালভূমিতে আজও কেউ কেউ পালন করেন প্রাচীন জরথ্রুস্ট ধর্ম- বিশ্বের প্রথম একেশ্বরবাদী ধর্ম, যার ভিত্তিতে গড়ে উঠেছিল এক সাম্রাজ্য। এই ঐতিহ্য এখনো ইরানিদের মনে গেঁথে আছে।

এই গর্ব ধরা পড়ে নামের মধ্যেও- দারিওস, কাইরাস; যেটি পারস্য সম্রাটদের নাম। পার্সেপোলিসের ধ্বংসাবশেষে খোদাই করা চিত্রে দেখা যায়, বিশ্ববাসী নতজানু হয়ে পারস্য শাসকের সামনে শ্রদ্ধা জানাচ্ছে। অনেক ইরানি এখনকার পারমাণবিক কর্মসূচিকেই সেই ঐতিহ্যের অংশ মনে করেন। তাদের মতে, এটি ‘অপরিহার্য অধিকার’। কারণ পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তির সদস্যরাষ্ট্র শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পারমাণবিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারে।

তেহরানে এখন দেখা যাচ্ছে, দীর্ঘদিন জনসমর্থনহীন সরকার নতুন করে কিছুটা সমর্থন ফিরে পাচ্ছে। 

এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ব্যক্তিগতভাবে বন্ধুকে বলেন, ‘খামেনি যদি পুরো পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধও করতেন, তবু ইসরায়েল হামলা চালাত। তাদের উদ্দেশ্য ইরানের সামরিক শক্তিকে দুর্বল করা।’

লেখক: টাইম পত্রিকার জেরুজালেম ব্যুরোপ্রধান হিসেবে দায়িত্বে আছেন। টাইম থেকে অনুবাদ: এম আর লিটন