যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্প টেলিভিশন বিতর্ক অনুষ্ঠানে একে অন্যকে বাক্যবাণে জর্জরিত করেন। ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটের বিতর্কে উঠে আসে অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, গর্ভপাতের অধিকার, গাজার যুদ্ধ, ইউক্রেন যুদ্ধের মতো বিষয়গুলো।
যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের ফিলাডেলফিয়ায় স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টায় এবিসি নিউজের ওই বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সিএনএনের বিশ্লেষণ বলছে, বিতর্কে কমলা হ্যারিসই বিজয়ী বলে রায় দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। বিতর্কের শুরুতে দুই প্রার্থীর মধ্যে হয়ে যাওয়া ভার্চুয়াল কয়েন টসে ট্রাম্প জিতেছিলেন। গোটা আয়োজনে তার বিজয় শুধু সেটুকুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এমনকি ট্রাম্পের পক্ষে সাফাই গাওয়ার জন্য সুপরিচিত ফক্স নিউজও বিশ্লেষকদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বিতর্কে কমলা হ্যারিসই বিজয়ী হয়েছেন। বাগযুদ্ধে পটু ট্রাম্প বিতর্কে সুবিধা করে উঠতে পারেননি।
শুরু থেকেই ট্রাম্প ছিলেন চাপের মুখে। যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিস বিতর্কের আগে ট্রাম্পের পোডিয়ামের দিকে এগিয়ে যান এবং বাধ্য করেন হাত মেলাতে।
বিতর্কের আগে আশঙ্কা ছিল কমলা সুবিধা করে উঠতে পারবেন কি না ট্রাম্পের সঙ্গে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টের বাক্যবাণের সামনে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারবেন কি না সেটি নিয়েও সংশয় ছিল অনেকের মনেই। বিতর্কের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রবাসী কমলা হ্যারিস সম্পর্কে আরও জানতে আগ্রহী এমন তথ্যও সামনে এসেছিল।
সব প্রশ্ন ও সংশয় দূর করে কমলাকে মঙ্গলবার রাতে দেখা যায় আত্মপ্রত্যয়ী ও উদ্যমী রূপে। তার নেতৃত্বকাল কেমন হতে পারে সেটিরই যেন একটা ধারণা পেয়ে যান জনগণ।
অন্যদিকে ট্রাম্প প্রতি পদে পর্যদুস্ত হন কমলার হাতে। এমন সব আক্রমণ তাকে সামাল দিতে হয় যা হয়তো তিনি কল্পনাও করতে পারেননি। তবে পাল্টা আক্রমণ যে তিনি একবারেই করেননি তা নয়। মোটের ওপর সেগুলোকে ততটা দৃঢ় বলা যায় না বলেই উল্লেখ করেছে সিএনএন।
বিতর্কে ট্রাম্পকে আক্রমণ করে কমলা বলেন, ট্রাম্প ক্ষমতা ছাড়ার সময় বেকারত্বকে তীব্র মাত্রায় রেখে গেছেন। তিনি তুলে ধরেন ১৬ জন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ট্রাম্পের অর্থনৈতিক নীতির সমালোচনা করেছেন। ট্রাম্প শুধু বড় ব্যবসায়ীদের সুযোগ দেবেন বলেও অভিযোগ তুলেন কমলা।
জবাবে ট্রাম্প চীনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, তার আমলে চীন থেকে শত শত কোটি ডলার শুল্ক এসেছে এবং পরেও তা অব্যাহত ছিল। তিনি ক্ষমতায় এলে অন্য দেশের ওপর কর আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকের ব্যয় কমাবেন বলেও উল্লেখ করেন।
গর্ভপাতের অধিকার বিষয়ে নিজের অবস্থান সুস্পষ্ট করতে গিয়ে ট্রাম্প বলেন, ডেমোক্র্যাটিক পার্টি নারীদের ৯ মাসেও গর্ভপাতের অধিকার দিতে চায় এবং অনেক মার্কিন অঙ্গরাজ্যে শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরও হত্যার অনুমতি রয়েছে। তবে বিতর্কের সঞ্চালক জানান, এ রকম কোনো নিয়ম যুক্তরাষ্ট্রের কোথাও নেই। কমলার পক্ষ থেকে এ প্রসঙ্গে বলা হয়, মার্কিন নারীরা গর্ভপাতের অধিকার কেড়ে নেওয়ার পক্ষে নন।
গাজা যুদ্ধ ও ইউক্রেন যুদ্ধও আলোচনার বড় একটি অংশ জুড়ে ছিল। গাজার যুদ্ধ ইসুতে কমলা হ্যারিস বলেন, এটি থামা প্রয়োজন। ইসরায়েলের অবশ্যই নিজেকে রক্ষার অধিকার রয়েছে। কিন্তু সেটি কীভাবে তা ভাবতে হবে। অন্যদিকে ট্রাম্প বলেন, ইসরায়েলকে ঘৃণা করেন কমলা হ্যারিস এবং তিনি (কমলা) প্রেসিডেন্ট হলে দুই বছরের মধ্যে ইসরায়েলের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না।
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে চান বলেও মন্তব্য করেন ট্রাম্প। আর কমলা বলেন, আপনি এখন আর আমাদের প্রেসিডেন্ট নেই, এতে আমাদের ন্যাটো জোটের মিত্ররা খুবই কৃতজ্ঞ। তিনি আরও বলেন, পুতিন একজন স্বৈরশাসক। যিনি আপনাকে খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিতেন। ট্রাম্প অভিযোগ তুলেন, ইউরোপের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র এ যুদ্ধে অনেকে বেশি খরচ করছে।
এদিকে সিএনএনের বিশ্লেষণ বলছে, বিতর্কে জিতে গেলেই তা নির্বাচনি বিজয় নিশ্চিত করে না। ২০১৬ সালে ট্রাম্প ও ২০০৪ সালে জর্জ ডব্লিউ বুশ বিতর্কে বিজয়ী না হয়েও নির্বাচনে জিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। আর কমলার পারফরম্যান্স নিয়ে ডেমোক্র্যাটরা উদ্বেলিত হলেও বিভিন্ন পক্ষ নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে গোটা বিতর্ক বিশ্লেষণ করবেন।
নির্বাচনের দুটি ইসুতে ট্রাম্প বরাবরই এগিয়ে। আর সে দুটি হলো অর্থনীতি ও অভিবাসন। এখনো অনেক ভোটার কোভিড-পরবর্তী অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য অপেক্ষা করছেন। তাদের ভোট পাওয়ার জন্য শুধু বিতর্কের বিজয় যথেষ্ট হবে না।
কমলা হ্যারিস ভালো পারফর্ম করলেও বিজয় লাভ করবেন এমনটা এখনই বলা যাচ্ছে না। নির্বাচনের ফলাফল নির্ভর করছে প্রায় ২ লাখের মতো মতপরিবর্তনকারী ভোটারের ওপর। তবে কমলার প্রচার শিবির আশাবাদী যে তাদের ভোট পাওয়া সম্ভব হবে। সূত্র: সিএনএন