প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের গত মঙ্গলবারের বিতর্কে নানা মিথ্যা ও অর্ধসত্য দাবি করা হয়েছে। আল-জাজিরার সত্যতা যাচাইয়ে উঠে এসেছে বিষয়গুলো। মিথ্যা দাবির দৌড়ে ট্রাম্প এগিয়ে থাকলেও খুব একটা পিছিয়ে ছিলেন না কমলা।
ট্রাম্পের দাবি ১: ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যখন কংগ্রেসে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখতে যান, সে সময় কমলা হ্যারিস তার সঙ্গে দেখা পর্যন্ত করতে রাজি হননি।
একে অর্ধসত্য হিসেবে অভিহিত করেছে আল-জাজিরা। হ্যারিস নেতানিয়াহুর বক্তব্যের এক যৌথ অধিবেশন বাদ দিয়েছিলেন ২৪ জুলাই। কিন্তু তা ভিন্ন এক রাজনৈতিক ব্যস্ততার কারণে। পরের দিনই নেতানিয়াহুর সঙ্গে মুখোমুখি সাক্ষাৎ করেন হ্যারিস এবং সে সাক্ষাতের পর ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন বৃদ্ধি করেন তিনি।
ট্রাম্পের দাবি ২: যুক্তরাষ্ট্র ৮ হাজার ৫০০ কোটি ডলার মূল্যমানের নতুন ও সুন্দর সুন্দর সামরিক রসদ আফগানিস্তানে ফেলে এসেছে।
আল-জাজিরা বলছে, এ দাবি মিথ্যা। যুক্তরাষ্ট্র কিছু সামরিক রসদ ফেলে এসেছিল। কিন্তু অর্থের মূল্যমানে সেগুলোর দাম অনেক কম। ট্রাম্প যতটা বাড়িয়ে বলেছেন, অঙ্কটি তত বড় নয়। ৭০০ কোটি ডলারের অস্ত্র ফেলে আসতে হয়েছে তাদের। সেগুলো পরে তালেবানের হাতে চলে যায়।
ট্রাম্পের দাবি ৩: হাইতি থেকে আসা অভিবাসীরা যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইয়োর স্প্রিংফিল্ডের বাসিন্দাদের পোষা কুকুর, বিড়াল খেয়ে ফেলছে।
আল-জাজিরার বরাতে জানা গেছে, এটি মিথ্যা দাবি। স্প্রিংফিল্ড শহরের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, হাইতি থেকে আসা অভিবাসীরা এমন কিছুই ঘটাননি। তাদের কাছে এ রকম কোনো অভিযোগ নেই। পুলিশের পক্ষ থেকেও একই তথ্য জানানো হয়েছে।
হ্যারিসের দাবি ১: মহামন্দার পর সবচেয়ে প্রতিকূল বেকারত্ব রেখে গেছেন ট্রাম্প।
তার এ দাবিটি মিথ্যা বলে জানিয়েছে আল-জাজিরা। ২০২০ সালের এপ্রিলে বেকারত্বের হার ১৪ দশমিক ৮ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছিল, সেটিকে মহামন্দার পরবর্তী অবস্থার সঙ্গে তুলনা করা হয়। কিন্তু পরে ওই বছরের ডিসেম্বরে তা কমে ৬ দশমিক ৪ শতাংশে আসে। ফলে ট্রাম্প এ রকম কোনো প্রতিকূল অবস্থা রেখে যাননি তার উত্তরসূরীদের জন্য।
ট্রাম্পের দাবি ৪: ৮ লাখ ১৮ হাজার ভুয়া চাকরি তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের জো বাইডেনের প্রশাসন।
অর্থনীতিবিদদের দেওয়া তথ্যানুসারেই ট্রাম্পের এ দাবির কোনো ভিত্তি নেই। ভালো সংখ্যক চাকরিই তৈরি হয়েছে ডেমোক্র্যাট আমলে। আগামীতে এসবের ব্যাপারে আরও সুনির্দিষ্ট তথ্য আসবে।
ট্রাম্পের দাবি ৫: যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অঙ্গরাজ্যে নবজাতক ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর পরই মেরে ফেলার অনুমতি দেওয়া হয়। দাবিটি মিথ্যা। বিতর্কের সঞ্চালক সরাসরিই বলেছেন, এ রকম কোনো নিয়ম যুক্তরাষ্ট্রের কোথাও নেই।
ট্রাম্পের দাবি ৬: বিতর্কে ট্রাম্প দাবি করেন, ইউক্রেন যুদ্ধ কখনো শুরুই হওয়ার কথা ছিল না। কমলা হ্যারিসকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলাপের জন্য পাঠানো হয়েছিল এবং তিন দিন পরই যুদ্ধ শুরু হয়।
আল-জাজিরার প্রতিবেদন বলছে, দাবিটি মিথ্যা। কমলা হ্যারিস ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। কিন্তু তিনি কখনো রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি। তাদের তিনজনের মধ্যে কখনো কোনো আলোচনাও হয়নি। সূত্র: আল-জাজিরা