যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিখ্যাত টিভিতে নিজেকে আকর্ষণীয় ও চটকদার হিসেবে উপস্থাপন করার জন্য অনেকের কাছে তার আচরণ ভালো না লাগলেও বেশ আগ্রহ নিয়ে অনেকে দেখেন সেসব। তবে এবার সেই ট্রাম্প হতাশ করতে চলেছেন সবাইকে। কমলা হ্যারিসের সঙ্গে আর কোনো বিতর্কে অংশ নেবেন না তিনি। অন্তত আপাতত এটিই তার সিদ্ধান্ত।
কমলা হ্যারিসের সঙ্গে গত মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাতে এবিসি নিউজের আয়োজনে এক বিতর্কে অংশ নেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে কমলা জিতেছেন। আর এতে বিপাকে পড়েছেন ট্রাম্প। কারণ বাকপটু ট্রাম্পের জন্য এভাবে পরাজিত হওয়ার অর্থ, তা নির্বাচনে প্রভাব ফেলা।
তবে ট্রাম্প অবশ্য শুরু থেকেই দাবি করে যাচ্ছেন, তিনিই জিতেছেন এবং এটি তার করা সেরা বিতর্কগুলোর মধ্যে অন্যতম। তার এ দাবি অবশ্য মানতে নারাজ অনেকেই। খোদ ট্রাম্পের পক্ষে সাফাই গাওয়া টিভি চ্যানেল ফক্স নিউজের বিশ্লেষকরাও রায় দিয়েছেন, কমলাই জিতেছেন। এরকম পরিস্থিতিতে ট্রাম্প সুর পাল্টে চেষ্টা করেছিলেন ‘বিতর্কটি পাতানো ছিল’ এমন দাবি তোলারও।
এখন আবার পুরোনো দাবিতেই ফিরে গেছেন রিপাবলিকান পার্টির এই প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী। তিনি জানান, যেহেতু বিতর্কে তিনিই জিতেছেন, সেহেতু নতুন করে আর বিতর্কের কোনো প্রয়োজন নেই। ট্রাম্প বলছেন, ‘যেহেতু আমরা দুটি বিতর্ক করেছি এবং দুটি সফল ছিল, সেহেতু তৃতীয় আর কোনো বিতর্ক হবে না। অবশ্য এ ক্ষেত্রেও অনেক দেরি হয়ে গেছে। প্রচার এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) অ্যারিজোনাতে এক বক্তব্যে ওই মন্তব্য করেন তিনি। দুটি বিতর্ক বলতে মূলত তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে করা প্রথম বিতর্কের কথা বোঝাচ্ছেন। তিনি জুনের ওই বিতর্কটিতে জিতেছিলেন। সেটায় শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়ে বাইডেনকে বিদায় নিতে হয়েছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌড় থেকেই। তার স্থলাভিষিক্ত হয়ে ইতিহাস গড়েছেন কমলা হ্যারিস।
তবে ট্রাম্পের কমলা হ্যারিসের সঙ্গে আর বিতর্ক করতে না চাওয়ার পেছনে সম্ভাব্য আরেকটি কারণ থাকতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে সংবাদমাধ্যম সিএনএন। হয়তো তিনি আর সবার সামনে নিজেকে অপ্রস্তুত, অমনোযোগী হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছেন না। হয়তো এর মধ্য দিয়ে নিজের নির্বাচনি ঝুঁকি কমাতে চাইছেন তিনি।
জনমত জরিপ বলছে, কমলা হ্যারিসের সঙ্গে ব্যাপক টক্কর দিতে হচ্ছে ট্রাম্পকে। কিছুটা পিছিয়েও আছেন তিনি। তবে অর্থনীতি ও অভিবাসন ইস্যুর মতো বিষয়গুলো সামনে ভোটারদের সমর্থন পেতে তাকে সহায়তা করতে পারে।
এদিকে বিতর্কের পর যে শুধু ট্রাম্পের সুর পাল্টে গেছে, তা নয়। কমলা হ্যারিসের সুরও পাল্টেছে। তিনি মঙ্গলবার রাতের বিতর্কের পর বলেছেন, ভোটারদের জন্য তার ও ট্রাম্পের আবার বিতর্ক করা প্রয়োজন। অথচ বিতর্কের আগে বিশ্লেষকদের মনে সংশয় ছিল কমলা ভালো পারফর্ম করতে পারবেন কি না। বিতর্কটি বাইডেনের মতো তার জন্যও আত্মঘাতী হয়ে দাঁড়াবে কি না, সেসব সংশয় এখন আর নেই। উল্টো এখন ভবিষ্যৎ বিতর্ক থেকে পিছিয়ে আসার জন্য কমলার প্রচার শিবির থেকেও ট্রাম্পকে নিয়ে নানা ধরনের পোস্ট করা হচ্ছে। যেমন- হ্যারিসের প্রচার শিবিরের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ডেভিড প্লাউফ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ট্রাম্পকে তাচ্ছিল্য করে ‘চিকেন ম্যান’ বা ‘ভীতু মানুষ’ আখ্যা দিয়েছেন।
সিএনএনের প্রতিবেদন বলছে, রিপাবলিকান পার্টির মনোনীত প্রার্থী ট্রাম্পের মন পরিবর্তনের রেকর্ড রয়েছে। হয়তো সামনে মন বদলাতেও পারেন তিনি। সূত্র: সিএনএন