পশ্চিমকে সতর্ক করে দিয়েছে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সেন্ট পিটার্সবার্গে এক বক্তব্যে তিনি গত বৃহস্পতিবার বলেছেন, রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলা চালানোর জন্য ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দেওয়া হলে তা হবে যুদ্ধ-কর্মকাণ্ডের শামিল।
পুতিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘এর অর্থ হলো ন্যাটো দেশগুলো– যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলো– রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে জড়াচ্ছে। আর এ রকমটি হলে মনে রাখবেন আমাদের ওপর আসা হুমকি মোকাবিলায় আমরাও প্রতিক্রিয়ায় যথাযথ সিদ্ধান্ত নেব।’
পুতিনের মন্তব্য এমন একটি সময়ে এল যখন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো মিত্র অংশীদাররা ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিতে চাইছে। ওই অস্ত্র হাতে পেলে ইউক্রেন রাশিয়ার বিভিন্ন সামরিক অবকাঠামোতে আঘাত হানতে পারবে। কিয়েভ যুদ্ধের শুরু থেকেই এটি নিয়ে প্রকাশ্যে চাপ দিয়ে আসছে ন্যাটো মিত্রদের।
কিয়েভে সাম্প্রতিক এক সফরের সময় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে এ ধরনের অস্ত্র সরবরাহ প্রশ্নে নিষেধাজ্ঞা সরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে। এদিকে, ন্যাটোর অন্যতম সদস্য যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমার বর্তমানে ওয়াশিংটনে রয়েছেন। সেখানে থেকেই তিনি পুতিনের হুমকির প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
বিবিসির খবর বলছে, হুমকি খুব একটা আমলে নেননি স্টারমার। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ইস্যুতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ইউক্রেনের নিজেকে রক্ষার অধিকার রয়েছে।
পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্কও জানিয়েছেন, পুতিনের হুঁশিয়ারিতে তিনি উদ্বিগ্ন নন।
এক সংবাদ সম্মেলনে টাস্ক বলেন, ‘এটি খুব জরুরি যে ইউক্রেন ও ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রের সব বিষয়কে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। তবে আমি প্রেসিডেন্ট পুতিনের সর্বশেষ বিবৃতিকে বেশি গুরুত্ব দেব না। রাশিয়া যে যুদ্ধক্ষেত্রে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে, সেটিই উঠে এসেছে তাদের বক্তব্যে।’
ছয় ব্রিটিশ কূটনীতিককে মস্কো থেকে বহিষ্কার
রাশিয়ার এফএসবি নিরাপত্তা সেবা গত শুক্রবার ছয় ব্রিটিশ কূটনীতিককে মস্কো থেকে বহিষ্কার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি ও ইচ্ছাকৃতভাবে ক্ষতিসাধনের অভিযোগ এনেছে তারা।
এ প্রসঙ্গে মস্কোর ব্রিটিশ দূতাবাস থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
সোভিয়েত ইউনিয়নের আমলে গোয়েন্দা সংস্থা হিসেবে গোটা বিশ্বেই পরিচিতি লাভ করেছিল কেজিবি। পরে দেশটি ভেঙে রাশিয়া হওয়ার পর কেজিবির উত্তরসূরি হয় এফএসবি।
গোয়েন্দা সংস্থাটি বলছে, তাদের কাছে অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করছে এ রকম নথি রয়েছে। এ রকমই এক নথির বরাতে তারা জেনেছে, পূর্ব ইউরোপ ও মধ্য এশিয়ায় রাজনৈতিক ও সামরিক পরিস্থিতি প্রতিকূল করে তোলার পেছনে ভূমিকা রাখছে লন্ডনের ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর। এ ছাড়া তারা ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার কৌশলগত পরাজয় নিশ্চিত করতে কাজ করছিল।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এ অভিযোগ সম্পূর্ণরূপে ভিত্তিহীন।
এ প্রসঙ্গে এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, ‘রাশিয়ার কর্তৃপক্ষ গত মাসে যুক্তরাজ্যের ৬ কূটনীতিকের কূটনৈতিক মর্যাদা বাতিল করেছে। ইউরোপ ও যুক্তরাজ্যে রাশিয়া যে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে, সেটির প্রতিক্রিয়াতেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার যা করেছে তারই জেরে ওই ঘটনা ঘটিয়েছে রাশিয়া। সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স