ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। গতকাল মঙ্গলবার রাতে ওই হামলা চালানো হয়। ইরান থেকে প্রায় ২০০ ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে বলে বিবিসি জানায়। ইসরায়েলের সেনাবাহিনী হামলার বিষয়টি স্বীকার করে দাবি করেছে, আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ‘আয়রন ডোমে’র মাধ্যমে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করা হয়েছে। তবে কতটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করা গেছে সে ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলা হয়নি। যদিও ওই হামলায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
বিবিসির ভিডিও চিত্রে ইসরায়েলের আকাশে অসংখ্য ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে আসতে দেখা গেছে। জেরুজালেমে অবস্থানরত বিবিসির সাংবাদিক জানিয়েছেন, তিনি আকাশে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধের শব্দ শুনেছেন। এ ছাড়া রয়টার্সের সাংবাদিকরা ইসরায়েলের প্রতিবেশী দেশ জর্ডানের আকাশসীমায় ক্ষেপণাস্ত্রকে লক্ষ্যভ্রষ্ট করতে দেখেছেন।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে হুমকি দিয়ে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের ওপর ইরানের সরাসরি সামরিক হামলার জবাব দেওয়া হবে। হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা গতকাল হামলার পর বিবৃতিতে বলেন, ইরানকে অবশ্যই এর পরিণতি ভোগ করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের এই হুমকির পর ইরানসহ মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গত রাতে ইরানের হামলার আগে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিজ্ঞপ্তিতে দেশের নাগরিকদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে। একই সঙ্গে স্থানীয় সেনা কমান্ডের নির্দেশনা অনুসরণ করতে বলেছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সাইরেন শুনলে আপনাকে অবশ্যই একটি সুরক্ষিত এলাকায় যেতে হবে এবং পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকতে হবে।’
এর আগে গত সোমবার রাতে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে স্থল অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলছে, লেবাননে সোমবার রাতে অভিযান শুরু হয়েছে। তাদের ৯৮তম এলিট ডিভিশন এই অভিযান চালাচ্ছে। এর আগে এই ডিভিশনটি গাজায় হামাসের সঙ্গে লড়াইয়ে নিয়োজিত ছিল। সেখান থেকে তাদের এনে হিজবুল্লাহর সঙ্গে লড়াইয়ে নিয়োজিত করা হয়েছে। সেনারা লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ‘সীমিত, স্থানীয় এবং সুনির্দিষ্ট স্থল অভিযান’ চালাচ্ছে।
লেবাননে ইসরায়েলের বোমা হামলায় ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ নিহত হওয়ার পর এর বদলা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল তেহরান। সেই বদলা নিতেই গতকাল রাতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় দেশটি। তবে হামলার আগে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সতর্ক করে বলা হয়, ইরান থেকে বড় ধরনের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হতে পারে। একই সঙ্গে নাগরিকদের নিরাপদ স্থানে অবস্থান করতে বলা হয়।
এর আগে দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লাহর সঙ্গে প্রবল যুদ্ধে জড়ায় ইসরায়েল। সেখানে ইসরায়েলি প্যারাট্রুপার ও কমান্ডোরা স্থল অভিযান শুরু করার পরপরই শুরু হয় তীব্র লড়াই। একে অপরকে লক্ষ্য করে হামলা-পাল্টাহামলার ঘটনা ঘটে। এর আগে টানা কয়েক দিন লেবাননের বিভিন্ন এলাকায় বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। হিজবুল্লাহর নেতৃস্থানীয়দের অনেকেই তাতে মারা গেছেন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন হিজবুল্লাহপ্রধান হাসান নাসরাল্লাহও।
লেবাননের দুটি নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, ইসরায়েলি ইউনিট লেবাননে রাতের আঁধারে প্রবেশ করেছে এবং অভিযান শুরু করেছে। লেবাননের সেনারা সীমান্তের এলাকাগুলোর অবস্থান থেকে সরে গেছে।
এদিকে হিজবুল্লাহ গতকাল জানিয়েছে, পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ইসরায়েলের ভেতরে সে দেশের সেনাদের অবস্থান লক্ষ্য করে তারা রকেট ছুড়েছে ও গোলাবর্ষণ করেছে। তবে লেবাননের ভেতরে থাকা ইসরায়েলি সেনাদের বিষয়ে কোনো কিছু বলেনি হিজবুল্লাহ। এ ছাড়া ইয়েমেনের হুতি গোষ্ঠী ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। রয়টার্সের খবর বলছে, তেল আবিব ও এইলাত এলাকায় ইসরায়েলি সামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে। হুতির সামরিক মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারি টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক বক্তব্যে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
লেবানন নিজেদের সেনা সরিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে নিয়মিত কাজ বলে জানিয়েছে। ঐতিহাসিকভাবেই লেবাননের সামরিক বাহিনী সব সময় ইসরায়েলের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে জড়ায়নি। গত বছরের সংঘাতের সময়ও ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর ওপর গুলি চালায়নি তারা।
লেবাননের সীমান্তবর্তী শহর আইতা আল-শাব থেকে তীব্র গোলাবর্ষণ, ড্রোন ও হেলিকপ্টারের আওয়াজ শোনা গেছে। সীমান্ত শহর আরমেইশ থেকে ফ্লেয়ার ছুড়তে দেখা গেছে। রাতের আকাশ আলোকিত হয়ে উঠেছিল ফ্লেয়ারের আলোতে। ইসরায়েল গতকাল ফিলিস্তিনি ফাতাহ আন্দোলনের সামরিক দলের লেবানন শাখার কমান্ডার মৌনির মাকদাহকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। গতকাল প্রথমভাগে হামলাটি চালানো হয়। তার ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা এখনো জানা যায়নি। দক্ষিণের সাইডন শহরের কাছে ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েল হামলাটি চালায়। এ হামলা নিয়ে এখনো ইসরায়েল কোনো মন্তব্য করেনি।
তবে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েল নিজেদের ‘সীমিত’ অভিযান পরিচালনার যে তথ্য জানিয়েছে, তা প্রত্যাখ্যান করেছে হিজবুল্লাহ। তারা একে ‘বানোয়াট’ আখ্যা দিয়েছে। হিজবুল্লাহর গণমাধ্যম কর্মকর্তা মুহাম্মদ আফিফ বলেছেন, ‘লেবাননে অনুপ্রবেশের জায়োনিস্টদের সব দাবি মিথ্যা।’ তিনি আরও জানান, এখনো হিজবুল্লাহ যোদ্ধা ও অধিকৃত বাহিনীর মধ্যে কোনো প্রত্যক্ষ সংঘর্ষ হয়নি।
আফিফ বলেন, ‘আমাদের যোদ্ধারা লেবাননে অনুপ্রবেশের দুঃসাহস দেখানো শত্রুর সঙ্গে লড়তে প্রস্তুত।’ সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স