আগামী ৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ তাদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে যাচ্ছেন। শুরুতে এবারের নির্বাচনের লড়াই ২০২০ সালের নির্বাচনের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে হওয়ার কথা থাকলেও গত জুলাই মাসে বাইডেন তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। পরে বাইডেন এবং তার দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে মনোনয়ন দিলেই এটি কমলা-ট্রাম্প লড়াইয়ে পরিণত হয়।
এখন বড় প্রশ্ন হলো- আমেরিকানরা কি তাদের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট পেতে যাচ্ছেন? নাকি আবারও ফিরছেন ট্রাম্পযুগে? সাম্প্রতিক জরিপগুলোর আলোকে এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির তথ্যউপাত্ত বিশ্লেষকরা।
জাতীয় জরিপগুলোতে কে এগিয়ে আছেন?
জুলাইয়ের শেষ নাগাদ ভোটের দৌঁড়ে যোগ দেওয়ার পর থেকেই সব জরিপে এগিয়ে রয়েছেন কমলা হ্যারিস। সর্বশেষ মার্কিন জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজ জরিপে গতকাল পর্যন্তও এগিয়ে ছিলেন কমলা।
এই জরিপে কমলার পক্ষে ভোট পড়েছে ৪৮ শতাংশ এবং রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ট্রাম্পের পক্ষে পড়েছে ৪৬ শতাংশ ভোট। সেপ্টেম্বরের ১০ তারিখে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী প্রায় সাত লাখ দর্শকের সামনে একটি টেলিভিশন বিতর্কে অংশ নেন।
বিবিসির বিশ্লেষণ বলছে, এই বিতর্কে অসাধারণ পারফর্ম্যান্সের কারণে এক সপ্তাহের ব্যবধানে জাতীয় জরিপগুলোতে আগের চেয়ে ০.৮ পয়েন্ট এগিয়ে যান কমলা। বিতর্কের আগে তিনি যেখানে ২.৫ পয়েন্টে এগিয়ে ছিলেন পরে তা বেড়ে হয় ৩.৩ পয়েন্ট। তবে এরও এক সপ্তাহ পর ০.৫ পয়েন্ট হারান কমলা। অর্থাৎ বর্তমানে জরিপগুলোতে গড়ে ২.৮ পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছেন কমলা।
যদিও এই জরিপগুলো নির্বাচনের পূর্বে দেশজুড়ে প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা পরিমাপের একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক হিসেবে কাজ করে, তবে এই জরিপগুলোকে নির্বাচনে জয়ী কে হবেন সে সম্পর্কে নিশ্চিত ভবিষ্যদ্বাণী করার মানদণ্ড ধরে নেওয়ার সুযোগ নেই।
দোদুল্যমান রাজ্যগুলোতে কে জিতছেন?
ব্যাটলগ্রাউন্ড খ্যাত দুদোল্যমান সাতটি রাজ্যের ভোটই মূলত ঠিক করে দেয় যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট কে হবেন। সাম্প্রতিক জরিপে এই রাজ্যগুলোতে বেশ হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হচ্ছে দুই প্রার্থীর মধ্যে। এর মধ্যে পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যকেই ফলাফল নির্ধারণী বলে মনে করা হচ্ছে, কারণ সাতটি সুইং স্টেটের মধ্যে এটির ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট সংখ্যা সবচেয়ে বেশি (১৯)। যিনি এই রাজ্যে জিতবেন তিনি জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ২৭০ ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটের মাইলফলকে পৌঁছাতে পারবেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এই রাজ্যে সাম্প্রতিক জরিপগুলোতে বর্তমানে এক পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছেন কমলা হ্যারিস। বিশেষত, বাইডেন সরে দাঁড়ানোর পর কমলা দৌঁড়ে আসায় এই রাজ্যগুলোতে হাওয়া ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে বইতে শুরু করেছে।
বিবিসির বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, বাইডেন সরে দাঁড়ানোর পর রাজ্যগুলোতে গড়ে পাঁচ পয়েন্ট এগিয়ে গিয়েছে ডেমোক্র্যাটরা। মূলত মিশিগান, উইসকনসিন এবং নেভাদায় এই পয়েন্ট নতুনভাবে অর্জন করেছে ডেমোক্র্যাট শিবির।
পেনসিলভানিয়াসহ এই চার রাজ্যে ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট রয়েছে মোট ৪৫টি। অপর তিন দোদুল্যমান রাজ্য নর্থ ক্যারোলাইনা, জর্জিয়া ও অ্যারিজোনায় এগিয়ে রয়েছেন ট্রাম্প। যেখানে ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট সংখ্যা ৪৩।
সুতরাং বলা চলে, এবারের নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে কমলা হ্যারিসের জয়ের যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকলেও বেশ কঠিন পথই পাড়ি দিতে হবে তাকে। সূত্র: বিবিসি