জলবায়ুসৃষ্ট মানবিক বিপর্যয় রোধে বৈশ্বিক অর্থায়নে অংশ নিতে বিশ্বনেতাদের প্রতি জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে চলমান কপ-২৯ জলবায়ু সম্মেলনে তিনি এই আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘জলবায়ু অর্থায়নে বিশ্বকে অবশ্যই অংশ নিতে হবে। নতুবা বিশ্বমানবতাকে এর চরম মূল্য দিতে হবে।’ তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে আনার সময়সীমা ফুরিয়ে যাচ্ছে।
বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির বিষয়ে সতর্ক করে জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেস বলেন, ‘আপনারা যে শব্দ শুনতে পাচ্ছেন তা ঘড়ির কাঁটার শব্দ। বৈশ্বিক তাপমাত্রাকে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রিতে সীমাবদ্ধ রাখার চূড়ান্ত সময়সীমায় রয়েছি আমরা এবং সময় আমাদের পক্ষে নেই।’ অর্থাৎ, বিষয়টি ভবিষ্যতে আর হাতের নাগালে থাকবে না। মনে করা হচ্ছে, সবচেয়ে উষ্ণতম বছর হিসেবে ২০২৪ সাল রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে। এই প্রসঙ্গে গুতেরেস বলেন, ‘২০২৪ সাল হচ্ছে বৈশ্বিক জলবায়ু ধ্বংসের মাস্টারক্লাস।’
বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন প্রমাণ বিশ্লেষণ করে বলছেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা এবং এর নেতিবাচক প্রভাব ধারণার চেয়েও দ্রুতগতিতে দৃশ্যমান হচ্ছে। সম্ভবত পৃথিবী ইতোমধ্যে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মাত্রা অতিক্রম করে ফেলেছে।
সম্মেলনে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টার্মার বলেন, তিনি যুক্তরাজ্যের জন্য আরও উচ্চাকাঙ্ক্ষী জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ ছাড়া ২০৩৫ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্য কার্বন নিঃসরণ ৮১ শতাংশ কমিয়ে আনবে বলে ঘোষণা দেন তিনি। বক্তব্যের শেষদিকে তিনি বলেন, ‘আগামী প্রজন্মের চাকরির দৌড় হবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি সেক্টরকেন্দ্রিক। আমি এর সঙ্গে থাকতে চাই এবং জিততে চাই।’
এবারের আয়োজক দেশ আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট এবং সম্মেলনের সভাপতি ইলহাম আলিয়েভ বলেন, ‘তেল ও গ্যাস সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত উপহার, এর উত্তোলন এবং বাজারজাতকরণের জন্য কোনো দেশকে দোষারোপ করা উচিত নয়।’ এ ছাড়া তার দেশকে নিয়ে ‘অপপ্রচার এবং মিথ্যা তথ্য’ ছড়ানোর জন্য পশ্চিমা গণমাধ্যমের সমালোচনা করেন তিনি।
এবারের সম্মেলনে নেই অনেক বিশ্বনেতা
এবারের কপ-২৯ জলবায়ু সম্মেলনে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টার্মার, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান, জাতিসংঘ মহাসচিব ও বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অংশ নিলেও থাকছেন না যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো। অথচ এই দেশগুলোই বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি তথা কার্বন নিঃসরণের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী। সূত্র: বিবিসি ও রয়টার্স