দক্ষিণ লেবাননে দায়িত্বরত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের অবিলম্বে সরিয়ে নেওয়ার জন্য মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসকে আহ্বান জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
রবিবার (১৩ অক্টোবর) নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘মহাসচিব মহোদয়, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের ক্ষতিকর জায়গা থেকে সরিয়ে নিন। এটি এখনই করা উচিত, অবিলম্বে।’
এর আগে দক্ষিণ লেবানন থেকে সাধারণ লেবানিজদের দ্রুত সরে যাওয়ার নির্দেশ জারি করে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।
প্রায় কাছাকাছি সময়ে জাতিসংঘ মহাসচিবকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে তিরস্কার করেছেন ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাতজ। গত সপ্তাহে ইসরায়েল ভূখণ্ডে ইরানের চালানো ক্ষেপণাস্ত্র হামলার নিন্দা জানাতে ব্যর্থ হওয়ার ক্ষোভ থেকে এই মন্তব্য করেন তিনি।
এর আগে গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার দক্ষিণ লেবাননের নাকুরা এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় পাঁচজন জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্য গুরুতর আহত হন। এর মধ্যে দুজন ইন্দোনেশিয়া এবং দুজন শ্রীলঙ্কার নাগরিক।
গতকাল শান্তিরক্ষীদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানায় ৪০টি দেশ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স হ্যান্ডেলে প্রকাশিত ৪০টি দেশের এক যৌথ বার্তায় হামলার নিন্দা জানিয়ে বলা হয়, ‘লেবাননে নিযুক্ত শান্তিরক্ষীদের ওপর হামলা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত এবং যথাযথ তদন্ত হওয়া উচিত। আমরা এই অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি বিবেচনায় এই বাহিনীর উপস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি।’
প্রতিরোধের চেষ্টা করছে হিজবুল্লাহ, ২০ দখলদার সেনা নিহত
লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে হিজবুল্লাহর যোদ্ধাদের ‘পয়েন্ট ব্ল্যাংক রেঞ্জে’ লড়াই চলছে। গতকাল দক্ষিণ লেবাননের কাছের একটি সীমান্ত গ্রামে এই সংঘর্ষ শুরু হয়েছে বলে দাবি করেছে ইরান-সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। হিজবুল্লাহর এই হামলায় রামিয়া এলাকায় ২০ জনেরও বেশি ইসরাইলি সৈন্য হতাহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে আল মায়াদিন স্যাটেলাইট নিউজ।
এর আগে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে হাইফা বন্দরের কাছে একটি সামরিক ঘাঁটিতে মুহুর্মুহু রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে হিজবুল্লাহ। পেয়ায় ২০০ রকেট দিয়ে হিজবুল্লাহ এই হামলা করেছে বলে জানা গেছে। এই হামলার পর এক বিবৃতিতে হিজবুল্লাহ বলেছে, সীমান্ত গ্রাম ব্লিদায় ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে হিজবুল্লাহর তীব্র লড়াই চলছে।
আল মায়াদিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরাইলি সেনাবাহিনী দক্ষিণ লেবাননের তাল আল-মুদাওয়ার এলাকায় প্রবেশের চেষ্টা করলে হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা তাদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক ব্যবহার করে এবং মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ সংঘর্ষে ইসরাইলি বাহিনীর একাধিক সদস্য নিহত এবং ১৭ জনেরও বেশি আহত হয়।
এদিকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী লেবাননের সীমান্তবর্তী বিস্তৃত অঞ্চলে তাদের হামলা বৃদ্ধি করেছে। হিজবুল্লাহর ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত অঞ্চলের ভেতরে ও বাইরে বিশেষত শিয়া অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে বোমা হামলা শুরু করেছে ইসরায়েলি সৈন্যরা। কিছু এলাকায় হিজবুল্লাহর সদস্যদের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ চলছে বলেও জানিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।
শত বছরের পুরোনো মসজিদ ধ্বংস
লেবাননের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা ন্যাশনাল নিউজ এজেন্সি (এনএনএ) জানিয়েছে, গতকাল লেবাননের একটি গ্রামে শত বছরের পুরোনো মসজিদ ধ্বংস করেছে ইসরায়েলি সৈন্যরা। মসজিদটি কাফার তিনবিত শহরে অবস্থিত।
শহরটির মেয়র ফুয়াদ ইয়াসিন বলেছেন, ‘বিমান হামলায় মসজিদটি ধ্বংস হয়েছে। প্রিয় একটি স্থান হারিয়ে আমি বেশ ভেঙে পড়েছি। এটি একটি উল্লেখযোগ্য স্থাপনা ছিল। কারণ বিশেষ অনুষ্ঠানের সময় পরিবারগুলো এর ঠিক পাশের স্কয়ারে জড়ো হতেন। মসজিদটি অন্তত শত বছরের পুরোনো।’ হামলার পরপরই মসজিদের ধ্বংসস্তূপের কাছে শত শত মানুষ জড়ো হয়েছেন।
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ২৯
ফিলিস্তিনি চিকিৎসাকর্মীরা জানিয়েছেন, ইসরায়েলের বাহিনী গত শনিবার গাজায় হামলা চালিয়ে অন্তত ২৯ জনকে হত্যা করেছে। তারা ট্যাংক নিয়ে জাবালিয়া এলাকার অনেক ভেতরে ঢুকে পড়েছে।
আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থাগুলো জানিয়েছে, হামাসের যোদ্ধাদের পুনরায় একত্রিত হওয়া ঠেকাতে ইসরায়েল জাবালিয়ায় আক্রমণ চালানোর পর থেকে হাজার হাজার মানুষ সেখানে আটকা পড়ে আছেন। অক্টোবরের শুরু থেকে দক্ষিণ গাজায় কোনো খাদ্যবাহী যান প্রবেশ করতে দেয়নি ইসরায়েলি বাহিনী। ফলে সেখানে ভয়াবহ খাদ্যসংকট তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে সেখানে কর্মরত জাতিসংঘের কর্মীরা। সূত্র: আল-জাজিরা, বিবিসি