ইরানের ইসরায়েলকে প্রতিহত করার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। উল্টো ইরান আরও ঝুঁকির মুখে পড়ে গেছে বলেই রায় দিয়েছেন তারা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরায়েলের সাম্প্রতিক বিমান হামলা ইরানের এস-৩০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থার সবটুকু ভেঙে দিয়েছে। ইসরায়েলের ওই হামলা ছিল ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণের পাল্টা জবাব। ইরান জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলি আক্রমণের ক্ষয়ক্ষতির মূল্যায়ন করছে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক নিউ লাইনস ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড পলিসির নিকোলাস হেরাস ভয়েস অব আমেরিকাকে বলেন, এই বিমান হামলাগুলো এটিই প্রমাণ করে যে ইসরায়েলের ইরানের সঙ্গে যুদ্ধের ক্ষেত্রে গুণগত সামরিক সুবিধা রয়েছে; যা ওই রাষ্ট্রটির প্রতিহত করার কৌশলের ওপর প্রভাব ফেলেছে।
হেরাস আরও বলেন, ইসরায়েল উন্নত বিধ্বংসীব্যবস্থা দিয়ে আঘাত হেনেছে, ইরানের বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে পাশ কাটিয়ে যেসব স্থান আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের জন্য জ্বালানি সরবরাহ করে এমন সব স্থানে আঘাত করেছে। ওই ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইরানের প্রতিরোধ কৌশলের মূল উপাদান। তারা মূলত ইরানিদের বার্তা দিতে চেয়েছিল যে প্রযুক্তিগত যুদ্ধের বিষয়ে ইসরায়েলিরা অনেক এগিয়ে আছে।
কার্নেগি এন্ডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের ফেলো নিকোল গ্রাজুয়েস্কি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পর্কে অনলাইন দিওয়ানে লেখেন, সরাসরি আক্রমণের মাধ্যমে ইসরায়েলকে প্রতিহত করার ইরানের প্রচেষ্টা হিতে বিপরীত হয়েছে। তাদের নিজেদের প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় যে ফাঁক রয়েছে, সেদিকে তারা নজর দেয়নি... আর তাই ১ অক্টোবরের তুলনায় ইরান সম্ভবত এখন নিজেকে আরও আশঙ্কাজনক স্থানে নিয়ে গেছে।
দ্য ওয়ার জোন পত্রিকায় টমাস নিউডিক তার লেখায় বলেছেন, ইরানের এস-৩০০ ক্ষেপণাস্ত্রকে কর্মক্ষমহীন করে দেওয়ার মধ্য দিয়ে ইসরায়েলের জন্য অনেক প্রত্যক্ষ আক্রমণ ও পরবর্তী আক্রমণের পথ খুলে গেছে।
নিউডিক বলেন, এটি প্রায় অবশ্যম্ভাবী যে ইরান যদি আবার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে এ ধরনের আক্রমণ চালায়, তাহলে ইসরায়েলের কাছে বহু পাল্টা বিকল্প পরিকল্পনা রয়েছে জবাব দেওয়ার জন্য।
ইরানের হাতে থাকা একটি শক্তি হচ্ছে বিভিন্ন আঞ্চলিত শক্তির সঙ্গে সুসম্পর্ক। বিভিন্ন আঞ্চলিক গোষ্ঠী ইরানের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এসব গোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে ইরাকের অভ্যন্তরের দল, গাজায় হামাস, ইয়েমেনে হুতি এবং লেবাননে হিজবুল্লাহ। ইসরায়েল বর্তমানে সেখানেও আঘাত হানছে। এটিও এক অর্থে ইরানকেই প্রতিহত করা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ওয়াশিংটন কুইন্সি ইনস্টিটিউটের বিশ্লেষক স্টিভেন সাইমন এক অনলাইন পরিবেশনায় বলেন, ইরানের অনেক অজ্ঞাত প্রতিরোধ শক্তি রয়েছে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সেসব শক্তির কতটুকু অবশিষ্ট আছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাইমন।
সাইমন জানান, হামাসকে মূলত একটি সামরিক সংগঠন হিসেবে ধ্বংস করার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে হিজবুল্লাহও মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত। হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেট গুদামে ইসরায়েলের আক্রমণে ক্ষতির সাম্প্রতিক মূল্যায়ন কতটা ঠিক তা জানা না থাকলেও আন্দাজ করা যায়- ওই সব রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্রের ৮০ শতাংশ হয় ধ্বংস হয়ে গেছে, নয়তো অকেজো হয়ে গেছে।
সাইমন আরও বলেন, হিজবুল্লাহ ইরান থেকে পাওয়া অস্ত্র দিয়ে নিজেদের স্বল্পতা পুষিয়ে ফেলতেও অসুবিধার সম্মুখীন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ অস্ত্র বিতরণকারী হিসেবে সিরিয়া এটি নিশ্চিত করতে সক্ষম না যে অস্ত্রশস্ত্র তার সীমান্ত দিয়ে লেবাননে প্রবেশ করতে পারবে কি না। ইরানের পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার বিকল্পগুলো এখন মারাত্মকভাবে কমে এসেছে বলেও মন্তব্য করেছেন কার্নেগির গ্রাজুয়েস্কি।
তবে ইরান হামলা চালাবে বলে জানিয়ে রেখেছে। যদিও ইসরায়েল ও তার মিত্ররা এ বিষয়ে দেশটিকে মানা করেছে। বর্তমানে লেবাননে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা নিয়ে কাজ চলছে। এটি খুব দ্রুত হয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি। তবে এ রকম পরিস্থিতিতেও হামলা থামায়নি ইসরায়েল। বৈরুতে বোমা হামলা অব্যাহত রেখেছে তারা। গাজা উপত্যকাকেও রেহাই দিচ্ছে না। সেখানেও চলছে ইসরায়েলি ধ্বংসলীলা।
সব মিলিয়ে পরিস্থিতি বেশ গুরুতর হয়ে উঠেছে। ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলায় গত এক বছরে লেবাননে ২ হাজার ৮৬৭ জন এবং গাজায় ৪৩ হাজার ২০৪ জন মারা গেছেন। নিহতদের বেশির ভাগই বেসামরিক বলে জানা গেছে। স্বয়ং জাতিসংঘ ইসরায়েলের এ ধ্বংসলীলা নিয়ে সরব ভূমিকা পালন করছে। ইসরায়েল মানবিক বিপর্যয় তৈরি করেছে বলেও একাধিকবার জানিয়েছেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা। সূত্র: ভয়েস অব আমেরিকা, আল-জাজিরা