যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মধ্যপ্রাচ্য। তার ক্ষমতার শেষ বছরে পরিস্থিতি এমন একটি পর্যায়ে গিয়ে ঠেকে যে, বড় ধরনের যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায় গোটা মধ্যপ্রাচ্য।
কী হয়নি গত এক বছরে? ইসরায়েলে হামাসের হামলা, জবাবে ইসরায়েলি পক্ষ থেকে গাজায় যুদ্ধ শুরু করা, নির্বিচারে বেসামরিক গাজাবাসীকে হত্যা, লেবাননে আক্রমণ, হিজবুল্লাহ ও হামাসের শীর্ষ নেতাদের নিধন, ইরানের হামলা-পাল্টা হামলা, হুতিদের সঙ্গে বিতণ্ডা- কোনোটিই বাকি নেই।
যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়ে আসছে। তবে দেশটির অনেকেই ইসরায়েলি বাহিনীর এরকম নির্বিচার হামলা, হত্যা ও মানবিক বিপর্যয় তৈরির বিরুদ্ধে। ইসরায়েলকে যাতে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন না দেয়, সেজন্য মার্কিনিরা প্রতিবাদ পর্যন্ত করেছেন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ হয়েছে।
খুব স্বাভাবিকভাবেই এই ইস্যুটি যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কমলা হ্যারিস এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প দুজনেই মধ্যপ্রাচ্য সংকট ও ইসরায়েলের বিষয়ে বিগত দিনগুলোতে গণমাধ্যমের সামনে, বক্তৃতার মাধ্যমে নিজ নিজ অবস্থান পরিষ্কার করেছেন।
মোটা দাগে কেউই ইসরায়েলকে সমর্থন দেওয়া থেকে সরে আসার পক্ষে নয়। তবে কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে।
কমলা যা বলছেন
কমলা হ্যারিস ইসরায়েলের দাবিতে বিশ্বাস করেন। তিনি মনে করেন, দেশটির প্রতিরক্ষার অধিকার রয়েছে। তবে ইসরায়েল যেভাবে তা করছে, সেটি নিয়ে নারাজ তিনি। কমলা হ্যারিস চান যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মধ্যে মিত্রতা বজায় থাকুক এবং গাজায় যুদ্ধের অবসান হোক, জিম্মিরা বাড়ি ফিরে আসুক, শান্তি প্রতিষ্ঠা হোক।
কমলা ইহুদি নেতৃস্থানীয়দের সঙ্গে আলাপের সময় বলেছেন, এটি যাতে শেষ হয় তা নিশ্চিতে আমি কাজ করছি- যাতে ইসরায়েল সুরক্ষিত থাকে, জিম্মিরা মুক্তি পায়, গাজার দুর্ভোগ শেষ হয় এবং ফিলিস্তিনিরা নিজেদের মর্যাদা, স্বাধীনতা ও আত্মসংকল্পের অধিকার বুঝতে পারে।
এই একই ধরনের কথা বহুবার নির্বাচনি প্রচারের সময়ও বলতে শোনা গেছে কমলা হ্যারিসর মুখে। ফলে ঘুরেফিরে তার অবস্থান অনুমেয়। কমলা বিজয়ী হলে নিজ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি করতেও হয়তো দ্বিধাবোধ করবেন না।
ট্রাম্প যা বলছেন
কমলার মতো ট্রাম্পও যুদ্ধ শেষের পক্ষে। গত মার্চেই তিনি বলেছেন, আপনাদের এটি শেষ করতে হবে এবং দ্রুত করতে হবে। এই একই কথা তিনি পরবর্তী মাসগুলোতে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে অনেকবার বলেছেন।
গত আগস্ট মাসে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, আমি তাকে (ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু) এটি শেষ করার কথা বলেছি। এটি দ্রুত শেষ হতে হবে। আপনার বিজয় বুঝে নিন। তার পর এটির ইতি টানুন। এটি থামাতে হবে, হত্যাকাণ্ড থামাতে হবে।
পার্থক্য যেখানে
ট্রাম্প ও কমলা একই বিষয় চাইলেও তাদের মূল পার্থক্য পন্থায়। দ্য টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদন বলছে, হ্যারিস যুদ্ধবিরতির পক্ষে। অন্যদিকে ট্রাম্প ইসরায়েলের বিজয়ের মাধ্যমে গোটা বিষয়টির অবসান চান।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, হ্যারিসের মনোযোগ নিজেদের গাজা নীতির দিকে। সেটির জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে ইচ্ছুক তিনি। আর ট্রাম্প বিষয়টিকে ইসরায়েলি সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখতে চাইছেন। যদিও ট্রাম্প বলেছেন, তিনিও আলোচনার পক্ষপাতী।
কমলা হ্যারিস ও তার সমমনা ব্যক্তিরা ইসরায়েলকে গাজায় আরও সহায়তা ঢুকতে দেওয়ার জন্যও আহ্বান জানিয়েছেন। তবে ট্রাম্প এসব বিষয়ে নীরব থেকেছেন। সূত্র: সিএনএন, টাইমস অব ইসরায়েল