যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। দেশটির ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বয়স্ক মার্কিন প্রেসিডেন্ট তিনি। তার আমলে বিশ্বে উল্লেখযোগ্য ঘটনা কম ঘটেনি।
এ রকমই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা দেখে নেওয়া যাক এক নজরে-
আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার
আফগানিস্তানে প্রায় ২০ বছর ধরে মার্কিন সেনা মোতায়েন রাখার পর ২০২১ সালে তাদের প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন বিষয়টির ঘোষণা দিলেও জো বাইডেনের আমলে পুরো প্রক্রিয়াটি কার্যকর হয়।
মার্কিন সেনা সরে আসার সময়টিতে একের পর এক শহর কবজায় নিতে থাকে তালেবান গোষ্ঠী। পরে ১৫ আগস্ট আফগানিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। আফগানিস্তান চলে যায় পুরোপুরি তালেবানের দখলে। অনেক মার্কিনপন্থি ব্যক্তিকেও তড়িঘড়ি করে দেশ ছাড়তে দেখা যায়। এমনকি বিমানে ঝুলে থেকে ছিটকে পড়ার মতো দৃশ্যের ভিডিও-ও সে সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছিল।
যেভাবে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে নিজেদের সেনা সরিয়ে নিয়েছিল, সেটি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল বিশ্বে। বাইডেন প্রশাসনকেও বিভিন্ন সময়ে এ নিয়ে বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র আচমকা সেনা সরিয়ে আনায় লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হয়েছে এমন রায়ও দিয়েছেন অনেকেই।
ইউক্রেন যুদ্ধ
জো বাইডেনের আমলেই ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। যদিও ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ওই ঘটনা শুরু হওয়ার আগে থেকেই বাইডেন প্রশাসন জানিয়ে আসছিল, এ রকম কিছু একটা ঘটতে পারে।
ইউক্রেন সীমান্তে বেশ কয়েক দিন সেনা মোতায়েন রেখে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরু করে রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো মিত্ররা সরাসরি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে না জড়িয়ে বেছে নেয় পরোক্ষ ভূমিকা। অস্ত্র ও অন্যান্য সহায়তা দিয়ে ইউক্রেনের পাশে দাঁড়ায় তারা। পশ্চিমের পক্ষ থেকে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় রাশিয়ার ওপর। অনেক রুশ ধনকুবেরেরও সম্পত্তি জব্দ করা হয়। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পাশাপাশি অন্যান্য রুশ কর্মকর্তা এবং দেশটির মিত্ররা এটি নিয়ে আপত্তি তোলেন।
গাজা যুদ্ধ
বাইডেনের আমলেই হামাসের সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে ইসরায়েল। মধ্যপ্রাচ্য অস্থিতিশীল হয়ে উঠে। বাইডেন প্রশাসন ইসরায়েলকে শুরু থেকেই সমর্থন দেওয়া শুরু করে। তবে নির্বিচারে যখন ইসরায়েল ‘গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা শুরু করে তখন টনকনড়ে বাইডেন প্রশাসনের। তারা চেষ্টা করে ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি মধ্যস্থতা করতে। তবে ইসরায়েল তাতে খুব একটা কান দেয়নি। এখনো গাজায় সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র তিরস্কার করলেও প্রকৃত অর্থে সমর্থন সেভাবে সরিয়ে নেয়নি।
গাজা যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে প্রতিবাদে নেমেছিলেন মার্কিন শিক্ষার্থীরাও। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ কর্মসূচিও পালন করেছে। সাধারণ মানুষ রাস্তায় এসে বিক্ষোভ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এবার যেই জিতুক না কেন, তাকে উপরের এই তিনটি বিষয় নিয়ে কাজ করতে হবে। আফগানিস্তানে নারীদের অধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা রাখার কোনো সুযোগ আছে কি না, সে প্রশ্নের উত্তর হয়তো সামনে দেখা যেতে পারে। ইউক্রেন যুদ্ধ ও গাজার যুদ্ধ কোনদিকে গড়ায় সেটিও নির্ভর করবে বাইডেনের উত্তরসূরি কে হতে চলেছেন তার ওপর।
কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্প দুজনেরই আলাদা আলাদা নীতি ও অবস্থান রয়েছে। তারা বিষয়গুলোর সমাধান করবেন সেগুলোর ভিত্তিতেই। সূত্র: রয়টার্স, বিবিসি, ডয়চে ভেলে