যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি নির্বাচনেই মজার কিছু ঘটনা ঘটে। তবে এবার যা হয়েছে, তা বোধহয় সবদিক থেকেই ব্যতিক্রমী। নির্বাচনকে সামনে রেখে দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোতে বিজ্ঞাপনের পেছনে ব্যাপক খরচ করেছে কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের শিবির। আর এটিই আখেরে হয়ে দাঁড়ায় মানুষের বিরক্তির কারণ।
ইউটিউব থেকে শুরু করে সাধারণভাবে ফোন ব্যবহার করাও দায় হয়ে দাঁড়িয়েছিল অনেকের জন্য। মিশিগানের লিবি ব্রাওয়ের নামের এক বাসিন্দা তো ইউটিউবে প্রচার শিবিরের বিজ্ঞাপনের হাত থেকে বাঁচতে ১৩ ডলার ৯৯ সেন্ট খরচ করে সাইটটির প্রিমিয়াম বিজ্ঞাপনমুক্ত সংস্করণই নিয়ে নেন।
তবে সেটি করার পরও পুরোপুরি মুক্তি মেলেনি ৪২ বছর বয়সী ব্রাওয়েরের। ফোন কল আর টেক্সট মেসেজের ঝক্কি পার করতে হয়েছে। একপর্যায়ে পেশায় ব্যবসা কৌশলবিদ ব্রাওয়ের বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, আমি মনে করি এভাবে অযাচিত বার্তা পাঠানো অত্যন্ত রূঢ় আচরণ।
সাত দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা সংখ্যা হবে ৬ কোটিরও বেশি। তাদের সবাইকেই এ ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে। কেউ নীরবে মেনে নিয়েছিলেন, কেউ বা আবার হয়েছিলেন মহাবিরক্ত।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনের বরাতে জানা যায়, রোবোকল, টেক্সট, প্রচার সফর, বিলবোর্ড, লিফলেট, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিজ্ঞাপন- কোনোটিই বাদ ছিল না। মূলত যে যেভাবে পারে, ভোটারদের দলে টানার চেষ্টা করেছে। খরচও কম হয়নি। রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন নজরে রাখা অ্যাডইমপ্যাক্ট জানায়, ২২ জুলাই থেকে ৮ অক্টোবর পর্যন্ত ১০০ কোটি ডলার খরচ হয়েছে দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোতে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন দেওয়ার পেছনে। শুধু পেনসিলভানিয়ায় খরচ হয়েছে ২৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার।
এই যে বিজ্ঞাপনের ডামাডোল, প্রচারের শোরগোল- এগুলোর একটা ইতিবাচক দিক আছে। দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোর ভোটাররা নির্বাচনের সময় খুবই সক্রিয় থাকেন। সমাবেশ থেকে শুরু করে ভোট দেওয়া- সবকিছুতেই তাদের সরব উপস্থিতি দেখা যায়। প্ল্যাকার্ড হাতে তারা যেমন প্রচারে অংশ নেন, ঠিক সেভাবেই ভোটকেন্দ্রগুলোতে গিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য ভূমিকা রাখেন। তাদের ভোট যে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, সে বিষয়টি নিয়েও এক ধরনের গর্ব কাজ করে তাদের মধ্যে। যেমন- নর্থ ক্যারোলাইনার ব্যবসায়ী লিন ক্লার্ক বলেন, ‘আমাদের ভোটের মূল্য আছে এখানে। এটি এক ধরনের গর্বের বিষয়।’
শুধু প্রচারেই যে গোটা বিষয়টি শেষ হয়ে যায়, তা নয়। দেখা যায়, নির্বাচনের পরও তাদের মনে রাখা হয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে তহবিল তারা একটু হলেও বেশি পাচ্ছে। ২০২০ সালের নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোর ভোটারদের উপস্থিতি বাদবাকি অঙ্গরাজ্যের তুলনায় সবচেয়ে বেশি ছিল। ব্যালটপিডিয়ার তথ্যানুসারে, দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যের ভোটার উপস্থিতি ছিল ৬৫ শতাংশ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য অঙ্গরাজ্যের ভোটার উপস্থিতি ছিল ৬১ শতাংশের কাছাকাছি।
নির্বাচন এলে দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যের ভোটারদের মধ্যে এক ধরনের একতা কাজ করে বলেও জানিয়েছে রয়টার্স। রাজনীতিতে বিভক্ত হলেও কোনো এক সুরে তারা একত্রিত হয়ে যায়। বিষয়টি সবচেয়ে সুন্দর করে ফুঁটিয়ে তুলেছেন মিশিগানের বাসিন্দা মিলার।
তিনি বলেন, ‘রেস্তোরাঁয় দেখবেন প্রায় সবাই নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছে- এই নির্বাচন শেষ হলে বাঁচি, তাহলেই আর বিজ্ঞাপন দেখতে হবে না।’ সূত্র: রয়টার্স