যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হচ্ছে আজ (৫ অক্টোবর)। দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন এটি। নির্বাচনি প্রচারে এক প্রার্থী আরেক প্রার্থীকে ঘায়েল করতে সব ধরনের কৌশল প্রয়োগ করেছেন। রাজনৈতিক বক্তব্যের বাইরে গিয়ে অনেক সময় তারা ব্যক্তিগত আক্রমণেও লিপ্ত হয়েছেন।
ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ভোট গ্রহণের কয়েকদিন আগে ভোটারদের সামনে তার কথিত ‘সমাপ্তি যুক্তি’ তুলে ধরেন। আর রিপাবলিকান প্রার্থী সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পেনসিলভানিয়ায় প্রচার অভিযান চালান।
উভয় প্রার্থীই আগামী চার বছরের এই নতুন মেয়াদে দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার অনুপযুক্ত বলে পরস্পরের অবমূল্যায়ন করছেন। কয়েক দশকের মধ্যে এই যে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হতে চলেছে তাতে যেসব ভোটার কাকে ভোট দেবেন তা স্থির করেননি, তাদের কাছ থেকে উভয়ই ভোটের সুবিধা চাচ্ছেন।
জরিপে দেখা যাচ্ছে, ব্যাটলগ্রাউন্ড হিসেবে পরিচিত সাতটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যে হ্যারিস ও ট্রাম্প উভয়ই সমান অবস্থানে রয়েছেন কিংবা খুব সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে আছেন অথবা পিছিয়ে আছেন। তবে এর সবটুকুই সংখ্যাতাত্ত্বিক হিসাব- এতে ভুল হতেও পারে। এই সাতটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যের প্রতিটিতেই কয়েক হাজার ভোট গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
হ্যারিস ও ট্রাম্পের শেষ মূহূর্তের ভাষণ সেই সব ভোটারকে একদিকে কিংবা অন্যদিকে ভোটদানে আগ্রহী করে তুলতে পারে, যারা এখনো সিদ্ধান্ত নেননি। তবে এই নির্বাচনি প্রচারাভিযানে তারা তাদের প্রতিশ্রুতিশীল ভোটদাতাদের শিগগিরই ভোটদান করতে কিংবা নির্বাচনের দিনে ভোট দিতে বলেছেন যা ফলাফল নির্ধারণ করতে পারে।
ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকশন ল্যাব জানিয়েছে, ভোটের নির্ধারিত দিনের আগেই প্রায় ৪ কোটি ৯০ লাখ লোক ভোটকেন্দ্রে গিয়ে কিংবা ডাক মারফত আগাম ভোট দিয়েছেন। ২০২০ সালের নির্বাচনে সাড়ে ১৫ কোটি লোক ভোট দেন।
পেনসিলভানিয়ার অ্যালেনটাউনের দিকে যাওয়ার আগে ট্রাম্প সমুদ্রপারে ফ্লোরিডায় মার-এ-লাগোতে বক্তব্য রাখেন। তিনি হ্যারিসকে, ‘মারাত্মকভাবে অযোগ্য, সম্পূর্ণ ধ্বংসাত্মক’ বলে বর্ণনা করেন।
তবে ট্রাম্প সাংবাদিকদের কাছ থেকে কোনো প্রশ্ন নেননি এবং গত রবিবার নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে টনি হিঞ্চক্লিফের এই কৌতুকের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেননি, যেখানে বলা হয় যুক্তরাষ্ট্রের হিস্প্যানিক অঞ্চল পুয়েতে রিকো হচ্ছে ‘আবর্জনার ভাসমান দ্বীপ’।
ট্রাম্পের নির্বাচনি অভিযান এই কৌতুক থেকে দূরে থেকেছে। ট্রাম্প প্রকাশ্যে এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি, তবে এবিসি নিউজকে বলেন, তিনি হিঞ্চক্লিফকে চেনেন না। তিনি বলেন, ‘কেউ তাকে সেখানে নিয়ে এসেছিল, আমি জানি না সে কে।’
কোনো কোনো তীব্র প্রতিযোগিতামূলক রাজ্যে হাজার হাজার পুয়ের্তো রিকানের ভোট ফলাফল নির্ধারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
হ্যারিসের নির্বাচনি প্রচারাভিযান দ্রুতই ডিজিটাল বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেছে, যেখানে তারা বলছেন, ‘লাটিনো ভোটারদের সাবেক প্রেসিডেন্ট যেভাবে দেখেন তার চেয়ে অনেক ভালো প্রাপ্য তাদের।’
প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হতে উভয় প্রার্থীই দেখছেন কেবল পেনসিলভানিয়া রাজ্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সেখানেই ৩ লাখ পুয়ের্তো রিকান ভোটার রয়েছেন।
নির্বাচনি প্রচারাভিযানে হ্যারিস ও ট্রাম্প উভয়ই পরস্পরকে অপমান করেছেন। ট্রাম্প হ্যারিসকে এমন একজন বলে উল্লেখ করেন যার ‘আই কিউ’ খুব কম এবং বলেন বিশ্বের অন্যান্য নেতার কাছে তিনি ‘খেলনার পুতুল’ হয়ে থাকবেন। তিনি বলেন, ‘তারা তাকে সবটুকু ব্যবহার করবেন।’
আবার ট্রাম্পের ২০১৭-২০২১ আমলের সাবেক শীর্ষ কিছু সহযোগী তাকে ফ্যাসিবাদী বলে বর্ণনা করেছেন, যিনি তার দ্বিতীয় মেয়াদে কর্তৃত্ববাদী হিসেবে শাসন করার ইচ্ছা পোষণ করেন। হ্যারিস বলেন, এই বর্ণনার সঙ্গে তিনি সহমত। ট্রাম্পও পাল্টা হ্যারিসকে একইভাবে বর্ণনা করেন।
কমলা হ্যারিস ‘এলিপ্স’-এ তার ভাষণের আগে কয়েকটি সাক্ষাৎকার দেন, যেখানে তিনি ট্রাম্পকে আমেরিকান গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি হিসেবে তুলে ধরেন। এলিপ্স হচ্ছে সেই স্থান যেখান থেকে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ট্রাম্প তার সমর্থকদের ক্যাপিটলে যেতে বলেছিলেন এবং কংগ্রেস যাতে জো বাইডেনকে বিজয়ী ঘোষণা না করতে পারে সে জন্য যেকোনো মূল্যে লড়াই করতে বলেছিলেন।
আমেরিকার সরকারের মূল স্থানে তাদের ধ্বংসাত্মক কাজের জন্য দেড় হাজারের বেশি বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেই ঘটনায় ১৪০ জন আইন প্রয়োগকারী ব্যক্তি আহত হন এবং ক্যাপিটলে ২৯ লাখ ডলারের সম্পত্তির ক্ষতি হয়।
পরে ১ হাজারের বেশি দাঙ্গাকারীকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং এদের মধ্যে যারা গুরুতর অপরাধ করেছেন তাদের কয়েক বছরের জন্য কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। ট্রাম্প বলছেন, নির্বাচনে জয়লাভ করলে তিনি তাদের ক্ষমা করে দিতে পারেন।
হ্যারিসের প্রচারাভিযানে কমলা হ্যারিস বলেন, ‘ট্রাম্প আমেরিকান জনগণের পরিবর্তে নিজের ওপর এবং তার শত্রুদের তালিকার ওপরই বেশি নজর দেবেন। কিন্তু হ্যারিস প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে তার অগ্রাধিকারের তালিকার দিকে নজর দেবেন যাতে ব্য়য় কমানো যায় এবং আমেরিকানদের জীবন যাপনে সাহায্য করা যায়।’ সূত্র: ভয়েস অব আমেরিকা