নিউইয়র্ক সিটির কুইন্স শহরের পশ্চিম পার্শ্বে লং আইলল্যান্ড সিটি। প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রায় এক তৃতীয়াংশ যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শহর এই নিউইয়র্কে বসবাস করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে এই শহরের বাংলাদেশিদের মধ্যে আগ্রহ বেশি। রাজনীতির মাঠে সবসময় সক্রিয় থাকেন আহমেদ আলম। তিনি নিউইয়র্কের নিউ আমেরিকান ইয়ুথ ফোরামের সভাপতি। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা শুধু বাংলাদেশিদের সমস্যা না বরং এটি নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য খুবই কষ্টকর।’
কুইন্সের জ্যাকসন হাইটসের রাইজ অব নিউইয়র্ক নামক সংগঠন কাজ করছে বাংলাদেশি প্রবাসীদের ভোটার হিসেবে রেজিস্ট্রার হতে আগ্রহী করার জন্য। তারা নিজেদেরকে মধ্যপন্থি অলাভজনক নিরপেক্ষ একটি রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে বর্ণনা করে। এর সভাপতি সামসুল হক বলেন, ‘আমরা বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছি। আমরা এদেশের নাগরিক। আমরা এদেশে থাকব। আমাদের ছেলেমেয়েরা এদেশে বড় হবে। নাগরিক হিসেবে আমাদের কর্তব্য হচ্ছে ভোটার রেজিস্ট্রেশন করা এবং ভোট দেওয়া। আমরা যখন বেশি ভোট দেব তখন আমাদের রাজনীতিবিদরা কেয়ার করবেন। আমাদের যেসব প্রয়োজন রয়েছে সেগুলো তারা পূরণ করবেন।’
নিউইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে- যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য শহরের মতো নিউইয়র্কও প্রস্তুতি নিয়েছে ৫ নভেম্বরের জন্য। জরিপে দেখা গেছে, যেসব বিষয় তাদের জন্য প্রধান বিষয় সেগুলোর মধ্যে রয়েছে অর্থনীতি, স্বাস্থ্যসেবা, পররাষ্ট্রনীতি, আগ্নেয়াস্ত্রের মালিকানা ইত্যাদি। এমনকি সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগও তাদের কাছে বড় বিষয়। এর বাইরেও অন্যান্য বিষয় রয়েছে যেমন- অভিবাসন, গর্ভপাতের অধিকার এবং জলবায়ু পরিবর্তন একটি বড় ইস্যু।
কিন্তু প্রবাসী বাংলাদেশিদের মতে, তাদের কাছে অন্যান্য বিষয় প্রাধান্য পাচ্ছে। নিউইয়র্কে বেশির ভাগ বাংলাদেশি মুসলিম কুইন্সের জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে আসেন নামাজ পড়তে বা আলোচনা করতে। অন্য মুসলিমদের মতো বাংলাদেশি মুসলিমরা ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সমর্থক। কিন্তু গাজায় যুদ্ধ তাদেরকে বিপদে ফেলে দিয়েছে। ডেমোক্র্যাটদেরকেই তারা ভোট দেবেন। তবে অনেকেই ট্রাম্পকে ভোট দেবেন বা অন্যদের ভোট দেওয়ার কথা ভাবছেন। আবার একেবারেই ভোট না দেওয়ার কথাও ভাবছেন কেউ কেউ।
এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মসজিদের ইমাম-মুসলমানদের ভোট কম যাবে। কারণ তাদেরকে কেউ খুব একটা সন্তুষ্ট করতে পারেননি। একজন ইমাম বলেন, ‘এ জন্য আমাদের মন্দের ভালো বেছে নিতে হবে। আমি মনে করি ভোট আমাদের অধিকার। ভোট না দিলে আমাকে কেউ গণ্য করবে না।’
গাজা যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীদের ওপর বড় রকমের প্রভাব ফেলছে। সে কথাটি বলেছেন বামপন্থি এনজিও রাইজিং আপ অ্যান্ড মুভিং-এর পরিচালক কাজী ফাউজিয়া। তিনি বলেন, ‘এত লড়াইয়ের পরও যখন বাইডেন প্রশাসন যুদ্ধবিরতি দিল না, যার কারণে বাংলাদেশি মানুষের প্রচণ্ড একটা আক্রোশ রয়েছে। এই নির্বাচনে বাইডেন সরে গিয়ে হ্যারিসকে সমর্থন দিয়েছেন। তারপরও খুব একটা সন্তোষজনক অবস্থানে তারা যেতে পেরেছেন বলে আমার মনে হয় না। আমাদের কমিউনিটির মধ্যে একটা ক্ষোভ রয়ে গেছে। সবার একই কথা, আমাদের দেওয়া ট্যাক্সে তারা যুদ্ধ চালাচ্ছে। মুসলিম ভাই-বোনদের তারা মারছে। এটা হতে দেওয়া যাবে না ।’
তবে তাদের সবাই মনে করেন না- প্রতিবাদ বিপ্লব সব সমস্যার সমাধান। একটি প্রাইভেট ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট খুররম খুরশীদ জুম্মা বলেন- ‘ আমি ভোট দেওয়ার বিষয়ে অনেক আগ্রহী ও উৎসাহী। ভোট দেওয়া শুধু আমার অধিকারই নয়, এটা আমার অধিকার আদায়ের একটা অস্ত্র। আপনি যদি শুধু কথাই বলেন, ভোট না দেন আপনাকে দেখাতে হবে আপনার শক্তি আছে আর শক্তিটা হচ্ছে আমার ভোটের অধিকার। আপনি যদি দেখেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অনেক জায়গায় কিছু কমিউনিটি বেশ প্রভাব ফেলে। আমি মনে করি শুধু মুখে কথা না বলে আমরা যদি ভোটাধিকার প্রয়োগ করি তাহলে রাজনীতিবিদরা আমাদের কথা শুনবেন।’
ম্যানহাটনের গ্রেনিচ এলাকায় অবস্থিত নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রাণকেন্দ্র ওয়াশিংটন স্কয়ার পার্ক। এখানে নারীবাদ এবং নৃবিজ্ঞান পড়ান অধ্যাপক দিনা সিদ্দিকী। তিনি তরুণ বাংলাদেশিদের মধ্যে হতাশার ছায়া দেখতে পাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশি তরুণ-তরুণীরা এখানে বড় হয়েছেন। ওদের মা বাবারা আসেন অনেক প্রত্যাশা নিয়ে। তারা অনেক ত্যাগ করতে রাজি। কিন্তু এখানে যারা বড় হয়েছেন, ওদের জন্য আমেরিকায় থাকা কিছু না। খুবই সাধারণ জীবন যাপন ওদের কাছে। বিশেষ করে চার বছরে ওরা দেখেছেন বাইডেন ওদের জন্য কিছু করছে না। বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থা ওদের কিছুই দিচ্ছে না।’
জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজায় কর্মরত সামসুল হক বলেছেন, ‘আমরা চাই আমাদের তরুণরা ভোটার রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে ভোট ব্যাংক ক্রিয়েট করবে। এর মাধ্যমে আমরা চাই পরবর্তী প্রজন্ম যখন আসবে তারা ইলেকটর হতে পারবে।’
আজকের নির্বাচনের ফলাফল যেদিকেই যাক না কেন, নিউইয়র্কের বাংলাদেশি আমেরিকান কমিউনিটি ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের প্রতিনিধি পাঠাতে উদ্যোগ নেবে তা নিয়ে সন্দেহ নেই ।