ইরান আক্রমণে ইসরায়েলের বায়ুচালিত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের (এএলবিএম) সফল ব্যবহার বিশ্বব্যাপী সামরিক শক্তিগুলোর কাছে এ ধরনের অস্ত্রের প্রতি আগ্রহ তৈরি করতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
সাধারণত প্রধান শক্তিগুলো ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং গ্লাইড বোমার দিকে মনোযোগী হলেও ইসরায়েলের হামলা এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করেছে।
এদিকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানায়, গত ২৬ অক্টোবর তারা ইরানে সফলভাবে আক্রমণ করে ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা এবং বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে যেসব ভবনগুলো ব্যবহার হতো সেগুলোকে লক্ষ্য করে এই আক্রমণ করা হয়েছে।
ইরান তাদের ভবনগুলোকে রক্ষা করতে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টি অ্যায়ারক্রাফট সিস্টেম ব্যবহার করে বলে জানান লন্ডনের রয়েল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের অ্যায়ারপাওয়ার এবং টেকনোলজি বিশেষজ্ঞ জাস্টিন ব্রঙ্ক।
ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের তুলনায় এএলবিএমের সুবিধা
ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের তুলনায় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র অনেক বেশি কার্যকর। কারণ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ঘনবসতিপূর্ণ ও বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় সহজে লক্ষ্য করতে পারে। তবে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সাধারণত নির্দিষ্ট লঞ্চ পয়েন্ট থেকে উৎক্ষেপিত হয় এবং বেশিরভাগ ক্ষেপণাস্ত্রের পথ পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।
এএলবিএমের প্রধান সুবিধা হচ্ছে এটি প্রতিরক্ষা ভেদ করে দ্রুত এগিয়ে যেতে পারে বলে জানান ক্যালিফোর্নিয়ার মিডলবারি ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের পূর্ব এশিয়া নন-প্রোলিফেরেশন প্রোগ্রামের পরিচালক জেফ্রি লুইস।
যথাযথ লক্ষ্যবস্তু ভেদে এএলবিএম এর সুবিধা
ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অন্যতম স্থপতি এবং জেরুজালেম ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড সিকিউরিটির সিনিয়র গবেষক ইউজি রুবিন বলেছেন, ‘বায়ুচালিত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের মূল সুবিধা হচ্ছে এর উৎক্ষেপণ পয়েন্টের নমনীয়তা। এটি একটি উল্লেখযোগ্য সুবিধা। কারণ বিমান থেকে উৎক্ষেপণ করা হলে ক্ষেপণাস্ত্রগুলো যেকোনো দিক থেকে যেতে পারে। যা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও কঠিন করে তোলে।’
পৃথিবীজুড়ে এএলবিএমের বর্তমান অবস্থান
বায়ুচালিত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের বিষয়টি আগে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলোর মধ্যে ঠাণ্ডা যুদ্ধের সময়ে পরীক্ষিত হলেও বর্তমানে কেবল ইসরায়েল, রাশিয়া এবং চীনে এগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন ধরণের ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং অন্যান্য দূরপাল্লার আক্রমণকারী অস্ত্রের বিশাল অস্ত্রাগার রয়েছে। বায়ুচালিত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের প্রতি তেমন আগ্রহ দেখা যায়নি। তবে লকহিড মার্টিনের এজিএম-১৮৩ নামে একটি হাইপারসনিক এএলবিএম পরীক্ষা করা হয়েছিল। কিন্তু এটি ২০২৫ অর্থবছরের কোনো বাজেট পায়নি।
বিশ্বের জন্য এটি নতুন প্রযুক্তির বিকল্প
গাইডেন্স, ওয়ারহেড এবং রকেট মোটরের মত সাধারণ প্রযুক্তির পাশাপাশি বর্তমানে বিশ্বের অনেক দেশেই বায়ুচালিত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের প্রযুক্তি বিদ্যমান। এটি কম খরচে অনেক শক্তিশালী এবং বিশাল এলাকা জুড়ে হামলা করতে সক্ষম বলে জানিয়েছে প্রতিরক্ষা শিল্পের নির্বাহী কর্মকর্তা।
এভাবে এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ব্যাপক উৎপাদন ও প্রয়োগ ভবিষ্যতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নতুন করে হামলার সুযোগ তৈরি করবে। যা বিশ্বব্যাপী প্রতিরক্ষা নীতিমালার পরিবর্তন এবং গতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সূত্র: রয়টার্স
তাওফিক/ পপি/