২০২৩ সালে গবেষণা ও উন্নয়ন (আরঅ্যান্ডডি) খাতে ব্যয় বাড়িয়ে ২২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন সৌদি রিয়ালে (৬০২ কোটি ডলারে) উন্নীত করেছে সৌদি আরব। সে হিসেবে এটি আগের বছরের তুলনায় ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। দেশটির সরকারি পরিসংখ্যান কর্তৃপক্ষ জেনারেল অথরিটি ফর স্ট্যাটিস্টিকস (জিএস্ট্যাট) এই তথ্য জানিয়েছে। খবর আরব নিউজের।
সৌদি আরবভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটির খবরে বলা হয়, গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে কর্মীদের সংখ্যা বেড়ে ২০২৩ সালের শেষে ৪৯ হাজার ৩৩৭ জনে পৌঁছেছে, যা তার আগের বছরের তুলনায় ১২ দশমিক ২০ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে গবেষকের সংখ্যা ছিল ৩৬ হাজার ৮৩২ জন, যা তার আগের বছরের তুলনায় ২২ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি।
ভিশন ২০৩০ কৌশলের অংশ হিসেবে সৌদি আরব তাদের জ্বালানি তেলনির্ভর অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যময় করার লক্ষ্যে কাজ করছে। তারই অংশ হিসেবে জ্বালানি, প্রযুক্তি ও স্থায়িত্বসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গবেষণা ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। প্রসঙ্গত, ‘সৌদি আরবের রূপকল্প ২০৩০’ (আরবিতে একে বলা হয় রুইয়াতুস সৌদিয়্যাহ) মূলত, একটি কৌশলগত পরিকল্পনা। এই উদ্যোগটি জ্বালানি তেলের ওপর সৌদি আরবের নির্ভরতা কমাতে সাহায্য করবে। অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনতে এবং স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অবকাঠামো, বিনোদন ও পর্যটনের মতো জনসেবা খাতের উন্নয়ন করবে। মূল লক্ষ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে, অর্থনৈতিক ও বিনিয়োগ কার্যক্রমকে শক্তিশালী করা। জালানি তেলের বাইরে গিয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বাড়ানো। সেই সঙ্গে সামরিক বাহিনীতে সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি সরঞ্জাম ও গোলাবারুদ তৈরি করতে চায় দেশটি।
২০১৬ সালের ২৫ এপ্রিল ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান প্রথম এই ঘোষণা দেন। তিনটি প্রধান থিমকে ঘিরে তৈরি করা হয়েছে এই রূপকল্পটি, যা ২০৩০ সালের মধ্যে নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ অর্জনে সক্ষম হবে বলে মনে করা হয়।
জেনারেল অথরিটি ফর স্ট্যাটিস্টিকস জানিয়েছে, বিভিন্ন খাতে আরঅ্যান্ডডি ক্ষেত্রে কর্মীদের শতকরা বণ্টন থেকে দেখা যায়, উচ্চশিক্ষা খাতে কর্মীদের সংখ্যা ৩৭ হাজার ৫৪০ জনে পৌঁছেছে, যা মোট কর্মীর ৭৬ দশমিক ১০ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করে। এর পরে রয়েছে বেসরকারি খাত, যেখানে কর্মীর সংখ্যা ৮ হাজার ৮১০, যা ১৭ দশমিক ৯০ শতাংশ এবং সরকারি খাতে ২ হাজার ৯৮৭ জন কর্মী, যা মোট কর্মীর ৬ দশমিক ১০ শতাংশ।
সৌদি আরবের পরিসংখ্যান কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছে, ২০২৩ সালের শেষে দেশটির উচ্চশিক্ষা খাতে গবেষক ছিলেন ৩২ হাজার ২০৯ জন। বেসরকারি ও সরকারি খাতে গবেষকের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ২ হাজার ৭৯০ ও ১ হাজার ৮৮৩ জন।
অর্থায়নের ক্ষেত্রে, ২০২৩ সালে গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে ব্যয়ের সবচেয়ে বড় অংশটি ছিল সরকারি খাতের, যা ছিল ১২ দশমিক ১২ বিলিয়ন সৌদি রিয়াল বা মোট ব্যয়ের ৫৩ দশমিক ৬০ শতাংশ। আর বেসরকারি খাতের অবদান ছিল ৯ দশমিক ৩১ বিলিয়ন সৌদি রিয়াল। এ ছাড়া উচ্চশিক্ষা খাত পেয়েছে ১ দশমিক ১৭ বিলিয়ন রিয়াল।
আরঅ্যান্ডডিতে ব্যয়ের ক্ষেত্রে বেসরকারি খাত ছিল শীর্ষে, যেখানে ব্যয় ছিল ৮ দশমিক ৭০ বিলিয়ন রিয়াল। এরপরেই সরকারি খাতের বিনিয়োগ ব্যয় ছিল ৮ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন রিয়াল। এর মধ্যে উচ্চশিক্ষা খাতে ব্য হয়েছে ৫ দশমিক ২৪ বিলিয়ন রিয়াল।
এদিকে গত আগস্ট মাসে জ্বালানি জায়ান্ট সৌদি আরামকো ঘোষণা করেছিল যে, তারা পরবর্তী দশকে কিং আবদুল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রমে ১০ কোটি ডলার অর্থায়ন করবে।
এ-সংক্রান্ত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এই অংশীদারত্বের লক্ষ্য হলো সৌদি আরবে উদ্ভাবনের গতি ত্বরান্বিত করা এবং বৈশ্বিক জ্বালানি পরিবর্তন ও স্থায়িত্ব লক্ষ্যগুলোকে সমর্থন করে বাণিজ্যিকভাবে কার্যকর সমাধান তৈরি করা। এই চুক্তিটি বিশেষ করে জ্বালানি পরিবর্তন, স্থায়িত্ব, উপাদান বিজ্ঞান, আপস্ট্রিম প্রযুক্তি ও ডিজিটাল সমাধানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেবে।