সিরিয়ায় এক সপ্তাহের মধ্যে চতুর্থ শহরের দখল নিয়েছে বিদ্রোহীরা। গতকাল শনিবার দক্ষিণের দারা শহরটি তাদের হাতে চলে যায়। ২০১১ সালে ওই শহর থেকেই শুরু হয়েছিল আসাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ।
সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস বলেছে, ‘সরকারি বাহিনী পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার করায় ‘স্থানীয় দলগুলো দারা প্রদেশের আরও বেশি এলাকা নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে এবং দারা শহরসহ প্রদেশের ৯০ শতাংশেরও বেশি নিয়ন্ত্রণ করছে।’
বিদ্রোহী সূত্রগুলো বলছে, দারা থেকে সিরিয়ার সামরিক বাহিনী সুশৃঙ্খলভাবেই সরে গেছে। সামরিক বাহিনী নিরাপদে সরে ১০০ কিলোমিটার দূরের দামেস্কে যাওয়ার সুযোগ চেয়েছিল। সেটি তাদের দেওয়া হয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, বিদ্রোহীরা মোটরসাইকেল ও অন্যান্য বাহনে করে দারায় প্রবেশ করছেন। মানুষ সেখানে আকাশে গুলি ছুড়ে উল্লাস প্রকাশ করছেন। জনসাধারণের অনেকে বিদ্রোহীদের সঙ্গে উল্লাসে যোগ দিচ্ছেন।
সামরিক বাহিনী বা আসাদ সরকারের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। রয়টার্স বিদ্রোহীদের দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি। দারার পতনের মধ্য দিয়ে এক সপ্তাহের ভেতরে চতুর্থ গুরুত্বপূর্ণ শহরের নিয়ন্ত্রণ হারাল আসাদ সরকার। ১৩ বছর আগে যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে ওই শহরের জনসংখ্যা ছিল এক লাখেরও বেশি। শহরটি জর্ডান সীমান্তবর্তী প্রদেশেরও রাজধানী।
গত শুক্রবার শেষ ভাগেই দারা দখলে নেওয়ার দাবি করে বিদ্রোহীরা। তারা কেন্দ্রীয় শহর হোমসের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে বলেও জানায়। হোমস সিরিয়ার রাজধানী ও ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলের মাঝামাঝি অবস্থিত। ওই শহরটি বিদ্রোহীদের দখলে চলে গেলে দামেস্কের উপকূলীয় এলাকা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। উপকূলীয় এলাকায় আসাদ সরকারের বেশ কিছু ঘাঁটি রয়েছে, নৌঘাঁটি রয়েছে এবং রুশ মিত্রদের বিমান ঘাঁটিও রয়েছে।
বিদ্রোহীদের অগ্রসর হওয়ার মুখে হোমস ছেড়ে হাজার হাজার বাসিন্দা উপকূলীয় অঞ্চল লাতকিয়া ও তার্তুসে পাড়ি জমিয়েছেন। ওই অঞ্চলগুলো আসাদ সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
পরিস্থিতি এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছেছে যে আসাদ সরকার কতক্ষণ লড়াই চালিয়ে যেতে পারবে, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা শুরু হয়েছে। থিংকট্যাংক সেনচুরি ফাউন্ডেশনের ফেলো অ্যারন লান্ড বলেন, আসাদ সরকার এ মুহূর্তে জীবন বাঁচাতে লড়ছে। হতে পারে সরকার হোমস ধরে রাখতে পারে। কিন্তু সবকিছু যে গতিতে হচ্ছে, তাতে আমি এর ওপর ভরসা রাখব না।
সিরিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত টিভির খবর বলছে, রাশিয়া-সিরিয়ার যৌথভাবে হামা, ইদলিব ও আলেপ্পোতে বিদ্রোহীদের দপ্তর লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে। রাশিয়ার কো-অর্ডিনেশন সেন্টারের বরাত দিয়ে খবরে বলা হয়, এসব হামলায় শুক্রবার অন্তত ২০০ জন বিদ্রোহী মারা গেছেন।
সিরিয়ার সামরিক এক সূত্র জানিয়েছে, ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহ বাহিনী সরকারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে এবং হোমসের কাছে রয়েছে। হোমস বিদ্রোহীদের হাতে চলে গেলে আসাদ সরকারের ক্ষমতা ধরে রাখা কষ্টকর হয়ে যাবে। সূত্র: এএফপি, রয়টার্স