ইউক্রেন অধ্যুষিত এলাকা থেকে শিশু পাচার করে রাশিয়ায় আনা হচ্ছে বলে দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিবেদন।
মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) রয়টার্সে প্রতাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েলস স্কুল অব পাবলিক হেলথের গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, পুতিন সমর্থিত প্রক্রিয়ায় ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শিশুদের অপহরণ করে তাদের পরিচয় পাল্টে রাশিয়ার পরিবারগুলোতে পাচার করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সমর্থিত এই গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধের শুরুর দিকে প্রায় ৩১৪ শিশুকে অপহরণ করা হয়েছে। অপহৃত শিশুদের ‘রুশকরণ’ করা হচ্ছে বলে দাবি তাদের।
গবেষণাটির প্রধান গবেষক নাথানিয়াল র্যামন্ড বলেন, ক্রেমলিনের মদদে শিশুদের জোরপূর্বক রাশিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে তাদেরকে রুশ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে।
পুতিনের বিরুদ্ধে মানবাধিকারবিরোধী অন্যান্য অভিযোগের তালিকায় এটি নতুন সংযোজন, জানান তিনি।
এর আগে ২০২৩ সালের মার্চ মাসে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও দেশটির শিশু অধিকার কমিশনার মারিয়া বেলোভার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও শিশু অপহরণের দায়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
মারিয়ার দাবি, শিশুদের অপহরণ নয়, বরং যুদ্ধের আগ্রাসন থেকে তাদের রক্ষা করতে এটি একটি মানবিক প্রচেষ্টা ছিল।
তবে সাম্প্রতিক এই গবেষণা প্রতিবেদন মারিয়ার দাবির বিরোধিতা করে জানায়, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে মানবাধিকার লঙ্ঘন করার রাষ্ট্রায়ত্ত প্রয়াস ছিল এটি।
এ বিষয়ে নিন্দা প্রকাশ করে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বলেন, ‘ইউক্রেনের শিশুদের নিরাপদে ঘরে ফেরাতে চেষ্টার কোনো খামতি রাখছি না। যারা এই ঘৃণ্য কাজের সঙ্গে জড়িত, তাদের শাস্তি নিশ্চিত করে ছাড়ব।’
এই প্রক্রিয়াকে ‘ক্রেমলিনের পরিকল্পিত যুদ্ধাপরাধ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন ইউক্রেনের প্রসিকিউটর জেনারেল আন্দ্রেই কস্টিন।
রাশিয়ার তিনটি শিশু দত্তক ডাটাবেজের তথ্য বিশ্লেষণ করে এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়াটিকে ‘জাতীয়তাবাদী সামরিক যুদ্ধনীতি’ বলে অভিহিত করা হচ্ছে। অপহৃত শিশুদের নিজের পরিচয় ছিনিয়ে তাদের রুশ পরিচয়ে বড় করে তোলার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে বলেও দাবি গবেষণাটির।
অপহরণকাণ্ডে পুতিনের কার্যালয়ের নিজস্ব বিমান ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া ইউক্রেনের দোনেৎস্ক ও লুহান্সক অঞ্চল থেকে শিশু পাচার করতে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিমান ব্যবহৃত হয়েছে বলে জানা যায়।
এই গবেষণার প্রতিবেদন পুতিনের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধাপরাধের তদন্তে সহায়তা করবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে আইসিসি ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সূত্র: রয়টার্স
নাইমুর/অমিয়/