পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার মুলাডুলি সবজির হাটে সম্প্রতি কেনাবেচার পরিমাণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন এখানকার কৃষক, আড়তদার ও পাইকাররা প্রায় ২ কোটি টাকার শিম ও ঢ্যাঁড়শ কেনাবেচা করছেন। এর মধ্যে শিম ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা ও ঢ্যাঁড়শ ৫০ লাখ টাকার কেনাবেচা হচ্ছে।
তবে ব্যাংক থেকে পর্যাপ্ত টাকা না পাওয়ায় হাটের আড়তদাররা লেনদেনের ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। এর জন্য ব্যাংক থেকে টাকা সরবরাহ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন তারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আড়তগুলোতে দেশি জাতের শিম ও ঢ্যাঁড়শে পূর্ণ। চাষিরা তাদের উৎপাদিত শিম ও ঢ্যাঁড়শ ভ্যান, অটোরিকশা ও সিএনজিতে করে হাটে নিয়ে আসছেন এবং আড়তদারদের কাছে বিক্রি করছেন। চারপাশে পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা ঘোরাফেরা করছেন। আর চাষিরা তাদের পণ্য বিক্রির জন্য অপেক্ষা করছেন।
আড়তদাররা জানান, মুলাডুলি সবজি বিক্রির অন্যতম বড় হাট। ঈশ্বরদী ছাড়াও জেলার আটঘরিয়া, চাটমোহর, নাটোরের লালপুর, বড়াইগ্রাম ও অন্য বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যবসায়ীরা এই হাটে আসেন। চাটমোহরের গফুরাবাদ থেকে চাষি জাহাঙ্গীর হোসেন হাটে এসেছেন।
তিনি জানান, এ বছর তিনি তার ২ বিঘা জমিতে ঢ্যাঁড়শের চাষ করেছিলেন ফলনও ভালো হয়েছে। তিনি মুলাডুলি হাটে এসে উৎপাদিত ঢ্যাঁড়শ বিক্রি করে ভালো লাভ করেছেন। এতে ঢ্যাঁড়শ বিক্রি করতে কোনো ধরনের ঝামেলা হয়নি, এ জন্য তিনি সন্তুষ্ট।
আড়তদার রাজু আহমেদ ডাবলু জানান, খুচরা ব্যবসায়ী ও সবজি চাষিদের কাছ থেকে শিম ও ঢ্যাঁড়শ কিনে তারা তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ে যান। প্রতিদিন ১৪ থেকে ১৫ ট্রাক শিম ও ৭ থেকে ৮ ট্রাক ঢ্যাঁড়শ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। প্রতিটি ট্রাকে প্রায় ১০ টন শিম ও ঢ্যাঁড়শ সরবরাহ করা হয়।
তিনি অভিযোগ করেন, এত কেনাবেচা সত্ত্বেও ব্যাংক থেকে পর্যাপ্ত টাকা পাওয়ায় সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। টাকা তুলতে না পারায় বিক্রেতাদের সঙ্গে লেনদেনের ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে।
হাটের আড়তদার সমিতির উপদেষ্টা শিম চাষি আমিনুর রহমান বাবু জানান, এখন যদিও শিম ও ঢ্যাঁড়শের কেনাবেচা হচ্ছে। কিছু দিন পর লালশিম, টমেটো, বেগুন, কপিসহ অন্য শাকসবজি পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে এই হাটে প্রতিদিন ২ কোটি টাকার সবজি কেনাবেচা হলেও, ভরা মৌসুমে ওই পরিমাণ ৫ থেকে ৬ কোটি টাকায় পৌঁছাবে।’
তবে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন, ব্যাংক যদি পর্যাপ্ত টাকা সরবরাহ না করে, তাহলে বিক্রেতাদের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে এবং তারাও বিক্রির জন্য অন্য কোথাও চলে যেতে পারেন।
ব্যবসার গতি বজায় রাখতে এবং সুষ্ঠু লেনদেন নিশ্চিত করতে ব্যাংকগুলোকে টাকা সরবরাহ করার আহ্বান করেন আড়তদাররা। এতে ব্যবসায়িক সমস্যা অনেকটাই নিরসন হবে এবং মুলাডুলি হাটের ব্যবসা আরও প্রসারিত হবে জানান তারা।
এদিকে, স্থানীয় প্রশাসন এবং ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে দ্রুত সহযোগিতা চেয়ে হাটের ব্যবসায়ী নেতারা সংশ্লিষ্ট বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তাদের দাবি, প্রয়োজনীয় অর্থ সরবরাহ বাড়ানো হলে কেনাবেচা নির্বিঘ্নে চলতে থাকবে এবং দেশজুড়ে এই হাটের সুনাম আরও বৃদ্ধি পাবে।