যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার নির্বাচনি প্রচারের সময় জোর গলায় বলেছিলেন, তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করবেন। এ লক্ষ্যে হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট হিসেবে কার্যক্রম শুরুর আগেই শান্তি আলোচনা শুরু করবেন। ট্রাম্প তার প্রতিশ্রুতি অনুসারে কাজও শুরু করে দিয়েছেন। যুদ্ধ বন্ধের উদ্যোগ হিসেবে তার কৌশলী এক পরিকল্পনার বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ।
প্রস্তাবিত এই পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, রাশিয়া ও ইউক্রেনের সেনাদের মধ্যে একটি ৮০০ মাইল দীর্ঘ বাফার জোন (নিরপেক্ষ এলাকা) প্রতিষ্ঠা করা হবে। আর এই বাফার জোন প্রতিষ্ঠা করবে ইউরোপীয় ও ব্রিটেনের সেনারা।
অন্যদিকে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা সীমিত করার পক্ষে ট্রাম্প। ইউক্রেনকে বাইডেন প্রশাসনের মতো একচেটিয়া সামরিক এবং অর্থনৈতিক সহায়তা করার পক্ষে নন তিনি। ট্রাম্পের মতে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাকি সদস্য দেশ এবং সামরিক জোট ন্যাটোর পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়। তাদের ভূমিকা আরও বাড়াতে হবে। শুধু যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করে ইউক্রেন ইস্যু সমাধান করতে চান না তিনি।
ট্রাম্পের পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত এক সূত্র বলছে, ৮০০ মাইল বাফার জোন প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে একটি নিরস্ত্রীকরণ এলাকা তৈরি করা হবে। যা ভবিষ্যতে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কা কমাতে এবং কূটনৈতিক আলোচনার জন্য কাজে আসবে।
ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুসারে, রাশিয়া ইউক্রেনের যে পরিমাণ ভূমি দখল করেছে এবং রুশ বাহিনী ইউক্রেনের অভ্যন্তরে যে পরিমাণ অগ্রসর হয়েছে সেখানটাকেই সীমান্ত ধরে বাফার জোন প্রতিষ্ঠা করা হবে এবং ইউক্রেনকে ২০ বছরের জন্য ন্যাটোতে যোগদানের পরিকল্পনা স্থগিত রাখতে হবে।
পরিকল্পনায় আরও বলা হয়েছে, এর বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র সরবরাহ করবে, যেন রাশিয়া আবারও যুদ্ধ বাধাতে না পারে। যুক্তরাষ্ট্র এই মিশন পরিচালনা বা তদারকিতে কোনো সেনা পাঠাবে না এবং অর্থায়নও করবে না।
ট্রাম্পের এক সহকারী মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে জানিয়েছেন, ‘আমরা প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সহায়তা দিতে পারি, তবে বন্দুকের নল থাকবে ইউরোপীয়দের হাতে। আমরা মার্কিন পুরুষ ও নারীদের ইউক্রেনে শান্তি রক্ষায় পাঠাচ্ছি না। আর আমরা এর জন্য অর্থও ব্যয় করছি না বরং পোল্যান্ড, জার্মানি, যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্স এই দায়িত্ব নিতে পারে।’
রাশিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা এবং চুক্তির ওপর জোর দিয়ে আসছেন ট্রাম্প। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সতর্ক করে বলেছেন, রাশিয়াকে তুষ্ট করার চেষ্টা ইউরোপের আত্মহত্যার নামান্তর হবে। মূলত এই মন্তব্যের মাধ্যমে রাশিয়ার সঙ্গে শান্তিচুক্তির সম্ভাবনা কঠোরভাবে নাকচ করেছেন তিনি। এখন শেষ পর্যন্ত ইউক্রেন যুদ্ধ কোন প্রক্রিয়ায় থামে তা দেখার বিষয়।
এদিকে ট্রাম্পের সিনিয়র উপদেষ্টা ব্রায়ান লানজা জানিয়েছেন, চলমান সংঘাত নিরসনের লক্ষ্যে রাশিয়ার দখল করা অঞ্চল ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি না করে শান্তি অর্জনের দিকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। যদিও বাইডেন প্রশাসন এবং ন্যাটোর অনেকেই ক্রিমিয়া এবং দনবাসের মতো অধিকৃত অঞ্চলগুলোকে ফিরিয়ে আনাসহ ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বকে বহাল রাখতে হবে বলে জোর দিয়ে এসেছেন। সূত্র: দ্য টেলিগ্রাফ