যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। এ সময় পুতিনকে তিনি ইউক্রেন যুদ্ধের পরিসর আরও না বাড়ানোর অনুরোধ জানান। তবে ক্রেমলিন দাবি করেছে, এ ধরনের কোনো ফোনালাপ হয়নি।
অন্যদিকে ট্রাম্প যাতে কিয়েভের পাশ থেকে সরে না দাঁড়ান, সেটির জন্য তাকে অনুরোধ করার পরিকল্পনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
পুতিন ও ট্রাম্পের ফোনালাপের খবরটি এক সূত্রের বরাতে সামনে এসেছে। ওই সূত্র জানায়, ট্রাম্প ও পুতিন সাম্প্রতিক দিনগুলোতে কথা বলেছেন। তবে সুনির্দিষ্টভাবে কবে কথা হয়েছে তা বলেননি।
গত বুধবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গেও কথা হয়েছে ট্রাম্পের। সে ফোনালাপে ট্রাম্প ইউক্রেন যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র কিয়েভকে যে পরিমাণ সামরিক ও আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে, তা নিয়ে সমালোচনা করেন। তিনি যুদ্ধ অতি দ্রুত শেষ করার প্রতিশ্রুতিও দেন। তবে যুদ্ধ কীভাবে শেষ হবে তা বলেননি।
এদিকে ট্রাম্প ও পুতিনের ফোনালাপের বিষয়টি ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আগে থেকে জানতো না বলে উল্লেখ করেছে। ইউক্রেন এ আলোচনা নিয়ে সমর্থন ও আপত্তি কোনোটাই করছে না বলেও জানিয়েছে।
ওয়াশিংটন পোস্ট ট্রাম্পের যোগাযোগ পরিচালক স্টিভেন চেয়াঙের সঙ্গে পুতিন-ট্রাম্প ফোনালাপ নিয়ে কথা বলেছে। চেয়াঙ বলেন, ‘আমরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও অন্য বিশ্ব নেতাদের মধ্যকার ব্যক্তিগত ফোনালাপ নিয়ে মন্তব্য করি না।’
আগামী ২০ জানুয়ারি ক্ষমতা গ্রহণ করবেন ট্রাম্প। গত বুধবারই ট্রাম্পকে ওভাল অফিসে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বাইডেন। গত রবিবার যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সালিভান বলেন, বাইডেনের শীর্ষ বার্তাটি হবে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়টি। তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে ইউরোপ, এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি নিয়েও আলাপ করবেন।
সিবিএস নিউজকে সালিভান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ইউক্রেনের পাশ থেকে সরে দাঁড়ানো উচিত হবে না এবং ইউক্রেন থেকে সরে দাঁড়ালে যে তা ইউরোপে আরও অস্থিতিশীলতা তৈরি করবে, তা কংগ্রেসকে ও নতুন প্রশাসনকে বুঝানোর জন্য প্রেসিডেন্ট বাইডেন হাতে ৭০ দিন সময় পাবেন।
সালিভানের মন্তব্য এমন একটি সময়ে সামনে এলো যখন রাশিয়ার বড় মাপের আক্রমণ চালিয়েছে ইউক্রেন। গত রবিবার অন্তত ৩৪টি ড্রোন দিয়ে হামলা চালিয়েছে তারা।
উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়ার চুক্তি এখন আইন
উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে পারস্পরিক প্রতিরক্ষা সহায়তাসংক্রান্ত একটি কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি ছিল রাশিয়ার। সেটিকেই নতুন করে আইনে পরিণত করেছে দেশটি।
রাশিয়ার সরকারি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক ডিক্রিতে তথ্যটি জানানো হয়। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবর বলছে, গত জুনেই রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে চুক্তিটি হয়। সে সময় পিয়ংইয়ংয়ে এক শীর্ষ সম্মেলন শেষে উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন চুক্তিটি স্বাক্ষর করেন।
চুক্তিটিতে সশস্ত্র আক্রমণের ক্ষেত্রে এক দেশ অপর দেশকে সহায়তা করতে এগিয়ে আসবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ওই চুক্তি ভিন্ন বাস্তবতা তৈরি করেছিল। চুক্তিবদ্ধ দুই দেশের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছিল সেটিই। এখন সেটিই আরও পাকাপোক্ত হলো আইনের মাধ্যমে।
রাশিয়াকে এরই মধ্যে সামরিকভাবে সহায়তা শুরু করেছে উত্তর কোরিয়া। তারা ১০ হাজারেরও বেশি সেনা পাঠিয়েছে রাশিয়ার কারস্কে। এসব সেনারা রুশ প্রশিক্ষণ পেয়েছে এবং তাদেরকে দেশটির কারস্কে অঞ্চলে মোতায়েন করা হয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়ার চুক্তিতে যাওয়ার নেপথ্যে মূল কারণ হলো- একে অপরকে তাদের প্রয়োজন যা দুই নেতাই অনুভব করেছেন। পুতিনের যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য গোলাবারুদ দরকার। অন্যদিকে নিষেধাজ্ঞার কবলে থাকা উত্তর কোরিয়ার দরকার অর্থ।
বিবিসির প্রতিবেদনের বরাতে আরও জানা গেছে, চুক্তিটি গত মাসেই রাশিয়ার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে এবং গত সপ্তাহে উচ্চকক্ষের অনুমোদন পেয়েছে। পরে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন ওই বিষয়ে একটি ডিক্রিতে স্বাক্ষর করেন। সূত্র: রয়টার্স, বিবিসি