ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্ত্রিসভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসছে ফ্লোরিডার সিনেটর মার্কো রুবিওর নাম। রয়টার্সের প্রকাশিত খবর সত্যি হলে তিনিই হবেন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আর ওই পদে দায়িত্ব পালনকারী প্রথম লাটিন-আমেরিকান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে সংক্ষিপ্ত তালিকায় ট্রাম্প যাদের বিবেচনা করছেন তার মধ্যে ৫৩ বছর বয়সী রুবিও পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক সবচেয়ে কঠোর ব্যক্তি। বিশেষত চীন বিদ্বেষী হিসেবে পরিচিত তিনি। তার ওপর বেইজিংয়ের নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে। বিগত বছরগুলোতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-রাজনৈতিক শত্রু হিসেবে পরিচিত যেমন চীন, ইরান ও কিউবা প্রভৃতি দেশের ওপর পেশিশক্তি ব্যবহারের পক্ষে বেশ সরব ছিলেন। এ ছাড়া তিনি ২০১৯ সালে চীনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টিকটককে জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি বিবেচনায় এর বিরুদ্ধে ট্রেজারি বিভাগকে তদন্তের আহ্বান জানান।
ট্রাম্প অভিযোগ করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্টরা দেশটিকে ব্যয়বহুল ও নিরর্থক যুদ্ধের দিকে নিয়ে গেছেন। সেসব প্রশাসনের তুলনায় তিনি আরও সংযত পররাষ্ট্রনীতির পক্ষে কথা বলেছেন। গত এক বছর ধরে রুবিও নিজেও ট্রাম্পের এই নীতির সঙ্গে একমত পোষণ করে আরও সংযত বক্তব্য দিয়ে আসছেন।
২০১৬ সালের নির্বাচনে রিপাবলিকান দল থেকে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হন। তবে সেই সময়ের তুলনায় এবারের মার্কিন প্রশাসন আরও অস্থির ও বিপজ্জনক এক বিশ্বের মুখোমুখি হবে। তাদের ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্যের চলমান যুদ্ধের মোকাবিলা করতে হবে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের শত্রু রাশিয়া ও ইরানের আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠা চীনের বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান নিতে হবে। তবে ইউক্রেনের সংকটই রুবিওর এজেন্ডাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর সময় রুবিও বারবার বাইডেন প্রশাসনকে অনুরোধ করে আসছিলেন যেন যুক্তরাষ্ট্র কিয়েভকে আরও বেশি পরিমাণে অস্ত্র-সহায়তা দেয়। যাতে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেন সমানে পাল্টা প্রতিরোধ করতে পারে। তবে সম্প্রতি এই বিষয়ে নিজের বক্তব্য পরিবর্তন করেছেন তিনি। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলছেন, ইউক্রেনের উচিত শেষ দশকে তাদের হারানো ভূমি পুনরুদ্ধারের দিকে মনোযোগী না হয়ে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধ শেষ করার দিকে গুরুত্ব দেওয়া। এ ছাড়া রুবিও সেই ১৫ জন রিপাবলিকান সিনেটরের একজন, যারা গত এপ্রিল মাসে অনুমোদন পাওয়া ইউক্রেনে ৯৫ বিলিয়ন সামরিক-সহায়তা প্যাকেজের বিরোধিতা করেছিলেন।
কে এই মার্কো রুবিও
মার্কো রুবিও ২০১১ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে রিপাবলিকান দলের নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ২০১৬ সালে রিপাবলিকান দল থেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হয়েছিলেন। কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের রিপাবলিকান প্রাইমারিতে তিনি জিতেছিলেন। তবে ট্রাম্পের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হেরে গিয়ে প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন।
রুবিওর বাবা-মা ১৯৫৬ সালে তাদের আদি কিউবা ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসেন। পরিবারটি প্রথমে ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের মিয়ামিতে বসতি স্থাপন করেছিল। পরে নেভাদা অঙ্গরাজ্যের লাস ভেগাসে চলে আসে। যেখানে তার বাবা একজন বারটেন্ডার এবং মা একজন হোটেল গৃহকর্মী ছিলেন। ১৯৮৫ সালে ফ্লোরিডায় ফিরে আসেন। সূত্র: রয়টার্স