যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকদের মধ্যে ডেরিক ইভান্সের সন্তুষ্টিটা একটু বেশিই। তিনি আশা করছেন ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলের দাঙ্গায় অংশ নেওয়ার কারণে অভিযুক্ত হওয়া থেকে তাকে ক্ষমা করবেন ট্রাম্প। ২০২১ সালে ক্যাপিটল হিলে তিনি এবং কমপক্ষে দুই হাজার সমর্থক যখন দাঙ্গা চালিয়েছিলেন তখন তিনি ছিলেন ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার একজন আইনপ্রণেতা। এবার তার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ায় তিনি বলেছেন, ক্ষমার মধ্য দিয়ে জীবন পরিবর্তন হতে পারে। এ খবর দিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফল উল্টে দেওয়ার চেষ্টায় ৬ জানুয়ারি ওই দাঙ্গা করা হয়েছিল। ওই নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন জো বাইডেন। সেই ফলকে তারা উল্টে দিয়ে ট্রাম্পকে জয়ী করতে চেয়েছিলেন। এই বিষয়ে তিনি প্রসিকিউটরদের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছেন। তাতে বলা হয়, ইভান্স গণবিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য দায়ী এবং ২০২২ সালে ফেডারেল জেলে তিন মাস জেল খেটেছিলেন তিনি।
ওদিকে এবার নির্বাচনি প্রচারণাকালে ট্রাম্প বার বার বলেছেন, তিনি ২০২১ সালের দাঙ্গায় জড়িতদের সবাইকে ক্ষমা করে দেবেন। এসব মানুষের সবাইকে তিনি ‘দেশপ্রেমিক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। বলেন তারা ‘রাজনৈতিক বন্দি’। কিন্তু এখন কথা হচ্ছে কে তাদেরকে ক্ষমা করবেন এবং কখন করছেন তা এখনো এক বড় প্রশ্ন। ওদিকে ইভান্স বিবিসিকে ট্রাম্পের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি তিনি তার কথা রাখবেন।’
মার্চে নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প লিখেছেন, আবার তিনি প্রেসিডেন্ট হলে প্রথম কাজ হবে অন্যায়ভাবে ৬ জানুয়ারির ঘটনায় জিম্মিদের মুক্ত করা। জুলাইয়ে তিনি শিকাগোতে ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব ব্লাক জার্নালিস্ট ফোরামে বার বার এ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ইভান্স বলেন, অবশ্যই তিনি বলেছেন। তিনি বলেছেন যে, যদি তারা নিরপরাধ হয় তাহলে তাদেরকে আমি ক্ষমা করে দেব। কিন্তু তিনি গড়ে সবাইকে ক্ষমা করে দেওয়ার প্রস্তাব থেকে সরে এসেছেন। এই প্রসঙ্গে ট্রাম্প সিএনএনকে বলেছেন, ‘আমি তাদের অনেককে ক্ষমা করে দেব। আমি সবার কথা বলিনি। বলেছি তাদের কিছু সংখ্যকের কথা। সম্ভবত তাদের অনেকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল।’
ট্রাম্পের প্রচারণা টিম এর আগে বলেছে, প্রতিটি আলাদা মামলার মেরিট অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প প্রবেশ করার পর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারির দাঙ্গা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ফেডারেল তদন্তের অন্যতম। পুলিশ কর্মকর্তাদের অপদস্থ, প্রতিরোধ ও তাদের ওপর হামলার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে প্রায় ৬০০ মানুষকে। এসব মানুষের মধ্যে কিছু সংখ্যককে দীর্ঘ জেল দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আছেন ওথ কিপারস প্রতিষ্ঠাতা স্টেওয়ার্ট রোডস, প্রাউড বয়েসের এনরিক তারিও। তবে তারা ক্যাপিটল হিলের সহিংসতায় নিজেরা অংশগ্রহণ করেননি। পক্ষান্তরে তারা অভিযুক্ত হয়েছেন রাষ্ট্রদ্রোহের ষড়যন্ত্র ও অন্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে।
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বেছে নিলেন ট্রাম্প
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ের পর সরকার গঠনের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরই মধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদের জন্য প্রার্থী বাছাই করে নিয়েছেন তিনি। তারই ধারাবাহিকতায় রিপাবলিকান রিপ্রেজেন্টেটিভ মাইকেল ওয়াল্টজকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দিতে যাচ্ছেন ট্রাম্প। বিষয়টির সঙ্গে সম্পৃক্ত এমন দুটি সূত্রের বরাত দিয়ে গতকাল মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
ওয়াল্টজ দীর্ঘদিনের ট্রাম্প সমর্থক। তিনি আমেরিকার সামরিক বাহিনীতে কর্নেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। গত সপ্তাহে কংগ্রেসের প্রতিনিধি নির্বাচনে তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত হন ওয়াল্টজ। এর আগে বিভিন্ন সময় মাইকেল ওয়াল্টজ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনা কার্যকলাপের সমালোচনা করেছেন এবং এই অঞ্চলে সম্ভাব্য সংঘাতের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রস্তুত থাকার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা বিষয়ে প্রেসিডেন্টকে পরামর্শ দেন। তার এই পরামর্শ সিনেটে অনুমোদনের প্রয়োজন হয় না।
২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারে বাইডেন প্রশাসনের নিন্দা জানিয়ে ট্রাম্পের পররাষ্ট্র নীতির প্রশংসা করেছিলেন ওয়াল্টজ। ওয়াশিংটনের রাজনৈতিক অঙ্গনে তার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। তিনি প্রতিরক্ষা সেক্রেটারি ডোনাল্ড রামসফেল্ড এবং রবার্ট গেটসের জন্য প্রতিরক্ষানীতি পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন এবং ২০১৮ সালে কংগ্রেসে নির্বাচিত হন। ওয়াল্টজ সামরিক রসদ তদারককারী প্রতিষ্ঠান হাউস আর্মড সার্ভিসেস উপকমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং গোয়েন্দা নির্বাচন কমিটিতেও রয়েছেন। সূত্র: বিবিসি ও রয়টার্স