ইউক্রেনের জ্বালানি স্থাপনায় বড় ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়ার সেনাবাহিনী। শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) সকালে যখন মানুষ কর্মক্ষেত্রে এবং শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে ব্যস্ত তখন এই হামলা চালানো হয়। এতে ওডেসা শহরসহ ইউক্রেনের কয়েকটি শহরে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
এদিকে রুশ বাহিনী ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় গুরুত্বপূর্ণ শহর পোকরোভস্কের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে রুশপন্থি কিছু ব্লগার। তারা দক্ষিণ দিক থেকে অগ্রসর হয়ে শহরটির মাত্র ১ দশমিক ৫ কিলোমিটার অদূরে অবস্থান করছে বলে জানা গেছে।
কিছু বিশেষ বাহিনী শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও রেলপথ এলাকায় ঢুকে পড়েছে বলে জানিয়েছে ওই ব্লগাররা। পৃথক প্রতিবেদনে এই খবর জানিয়েছে রয়টার্স।
রুশ বাহিনী দীর্ঘ সময় ধরে ইউক্রেনের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবস্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে আসছে। গত মাস থেকে তারা আরও জোর দিয়ে এই হামলা পরিচালনা করছে। এর ফলে লক্ষাধিক মানুষ দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎহীন অবস্থায় ছিল।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ প্রায় ৩৪ মাস ধরে চলছে। ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা বলেছেন, ইউক্রেনকে জ্বালানি-সংকটে ফেলতে চায় রাশিয়া। এর জবাবে তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালানোর উপায় বন্ধ করা জরুরি। আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আরও কঠোর করার জন্য তিনি প্রয়োজনীয় রসদ সরবরাহ করার জন্য জরুরি আহ্বান জানান।
একটি শিল্প সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, গতকালের হামলায় ইউক্রেনের জ্বালানি উপকেন্দ্রগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়। এতে আগের হামলার তুলনায় গ্যাস অবকাঠামোর ওপর বেশি আঘাত করা হয়েছে। হামলার পর জ্বালানি বিভাগ জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধের ঘোষণা করে। তবে এটি নতুন ক্ষতির কারণে হয়েছে নাকি সতর্কতার জন্য তা নিশ্চিত করেনি তারা। এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
নিরপেক্ষ সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, ইতোমধ্যে ইউক্রেনের বড় একটি অংশ দখলে নিয়েছে রাশিয়া। ২০২২ সালে যুদ্ধ শুরুর দিকের তুলনায় রাশিয়ার সেনাবাহিনী এখন দ্রুতগতিতে অগ্রসর হচ্ছে।
রাশিয়ার প্রধান লক্ষ্য এখন পূর্ব ইউক্রেনের দোনেৎস্ক অঞ্চল, যেখানে রাশিয়া বর্তমানে ৬০ শতাংশের বেশি এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে। ইউক্রেন গত আগস্টে রাশিয়ার কারস্ক অঞ্চলের একটি অংশ পুনর্দখলের পর রাশিয়া এই পদক্ষেপ আরও জোরদার করেছে।
রাশিয়ার নতুন কৌশলের প্রধান হলো পোকরোভস্ক দখল করা। কারণ এই শহর দখলের মাধ্যমে ইউক্রেনের পূর্ব ফ্রন্টের সরবরাহ লাইন অকেজো করে দিতে পারবে রাশিয়া। পাশাপাশি উঁচু স্থানে অবস্থিত চাসিভ ইয়ার শহর দখল করাও সহজ হবে, যা রাশিয়াকে বড় এলাকা দখলে নিতে সহায়তা করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করায় ইউক্রেনের সমালোচনা ট্রাম্পের
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলা করতে যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহকৃত ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে ইউক্রেনের সমালোচনা করেছেন।
গত বৃহস্পতিবার টাইম ম্যাগাজিনে ‘পারসন অব দ্য ইয়ার’ নির্বাচিত হওয়া উপলক্ষে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই সমালোচনামূলক মন্তব্য করেছেন। ট্রাম্পের এমন মন্তব্য ইউক্রেনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নীতি পরিবর্তন আনার ইঙ্গিত দেয়।
ট্রাম্প বলেছেন, ‘এটা শুধু পাগলামি। রাশিয়ার অভ্যন্তরে শত শত মাইল পর্যন্ত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করা নিয়ে আমি দৃঢ়ভাবে অসম্মতি জানাই। আমরা কেন এটা করছি? আমরা এই যুদ্ধকে শুধু তীব্রতর করছি এবং আরও খারাপ করছি। এই হামলার অনুমতি দেওয়া উচিত হয়নি।’
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত মাসে ইউক্রেনকে রাশিয়ার অভ্যন্তরে আক্রমণ করতে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছেন, যা রাশিয়ার আক্রমণ ঠেকাতে ইউক্রেনকে সাহায্য করবে। সূত্র: রয়টার্স