স্বৈরাচার বাশার আল-আসাদের পতনের মাধ্যমে দীর্ঘ ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধের অবসান হলো সিরিয়ায়। আসাদ-পরবর্তী নতুন সিরিয়া প্রশাসনের সামনে এখন দেশ সংস্কারের বিরাট চ্যালেঞ্জ। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির সামনে সবচেয়ে বড় সংকট অর্থনীতি।
গৃহযুদ্ধের আগেও যে সিরিয়ার অর্থনীতির অবস্থা বেশ ভালো ছিল তা নয়, কিন্তু দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময়ের সংঘাতে দেশটির অর্থনৈতিক সংকট আরও গভীর হয়েছে। ২০২৩ সালে সিরিয়ান মুদ্রার উল্লেখযোগ্য অবমূল্যায়ন ঘটে।
বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুসারে, মার্কিন ডলারের বিপরীতে সিরিয়ান পাউন্ডের অবমূল্যায়নের হার ছিল ১৪১ শতাংশ। অনুমান করা হয়, দেশটিতে ভোক্তা মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৩ শতাংশে। সরকার বিভিন্ন পণ্যের ওপর ভর্তুকি তুলে নেওয়ায় এটি এত বেশি পরিমাণে বেড়েছে বলে ধারণা করা হয়।
জাতিসংঘের পরিসংখ্যান বলছে, দেশটির দরিদ্র জনগোষ্ঠী মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯০ শতাংশ। খাদ্যের নিরাপত্তা নেই প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষের। প্রায় ৭০ লাখ সিরীয় অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব সংকট উত্তরণের জন্য সিরীয় কর্মকর্তাদের দেশটির উত্তর এবং পূর্বে অবস্থিত তেলক্ষেত্রগুলোতে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। যে অঞ্চলগুলো আবার বর্তমানে কুর্দি নেতৃত্বাধীন বাহিনীগুলোর নিয়ন্ত্রণাধীন।
এ ছাড়া দেশটির নতুন প্রশাসনকে পশ্চিমা দেশগুলোকে রাজি করাতে হবে, যাতে বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞাগুলো তুলে নেয়। এ ছাড়া বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় সামরিক ও রাজনৈতিক শক্তি হায়াত তাহরির আল-শাম এবং এর প্রধান আমু মোহাম্মদ জোলানির নাম যাতে পশ্চিমা দেশগুলো ‘জঙ্গি’ তালিকা থেকে বাদ দেয়, এ বিষয়ে জোর কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে হবে। তবেই দেশটির দ্রুত অর্থনৈতিক মুক্তি সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সিরিয়া ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র-তুরস্ক বৈঠক
বাশার আল-আসাদের পতনের পর সিরিয়ায় সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেছেন তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বৈঠকে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান বলেছেন, তার দেশের অগ্রাধিকার হলো সিরিয়ার স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর আধিপত্য বিস্তার বন্ধ করা।
আঙ্কারায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে বৈঠকের পর ফিদান বলেন, ‘আসাদের পতনের পর নিষিদ্ধ সংগঠন পিকেকে ও আইএসআইএলের অগ্রগতি কাম্য নয়।’
ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘সিরিয়ায় আইএসআইএসকে প্রতিরোধের গুরুত্বের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’ এর আগে জর্ডান সফর করেছেন অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। সেখানে জর্ডানের রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি।
হারমন পর্বত দখল করতে ইসরায়েলি সেনাদের নির্দেশ
সিরিয়ার জাবাল আশ-শেইখ তথা মাউন্ট হারমন পাহাড়ের কৌশলগত চূড়া দখলে রাখতে সেনাবাহিনীর প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ। বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ৫১ বছর পর গত ৯ ডিসেম্বর এই চূড়ার দখল নেয় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। এই দখলকে একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত হিসেবে বর্ণনা করেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী কাটজ।
শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) সেনাবাহিনীকে ওই চূড়ায় অবস্থানের দিকনির্দেশনা দিতে গিয়ে কাটজ এ কথা বলেন। টাইমস অব ইসরায়েল এ তথ্য জানিয়েছে।