
সিরিয়ার হামা শহরের কাছে এক অজ্ঞাত ব্যক্তির ক্রিসমাস ট্রি পোড়ানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে বড় আকারের বিক্ষোভ হয়েছে দেশটিতে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা গেছে, মধ্য সিরিয়ার খ্রিষ্টান অধ্যুষিত শহর সুকাইলাবিয়ার প্রধান চত্বরে রাখা একটি ক্রিসমাস ট্রিতে অগ্নিসংযোগ করেছেন মাস্ক পরিহিত এক অস্ত্রধারী ব্যক্তি। ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে সিরিয়ার বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষার দাবিতে এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।
স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদকে উৎখাতে নেতৃত্ব দেওয়া প্রধান ইসলামপন্থি দল হায়াত তাহরির আল-শাম জানিয়েছে, অগ্নিসংযোগের দায়ে অভিযুক্ত প্রধান ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি একজন বিদেশি যোদ্ধা। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত গাছটিকে দ্রুত মেরামত করা হবে বলে জানিয়েছে তারা।
ঘটনার পর রাজধানী দামেস্কের বাব-তৌমা এলাকার রাস্তায় সিরিয়ার পতাকা এবং ক্রুশ হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন স্থানীয় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষ। বিক্ষোভে তারা ‘আমরা আমাদের ক্রুশের জন্য আত্মা উৎসর্গ করব’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া জর্জেস নামের এক ব্যক্তি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘আমাদের যদি নিজেদের ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে এই দেশে থাকতে দেওয়া না হয়, তাহলে আমরা এই দেশে আর থাকব না।’
সিরিয়া অসংখ্য ধর্মীয় ও জাতিগত গোষ্ঠীর আবাসস্থল। এখানে কুর্দি, আর্মেনীয়, অ্যাসেরীয়, খ্রিষ্টান, দ্রুজ, আলাবি শিয়াসহ সংখ্যাগরিষ্ঠ আরব সুন্নিরা দীর্ঘদিন ধরে একসঙ্গে বাস করছেন।
মাত্র দুই সপ্তাহ আগে সিরিয়ায় আসাদ পরিবারের ৫৩ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর আকস্মিক উত্থানের ফলে অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই বাশার আল-আসাদ সরকার দেশটির নিয়ন্ত্রণ হারায় এবং প্রেসিডেন্ট আসাদ পরিবারসহ রাশিয়ায় পালিয়ে যান।
বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেওয়া প্রধান গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম কীভাবে দেশ পরিচালনা করে, তা এখন দেখার বিষয়। যদিও বিদ্রোহী নেতা আহমেদ আল-শারা (আবু মোহাম্মদ জোলানি নামেও পরিচিত) ঘোষণা দিয়েছেন, ‘নতুন সিরিয়া হবে সিরিয়ানদের।’ এ ছাড়া আল-শামের নেতারা বিভিন্ন সময় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর অধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে বলে নিশ্চয়তা দেন।
আল-শাম এখনো জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের জঙ্গি সংগঠনের তালিকায় আছে। যদিও খুব দ্রুতই আল-শামের সঙ্গে পশ্চিমাদের ইতিবাচক কূটনৈতিক পালাবদলের আভাস রয়েছে। ইতোমধ্যে সিরিয়ার বর্তমান প্রধান নেতা আহমেদ আল-শারার মাথার বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত ১০ মিলিয়ন ডলার পুরস্কারের প্যাকেজটি বাতিল করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ায় তাদের সামরিক বাহিনীর উপস্থিতি অব্যাহত রেখেছে। সম্প্রতি তারা জানিয়েছে, সিরিয়ার দক্ষিণের দেই আজ-জোর এলাকায় সামরিক অভিযান চালিয়ে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের দুই যোদ্ধাকে হত্যা করেছে।
বিদেশি সেনাদের উপস্থিতি, নিরাপত্তাহীনতা এবং সংখ্যালঘুদের আক্রমণ করে ইসলামিক স্টেটের মতো উগ্রবাদী সংগঠনের দেশটিকে অস্থিতিশীল করে তোলার অভিলাষকে পাশ কাটিয়ে একটি স্থিতিশীল এবং অংশগ্রহণমূলক সিরিয়া তৈরিই হবে নতুন ইসলামিক নেতৃত্বের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সূত্র: বিবিসি