
মশাকে ‘উড়ন্ত সিরিঞ্জ’ হিসেবে ব্যবহার করে মানুষের দেহে ম্যালেরিয়ার টিকা দেওয়া হবে। এমন এক জাতের বিশেষায়িত মশার ধরণ উদ্ভাবন করেছে বিল গেটস ফাউন্ডেশনের সহযোগিতাপ্রাপ্ত নেদারল্যান্ডসের লিডেন ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টার। কিন্তু কীভাবে বোঝা যাবে ঐ মশাটিই টিকা বহন করছে, কোন ব্যক্তির টিকার প্রয়োজন, মশাটি আদৌ কোনো ক্ষতিকর জীবাণু বহন করছে কি না, তা নিয়ে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে।
জেনেটিক্যালি মডিফাইড প্লাসমোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম (Plasmodium falciparum) জীবাণুর একটি সংস্করণ মশার মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করানোর প্রযুক্তি তৈরি করেছে লিডেন ইউনিভার্সিটির গবেষক দল। কিন্তু উদ্বেগ ও বিতর্কের সূচনা হয়েছে মশা যদি এমন ব্যক্তির দেহে এই এন্টিবডি প্রবেশ করায় যার ম্যালেরিয়ার টিকার প্রয়োজন নেই কিংবা মশাটি যে ক্ষতিকর জীবাণু (এন্টিজেন) ছড়াবে না তার নিশ্চয়তা কী?
এ প্রকল্পের সূচনা হয় ২০০৮ সালে। বিল গেটস ম্যালেরিয়ার টিকা তৈরির জন্য ১৬৮ মিলিয়ন ডলার অনুদান দেন। পরবর্তী সময়ে ২০১৬ সালে ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে মিলে ৩.৭ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প চালু করেন। ২০১৮ সালে অক্সিটেক এমন মশা তৈরি করে, যেগুলোর বংশধর বড় হওয়ার আগেই মারা যায়।
বিতর্কের কারণ
১. অনেক মানুষের অজান্তেই টিকা পুশ হয়ে যাবে। তাই অনিচ্ছাকৃত টিকা দেওয়ার ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে।
২. মশার টিকা ছাড়াও ক্ষতিকর জীবাণু বহন করছে কি না, তা নিশ্চিত করা কঠিন।
৩. মশাকে জীবাণু অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে অস্ত্রের ভয়। এর আগে নাৎসি জার্মানি মশাকে জীবাণু অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছিল। আমেরিকার পেন্টাগনও একই ধরনের গবেষণা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
কিছুদিন আগে গুপ্ত হামলার শিকার হয়ে মারা যাওয়া রাশিয়ান জেনারেল লে. জে. ইগর কিরিলভ জানিয়েছিলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে এ ধরনের কতগুলো বায়োল্যাব পরিচালনা করছে যেখানে মশাকে জীবাণু অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে কিউবা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল মশাকে জীবাণু অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার অভিযোগে। ১৯৮১ কিউবায় থাকা মার্কিন নৌ ঘাঁটি ও পৃথিবীর কুখ্যাত কারাগার ‘গুয়ান্তানামো বে’ ব্যতীত পুরো কিউবায় মশার জীবাণুর সংক্রমণ মহামারি আকার ধারণ করেছিল।
এ আবিষ্কার মানবজাতির ভালো করার চেয়ে ভয়াবহ পরিণাম ডেকে আনবে এমনটাই মনে করছে অনেকে। তাই প্রশ্ন ওঠছে, এটি মানবজাতিকে রক্ষার চাইতে ধ্বংস করার প্রকল্প নয় তো! সূত্র: শ্রীলঙ্কা গার্ডিয়ান
মাহফুজ/এমএ/