ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ও ড্রোন হামলায় মঙ্গলবার (২৪ জুন) ভোর থেকে গাজায় কমপক্ষে ৭০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে অন্তত ৫১ জন নিহত হয়েছেন ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রগুলোর আশপাশে, যারা খাদ্য ও জরুরি সহায়তা নিতে এসেছিলেন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।
গাজা উপত্যকার দক্ষিণে রাফাহ এলাকায় একদিনেই ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে নিহত হন ২৭ জন সহায়তা প্রত্যাশী।
গত ৭ অক্টোবর ২০২৩ থেকে চলমান যুদ্ধের ফলে এখন পর্যন্ত গাজায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৬ হাজার ৭৭ জনে এবং আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ৩১ হাজার ৮৪৮ জন।
এই হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটছে এমন এক সময়ে যখন ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে গঠিত বিতর্কিত সংস্থা গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (GHF) গত মাসের শেষ দিকে খাদ্য বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেছে। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার (UNRWA) প্রধান ফিলিপ লাজারিনি এই কার্যক্রমকে ‘মৃত্যুর ফাঁদ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
গাজার সালাহউদ্দিন সড়কে গণহত্যা
গাজা মেডিকেল সূত্র বার্তা সংস্থা এপি’কে জানায়, গাজার মধ্যাঞ্চলের ওয়াদি গাজার দক্ষিণে সালাহউদ্দিন সড়কে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ২৫ জন নিহত এবং আরও ১৪০ জন আহত হন, যাদের মধ্যে ৬২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
আল জাজিরার সত্যতা যাচাইকারী সংস্থা Sanad-এর বরাতে জানা গেছে, নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরের আল-আওদা হাসপাতালে মৃতদেহগুলো পৌঁছানোর দৃশ্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
একই ধরনের হত্যাকাণ্ডের খবর পাওয়া গেছে দক্ষিণের খান ইউনিসের নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্স থেকেও, যেখানে আল-তিনা সড়কে সহায়তার জন্য অপেক্ষমাণ মানুষজন লক্ষ্যবস্তু হয় ইসরায়েলি সেনাদের।
উত্তরের গাজা সিটিতেও একই চিত্র দেখা। হামলার পর আল-শিফা হাসপাতালে জরুরি বিভাগ রক্তাক্ত এক বিভীষিকাময় দৃশ্যে পরিণত হয়। অনেকেই চিকিৎসা পাওয়ার আগেই মারা যান।
GHF: মানবিক সহায়তা না, মৃত্যুর ফাঁদ
গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (GHF)-এর মাধ্যমে সহায়তা বিতরণ শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই সহায়তা নিতে আসা মানুষজনের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে। এই বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয় মে মাসের শেষ দিকে, যখন ইসরায়েল গাজায় দুই মাসের বেশি সময় ধরে সকল খাদ্য ও চিকিৎসা সরবরাহ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে রেখেছিল, যার ফলে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা দেখা দেয়।
জাতিসংঘ GHF-এর সঙ্গে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেছে, এই কার্যক্রম মানবিক চাহিদার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে ইসরায়েলি সামরিক লক্ষ্যপূরণে, এবং এটি ত্রাণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের শামিল।
GHF-এর ত্রাণ বিতরণ পয়েন্টগুলোতে সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলা নিত্যদিনের চিত্র হয়ে উঠেছে। GHF কার্যক্রম শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে ৪০০ জনের বেশি মানুষ নিহত এবং ১ হাজার জনের বেশি আহত হয়েছেন।
UNRWA প্রধান ফিলিপ লাজারিনি মঙ্গলবার (২৪ জুন) বার্লিনে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এই তথাকথিত সহায়তা ব্যবস্থাটি এক ঘৃণ্য কার্যক্রম, যা মানুষদের অপমান ও হেয় করছে। এটি এক মৃত্যুকূপ, যা যতটা সহায়তা দেয়, তার চেয়ে বেশি প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে।
এদিকে, সোমবার প্রকাশিত এক চিঠিতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ‘ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্টস’ ও আরও ১৪টি সংস্থা GHF-এর বিরুদ্ধে নিন্দা জানিয়ে গাজায় বেসরকারিভাবে পরিচালিত সামরিকধর্মী মানবিক কার্যক্রম অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে।
জেনেভাভিত্তিক সংস্থা ‘ট্রায়াল ইন্টারন্যাশনাল’-এর নির্বাহী পরিচালক ফিলিপ গ্রান্ট বলেন, GHF-এর সহায়তা বিতরণের পদ্ধতি মানবিক নীতিমালার পরিপন্থী। তিনি আরও হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, GHF-এর সঙ্গে জড়িত বা এতে লাভবান হওয়া ব্যক্তিরা যুদ্ধাপরাধে সহায়তা করার দায়ে আন্তর্জাতিক বিচারিক প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হতে পারেন - এর মধ্যে রয়েছে সাধারণ মানুষের জোরপূর্বক স্থানান্তর ও দুর্ভিক্ষকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার। সূত্র: আল জাজিরা
মাহফুজ/