
যুক্তরাজ্যের লেবারদলীয় এমপি ও সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমার এ নিয়ে কী পদক্ষেপ নেবেন, তা নিয়েও চলছে জল্পনা-কল্পনা। এসবের মধ্যেই দেশটির মন্ত্রী পিটার কাইল জানিয়েছেন, টিউলিপের বিরুদ্ধে অভিযোগ স্বাধীনভাবে তদন্ত হবে। সে তদন্তের ভিত্তিতেই পদক্ষেপ নেবেন স্টারমার। তদন্ত চলাকালে টিউলিপের পদত্যাগ করা উচিত নয়।
টিউলিপের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ সামনে এসেছে। সর্বশেষ অভিযোগটি হলো, বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠদের কাছ থেকে লন্ডনে পাওয়া একাধিক ফ্ল্যাটে বসবাস করেছেন টিউলিপ। এটি সামনে আসার পর পরই তা নিয়ে শুরু হয় ব্যাপক বিতর্ক।
টিউলিপের বিরুদ্ধে ওঠা আবাসনবিষয়ক ওই অভিযোগটি বর্তমানে খতিয়ে দেখছেন দেশটির ইনডিপেনডেন্ট অ্যাডভাইজার অন মিনিস্টারিয়াল স্ট্যান্ডার্ডস লরি ম্যাগনাস। গত সোমবার টিউলিপ সিদ্দিক নিজেই তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খতিয়ে দেখার অনুরোধ জানিয়ে ম্যাগনাসকে চিঠি পাঠান। ওই একই দিন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমার বলেন, টিউলিপ ‘সম্পূর্ণ সঠিক’ কাজ করেছেন। টিউলিপের প্রতি তার আস্থা আছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তবে এ রাজনৈতিক চিত্র পাল্টে যায় যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম দ্য সানডে টাইমসে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাক্ষাৎকার প্রকাশের পর। সানডে টাইমসকে ড. ইউনূস বলেন, ‘টিউলিপ সিদ্দিকের লন্ডনের সম্পত্তিগুলোর তদন্ত হওয়া উচিত। যদি তিনি সেগুলো ‘স্পষ্টভাবে ডাকাতি’ করে অর্জন করে থাকেন, তবে তা বাংলাদেশ সরকারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া উচিত।’
পাশাপাশি টিউলিপ সিদ্দিককে ক্ষমা চাওয়ার এবং পদত্যাগ করার আহ্বান জানান ড. ইউনূস। এর পর পরই যুক্তরাজ্যের বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির নেতা কেমি বাডেনচ টিউলিপ সিদ্দিককে পদচ্যুত করার আহ্বান জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, টিউলিপকে পদচ্যুত করার জন্য স্টারমারের (প্রধানমন্ত্রী) সঠিক সময় এটা।
বাডেনচ এক হাত নেন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ স্টারমারকেও। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজের ঘনিষ্ঠ এমন এক বন্ধুকে দুর্নীতিবিরোধী সেক্রেটারি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন, খোদ তার বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগ আছে।
তবে এসব দাবি মানতে নারাজ স্টারমার প্রশাসনের মন্ত্রী পিটার কাইল। স্কাই নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি তিনি (টিউলিপ) একদম সঠিক কাজ করেছেন। তিনি নিজেই তদন্তের কথা বলেছেন। সেটি সম্পন্ন হওয়া প্রয়োজন।’
কাইল আরও বলেন, ‘আমি মনে করি সঠিকভাবে এটি নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার উপায় হলো কর্তৃপক্ষকে তদন্ত করতে দেওয়া। আমরা স্বাধীনভাবে তদন্ত পরিচালনার লক্ষ্যে কর্তৃপক্ষের হাতে আরও ক্ষমতা দিয়েছি এবং কর্তৃপক্ষ যা যা বলবে, তা শুনবেন কেইর স্টারমার।’
এদিকে কনজারভেটিভ পার্টির নেতা মেল স্ট্রাইড মনে করছেন, স্টারমারের উচিত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা এবং টিউলিপকে পদচ্যুত করা। কারণ এসব অভিযোগের জন্য টিউলিপের নিজের কাজ করা অসম্ভব হয়ে উঠেছে।
স্ট্রাইড বলেন, প্রধানমন্ত্রী যে তাকে ওই পদ থেকে সরিয়ে দিচ্ছেন না এবং পদত্যাগ করতে বলছেন না, সেটিই ঠিক হচ্ছে না। কারণ তিনি (টিউলিপ) দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতিসংশ্লিষ্ট গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। আর তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে তার পক্ষে নিজের কাজ করা একেবারে অসম্ভব হবে। ফলে তার পদত্যাগ করা উচিত এবং প্রধানমন্ত্রীর তা মেনে নেওয়া উচিত।’
নিজের এ বক্তব্যের পক্ষে যুক্তিও দেন স্ট্রাইড। তিনি বলেন, ‘কিছু পরিস্থিতি এমন হয়, যেখানে আপনি নিজের দায়িত্ব কার্যকরভাবে পালন করতে পারেন না। দেখুন চ্যান্সেলর (ব্রিটিশ চ্যান্সেলর অব দ্য এক্সচেকার র্যাচেল রিভস) চীন সফরে গেছেন। আমি যতদূর জানতাম তার সঙ্গে টিউলিপ সিদ্দিকের যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি যাননি। আমি যদি সুতা মেলানোর চেষ্টা করি তাহলে বলতে হবে, তাকে (টিউলিপ) ঘিরে এ মুহূর্তে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সেটির জন্যই তিনি যেতে পারেননি।’
শুধু আবাসন বিষয়ই নয়, বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র প্রকল্পের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগও উঠেছে টিউলিপের নামে। এ নিয়ে এর আগে তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিসভা কার্যালয়ের প্রোপ্রাইটি অ্যান্ড এথিকস টিম (পিইটি)। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান