
দীর্ঘ ১৫ মাস ধরে চলা হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ অবশেষে বন্ধ হতে চলেছে। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস এবং ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। আগামী রবিবার (১৯ জানুয়ারি) থেকে এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা।
এদিকে যুদ্ধবিরতির খবরে আনন্দ-উল্লাস করতে দেখা গেছে গাজার মধ্যাঞ্চলের দেইর আল-বালাহ এলাকার কিছু বাসিন্দাকে। দীর্ঘসময় পর এমন দৃশ্য দেখা গেল ফিলিস্তিনিদের মধ্যে।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) কাতারের রাজধানী দোহায় দুই পক্ষের প্রতিনিধিরা কাতার, মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় এই যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। হামাসের একজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি।
চুক্তির আওতায় প্রাথমিকভাবে ছয় সপ্তাহের পর্যায়ক্রমিক যুদ্ধবিরতি এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার করাসহ ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের বিনিময়ে হামাসের হাতে বন্দি ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। খবর বিবিসির।
চুক্তির মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ছিল কাতার ও যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিনিধি সরাসরি উপস্থিত থেকে দুই পক্ষকে চুক্তির দিকে এগিয়ে নিয়েছেন। এর মাধ্যমে ১৫ মাস ধরে চলা সাম্প্রতিক ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাণঘাতী লড়াইয়ের অবসান হতে যাচ্ছে।
চুক্তি হওয়ার পরপরই সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে জিম্মি মুক্তিতে একটি চুক্তি হয়েছে। তারা শিগগিরই মুক্তি পাবে।
কয়েক মাস ধরে একটি যুদ্ধবিরতির জন্য আলোচনা চলছিল। বারবার চূড়ান্ত পর্যায়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত চুক্তি করা যাচ্ছিল না। গত নভেম্বরে অনুষ্ঠিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা ও ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধের অঙ্গীকার করেন। নির্বাচিত হওয়ার পর সে অনুযায়ী তিনি দূত পাঠিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে চুক্তির চেষ্টা চালিয়ে যান। এ প্রেক্ষাপটে দুই পক্ষ চুক্তিতে পৌঁছাল।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যা করে হামাস। জিম্মি করে ইসরায়েলের ২৫০ বাসিন্দাকে। এর জেরে গাজায় নজিরবিহীন হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এতে ৪৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হন। আহত হয়েছেন এক লাখেরও বেশি। হতাহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। গাজায় ২৩ লাখ মানুষের মধ্যে প্রায় সবাই বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েন। ৮০ শতাংশ বাড়িঘর স্থাপনা ধ্বংস করা হয়। হাসপাতাল, অ্যাম্বুলেন্স, স্কুল, আশ্রয়কেন্দ্র- সব জায়গায় বেপরোয়া হামলা চালিয়ে মানুষ হত্যা করে ইসরায়েল।
শুরুর দিকে যুদ্ধবিরতিতে শতাধিক জিম্মিকে মুক্তি দেয় ইসরায়েল। তবে শেষ পর্যন্ত ৯৪ জন জিম্মি হামাসের হাতে ছিলেন। তাদের মধ্যে ৩৪ জন মারা গেছেন বলেই ধরে নেওয়া হয়। বিবিসির রুশদি আব্দুল রউফ বলেন, এ চুক্তির কারণে লাখ লাখ বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে পারবেন। এ চুক্তির অধীনে ৬০০ ট্রাক ত্রাণ গাজায় সরবরাহের অনুমোদন রয়েছে। এগুলোতে চিকিৎসাসামগ্রীও যাবে। এ ছাড়া জ্বালানিবাহী ৫০টি লরিও গাজায় পাঠানো হবে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প এটাকে ‘মহাকাব্যিক চুক্তি’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘নভেম্বরে আমাদের ঐতিহাসিক বিজয়ের কারণে মাহকাব্যিক চুক্তি সম্ভব হয়েছে।’ সূত্র: আল-জাজিরা/বিবিসি
তাওফিক/