
হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি যুদ্ধ বিরতিতে পৌঁছার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে দু’পক্ষই। এ নিয়ে বুধবার (১৫ জানুয়ারি) হামাস ও আন্তর্জাতিক সব গণমাধ্যম সংবাদ প্রকাশ করেছে। কিন্তু যুদ্ধবিরতির দিনক্ষণ নির্ধারণ করার পর বরাবরের মতো বেঁকে বসেছে ইসরায়েলের ক্ষমতাসীন দল লিকুদ পার্টির জোট সরকারের উগ্র ডানপন্থি নেতারা।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহুর মন্ত্রীপরিষদের কট্টরপন্থী প্রভাবশালী মন্ত্রী ও ইসরায়েলি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ শর্ত দিয়েছেন গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সই করলে তিনি নেতানিয়াহুর সরকার থেকে সরে যাবেন।
স্মোট্রিচের দল রিলিজিয়াস জায়ানিজম এক বিবৃতিতে জানায়, আমরা গাজা থেকে সব ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্ত করে আনতে চাই কিন্তু আমরা গাজায় যেকোনো প্রকার যুদ্ধবিরতির তীব্র বিরোধীতা করি।
দলটি আরও জানায়, আমরা নেতানিয়াহুকে বলেছি যুদ্ধ বিরতি নয় বরং হামাসকে নির্মূল করার মাধ্যমে বন্দিদের উদ্ধার করার জন্য।
বেজালেল স্মোট্রিচ জানান, ইসরায়েল যদি গাজায় ‘টোটাল ভিক্টরি’র (পুরোপুরি বিজয়) উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে তাহলে আমরা সরকারের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখব।
ইসরায়েলের আরেক কট্টরপন্থী নেতা প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইতামার বেন গাভীরও বেজালেল স্মোট্রিচকে সমর্থন দিয়ে যুদ্ধবিরতির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) যুদ্ধবিরতি নিয়ে নিরাপত্তা মন্ত্রীসভায় জরুরি সভা হওয়ার কথা ছিল কিন্তু অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচকে কোনোভাবেই রাজি করতে না পারায় বৈঠক বাতিল করা হয়েছে। ইসরায়েলের পক্ষ থেকে অজুহাত দেখানো হয়েছে যে, শেষ মূহুর্তে হামাস যুদ্ধবিরতি নিয়ে সংকট তৈরি করেছে।
হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ইজ্জাত আল-রিশক বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীরা বুধবার যে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে, তাতে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যেই এ বিলম্ব ঘটেছে। এটি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, নেতানিয়াহু চরম ডানপন্থি জোটসঙ্গীদের চাপের মুখে রয়েছেন।
যুদ্ধবিরতির চুক্তিটি মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পথে থাকলেও, নেতানিয়াহুর যুদ্ধবিরতি নিয়ে সিদ্ধান্ত চরম ডানপন্থি রাজনৈতিক শক্তিকে খুশি করতে নেওয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’ জানিয়েছে, বেন-গভীরের মতো নেতারা অতীতেও এমন চুক্তি ভণ্ডুল করতে চেয়েছেন। তিনি যুদ্ধবিরতিকে দুর্বলতার প্রতীক বলে মন্তব্য করেছেন।
চরম ডানপন্থিরা গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে দেওয়া এবং দুই রাষ্ট্র সমাধানকে স্থায়ীভাবে প্রত্যাখ্যানের পক্ষে। তারা মনে করে, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যেকোনো প্রচেষ্টা ইসরায়েলের নিরাপত্তা ও ইহুদি পরিচয়ের জন্য হুমকি।
কোনো কোনো বিশ্লেষক মনে করছেন, ইসরায়েল হয়তো প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি মেনে নেবে শুধু হামাসের হাত থেকে সকল বন্দিদের উদ্ধার করার জন্য। যদি তা করতে পারে তাহলে আবার যুদ্ধবিরতির শর্তকে পাত্তা না দিয়ে আবার গাজায় হামলা শুরু করবে ইসরায়েল। সূত্র: টিআরটি ওয়ার্ল্ড
মাহফুজ/এমএ/