
ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় খেরসন এলাকার বাসিন্দা ২২ বছর বয়সী তরুণী গত নভেম্বরের শেষ নাগাদ এক ছেলেসন্তান জন্ম দেন। তিনি নিজের স্বামীর নামানুসারে সন্তানের নাম রাখেন ইভান, যিনি ২০২৩ সালে সেনাবাহিনীতে যোগদানের পর থেকে একটি ছেলেসন্তানের স্বপ্ন দেখছিলেন।
শিশু ইভান ছিল সেদিন খেরসন জেলার প্রসূতি হাসপাতালে জন্ম নেওয়া একমাত্র শিশু। খেরসন এমন একটি শহর যেখানে প্রতিদিন মানুষ জন্মের চেয়ে বেশি মারা যায় এবং যেখানের বেশির ভাগ মানুষ প্রতিদিন থাকার চেয়ে পালানোর কথা ভাবে।
স্থানীয় প্রশাসনের পরিসংখ্যান অনুসারে, গত ডিসেম্বরে খেরসনে মাত্র ১৫টি শিশু জন্মগ্রহণ করে, ২৫৬ জন মানুষ মারা যায় এবং ৩১১ জন শহর ছেড়ে পালায়।
রুশ বাহিনীর চালানো ধ্বংসযজ্ঞে খেরসনে মানুষ কমে ৮৩ হাজার জনে দাঁড়িয়েছে। যুদ্ধ শুরুর আগে এখানকার জনসংখ্যা ছিল ৩ লাখ ২০ হাজার। অর্থাৎ প্রায় এক-চতুর্থাংশে নেমে এসেছে এই জেলার জনসংখ্যা। এখানকার অবশিষ্ট মানুষও রুশ বাহিনীর অবিরাম গোলাবর্ষণ থেকে বাঁচতে পথ খুঁজছেন। স্থানীয় মানুষ বেসামরিকদের ওপর রুশদের এই বিরামহীন হামলার নাম দিয়েছেন ‘হিউম্যান সাফারি’। স্থানীয় বাসিন্দা এবং সরকারি কর্মকর্তাদের অভিযোগ, রুশ সেনারা কোনো শহর দখল করা মাত্রই সেখানে হিউম্যান সাফারিতে মেতে উঠছে।
গত গ্রীষ্ম থেকে রুশ সেনারা যুদ্ধক্ষেত্রে একটি নতুন কৌশল অবলম্বন করছে। দক্ষিণ ইউক্রেনে তারা রাস্তার গাড়ি এবং সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে বেশ কিছু ড্রোন উড়িয়ে দিচ্ছে, এর মাধ্যমে তারা ভিডিও গেমের মতো মানুষকে অনুসরণ করছে এবং তাদের লক্ষ্য করে ড্রোন থেকে বিস্ফোরক ফেলছে। বিস্ফোরণের ফলে প্রতিদিন ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। এ ধরনের হামলায় গত নভেম্বর এবং ডিসেম্বরে নিহত হয়েছেন ১৬ জন, আহত হয়েছেন ১৪৪ জন।
এদিকে বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) ইউক্রেনজুড়ে আরও ৫৫টি ড্রোন হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেনীয় বাহিনীর দাবি, এর ৩৪টিই তারা প্রতিহত করেছে। এর মধ্যে একটি ড্রোন পালতোভা অঞ্চলের একটি জ্বালানি অবকাঠামোয় আঘাত হেনেছে। ফলে স্থানীয় বেশ কিছু পরিবার বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সূত্র: আল-জাজিরা, রয়টার্স