
হামাসের সঙ্গে সশস্ত্র যুদ্ধের প্রায় ১৫ মাস পর যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে ইসরায়েল। মাঝের এই ১৫ মাসে প্রাণ হারিয়েছেন ৪৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। ঘরছাড়া হয়েছেন লাখ লাখ মানুষ। গাজার দিকে তাকালে বোঝার উপায় নেই এই অঞ্চলে এক সময় সভ্য মানুষের বসতি ছিল।
মুহুর্মুহু আক্রমণ, বিমান হামলা, ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত থামাতে অবশেষে সম্মত হয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এই ঘটনাকে নেতানিয়াহুর পরাজয় হিসেবেই প্রচার করছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো। তবে আদৌ কী তার খুব ক্ষতি হলো অস্ত্র সরিয়ে রাখায়? এ নিয়েই আলাপ চলছে বিশ্লেষকমহলে।
হামাস ও আন্তর্জাতিক আহ্বানে সাড়া না দিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে গেছেন নেতানিয়াহু। তবে ১৫ মাস পর অবশেষে আগামী রবিবার (১৯ জানুয়ারি) যুদ্ধবিরতি কায়েম করতে রাজি হয়ছেন ইসরায়েলের ক্যাবিনেট সদস্যরা।
এই চুক্তির অধীনে দুই পক্ষ বন্দিবিনিময় করবে। গাজা অঞ্চল থেকে ইসরায়েল সেনা প্রত্যাহার করে নেবে কয়েক ধাপে।
তবে এই সিদ্ধান্তের কারণে নেতানিয়াহুর ওপর নারাজ তেল আবিব প্রশাসন। দেশটির উগ্র ডানপন্থি নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গাভির সরাসরি এই সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করেছেন।
এর আগেও কয়েকবার ইসরায়েলের সংসদে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উঠেছিল। তবে কঠোরভাবে তা দমন করেছেন গাভির। শেষমেষ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে হওয়ায় পদত্যাগের হুমকি দিয়েছেন তিনি।
নেতানিয়াহুর বিপাক শুধু এটুকু নয়। দেশটির অর্থমন্ত্রী বিজালেল স্মট্রিচ ও তার জায়োনবাদী ধর্মীয় দলের সমর্থকদের দাবি, প্রথম ধাপে বন্দিবিনিময় করার পরই আবার যুদ্ধ শুরু করতে হবে। অন্যথায় বিজালেলও পদত্যাগ করবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
তবে বিপত্তিসত্ত্বেও নেতানিয়াহুর ট্রাম্প কার্ড-যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থন। এমনিতে ট্রাম্পও ইসরায়েলের উগ্র ডানপন্থি মনোভাবকে কিছুটা সমর্থন করেন। তবে আগামী সোমবার (২০ জানুয়ারি) প্রেসিডেন্ট পদে অভিষেকের আগেই ইসরায়েল-হামাস দ্বন্দ্বের অবসান চেয়েছিলেন তিনি।
ঠিক এখানেই নেতানিয়াহুর মোক্ষম চাল আছে বলে মত ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের কর্মকর্তা মাইরেভ জন্সজেইনের। এখন জরুরীভিত্তিতে ট্রাম্পের আবদার মেনে ভবিষ্যতে গাজার ওয়েস্ট ব্যাংকে আরও নিয়ন্ত্রণ পাওয়ার আশা করছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সম্প্রতি দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত নেতানিয়াহু বেন গাভির ও স্মট্রিচের মতো উগ্র ডানপন্থি নেতার সমর্থনে নিজের অবস্থান টিকিয়ে রেখেছেন। এ পরিস্থিতিতে জোটের সমর্থন হারালে নেতানিয়াহু বিপাকে পড়তেন- যদি যুদ্ধবিরতির পক্ষে থাকা বিরোধী দলের নেতারা তার পাশে না দাঁড়াতেন।
জনআকাঙ্ক্ষাও নেতানিয়াহুর পক্ষেই। এ প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ওরি গোল্ডবার্গ বলেন, ‘১৫ মাস আমাদের বলা হয়েছে জয় নিকটে। কিন্তু জয়ের পরিবর্তে আমরা শুধু রক্তপাতই দেখেছি। আমরা ক্লান্ত। আর যুদ্ধ চাই না।’
এদিকে হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে দেশের অভ্যন্তরে নেতানিয়াহু রাজনৈতিক সমর্থন ঠিকই পেয়েছেন, কিন্ত আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ব্যাপক সমালোচনার শিকার হয়েছেন।
যুদ্ধ এভাবে চলতে থাকলে ইসরায়েলের সার্বভৌমত্বেও আঘাত আসতে পারে বলে ধারণা করছেন দেশের বেশ কয়েকজন গবেষক।
ড. গাই শালেভ এ বিষয়ে বলেন, ‘যেভাবে ফিলিস্তিনি প্রাণকে অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে , তা খুবই দুঃখজনক।’
এ পর্যায়ে নেতানিয়াহুর খুব একটা ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করছেন না বিশেষজ্ঞরা। প্রশাসনের রোষানলে দগ্ধ হলেও তা নিতান্তই সাময়িক। ভবিষ্যতে নিজের আধিপত্য কায়েমের পথ তিনি ঠিকই তৈরি করে রেখেছেন। সূত্র: আল-জাজিরা
নাইমুর/