
অবৈধ অভিবাসীদের খোঁজে এখন থেকে গির্জা ও স্কুলে অভিযান চালাতে পারবে যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষ। তাদের সে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এতদিন গির্জা, স্কুল ও হাসপাতালের মতো অবকাঠামোতে অভিযান চালাতে পারত না তারা। গত সোমবার এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটির অ্যাক্টিং (ভারপ্রাপ্ত) সেক্রেটারি বেঞ্জামিন হাফম্যান দুটি নির্দেশনা দেন।
বুধবার (২২ জানুয়ারি) যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিবিএস এক প্রতিবেদনে একথা জানায়। হাফম্যান প্রথম নির্দেশনায় বাইডেন আমলের এক নির্বাহী আদেশ বাতিল করেন। ওই আদেশে ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টকে (আইস) স্কুল ও ধর্মীয় উপাসনালয়ের মতো স্পর্শকাতর স্থানে অভিযান চালাতে নিষেধ করা হয়েছিল। দ্বিতীয় নির্দেশনায় মানবিক প্যারোল কর্মসূচি সীমিত করা হয়েছে। প্রতিটি ঘটনা খতিয়ে দেখে তারপর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সীমান্ত জার হিসেবে খ্যাত টম হম্যান গত মঙ্গলবার উপস্থিত হয়েছিলেন ফক্স নিউজের এক অনুষ্ঠানে। সেখানে তিনি নিশ্চিত করেন, আইস কর্মকর্তারা এরই মধ্যে অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠাতে শুরু করেছেন। যেসব শহর নথিপত্রবিহীন মানুষকে আশ্রয় দিচ্ছে, তাদের প্রতিও সতর্কবার্তা জানান তিনি।
হম্যান বহু আগে থেকেই গণহারে অবৈধ অভিবাসী ফেরত পাঠানোর পক্ষে কথা বলে আসছেন। তিনি মঙ্গলবার জানান, আইসের একাধিক টিম এই লক্ষ্য অর্জনে কঠোর পরিশ্রম করছে। তিনি বলেন, ‘আইস টিম আজ থেকেই দায়িত্ব পালন করছে। আমরা তাদেরকে জননিরাপত্তার জন্য হুমকি হবে এমন বিষয়গুলো অগ্রাধিকার দিতে বলেছি। আমরা সেটিই করতে চাচ্ছি।’
যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটির এক মুখপাত্র জানান, এ পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রটেকশন (সিবিপি) ও আইস এজেন্টদের অভিবাসী আইন প্রয়োগের এবং অবৈধ অভিবাসীদের আটক করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। তিনি আরও বলেন, এসব অবৈধ অভিবাসীর মধ্যে হত্যাকারী এবং ধর্ষকও আছে। তারা গ্রেপ্তার এড়াতে আর যুক্তরাষ্ট্রের স্কুল ও গির্জায় লুকিয়ে থাকতে পারবে না। ট্রাম্প প্রশাসন আমাদের সাহসী আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাত বেঁধে রাখবে না। বরং তারা বিচার-বিবেচনার সঙ্গে কাজ করবে।
মুখপাত্র বলেন, বাইডেন প্রশাসন মানবিক প্যারোল কর্মসূচির সুযোগ নিয়ে নির্বিচারে ১৫ লাখ অবৈধ অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে দিয়েছে। এগুলো ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম দিনেই বন্ধ করা হয়েছে। এই পদক্ষেপ (নির্দেশনা জারি) মানবিক প্যারোল কর্মসূচিকে মূল অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাবে- যেখানে প্রতিটি ঘটনা বিচার করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ব্রুকলিন বরোর ফুলটন এলাকা থেকে চার বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করেছে আইস। নিউইয়র্কে অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা আইন কর্মকর্তা খাদিজা মুনতাহা রুবা বাংলাদেশের একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, নিউইয়র্কের ব্রুকলিন বরোর ফুলটন এলাকা থেকে আড্ডা দেওয়া অবস্থায় নথিপত্রহীন চার বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করেছে আইস। এ সময় তারা সাদাপোশাকে ছিলেন।
এদিকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা নেওয়ার পর বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে অবৈধ অভিবাসী গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। এসব ঘটনায় দেশটিতে অবস্থানরত নথিপত্রবিহীন বাংলাদেশিরা আতঙ্কে দিন পার করছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমটির খবরে বলা হয়েছে, ফুলটন এলাকায় আড্ডা দিচ্ছিলেন কয়েকজন। হঠাৎ সাদাপোশাকে কয়েকজন কর্মকর্তা এসে তাদের পরিচয়পত্র দেখাতে বলেন। এ সময় একজন প্রতিবাদী হয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চম সংশোধনী অনুযায়ী তিনি পরিচয়পত্র দেখাতে বাধ্য নন। এ কথা বলায় তাকে গ্রেপ্তার করে অন্যদের ছেড়ে দেওয়া হয়। কিছুটা দূরে একই এলাকায় আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ট্রাম্পের নাগরিকত্ব বাতিলের আদেশের বিরুদ্ধে ২৪ অঙ্গরাজ্য ও দুই শহরের মামলা
জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের সুযোগ বাতিলের ব্যাপারে ট্রাম্প নির্বাহী আদেশ জারি করার এক দিনের মধ্যেই তার বিরুদ্ধে ফেডারেল আদালতে ২৪টি অঙ্গরাজ্য ও দুটি শহরে মামলা হয়েছে। ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত এই অঙ্গরাজ্য ও শহরগুলো ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে মার্কিন সংবিধানের গুরুতর লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছে।
ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ নেওয়ার দিনই অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দেন। এরপর ঘোষণা দেন, যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া অবৈধ অভিবাসীদের সন্তানরা আর স্বয়ংক্রিয়ভাবে মার্কিন নাগরিকত্ব পাবে না।
এই আদেশের বিরুদ্ধে বোস্টনের ফেডারেল আদালতে মামলা করে ২২টি অঙ্গরাজ্য এবং ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়া এবং সান ফ্রান্সিসকো কর্তৃপক্ষ। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, এই আদেশ আমেরিকান সংবিধানের ১৪তম সংশোধনী লঙ্ঘন করেছে। প্রেসিডেন্টের এ ধরনের আদেশ দেওয়ার কোনো আইনগত ক্ষমতা নেই।
এই মামলায় আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি নাগরিক অধিকার সংগঠন এবং অভিবাসনবিষয়ক প্রতিষ্ঠানও জোটবদ্ধ হয়েছে। এমনকি একটি অন্তঃসত্ত্বা নারীও একই ধরনের মামলা করেছেন। তারা বলেছেন, এটি শুধু আইনি লঙ্ঘন নয়, বরং মানবাধিকারের জন্যও একটি বড় আঘাত।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি নিয়ে এটি তার প্রশাসনের প্রথম বড় ধরনের আইনি চ্যালেঞ্জ। দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ গ্রহণের পরপরই নেওয়া তার সিদ্ধান্তগুলো এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো আদালতের কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে। সূত্র: সিবিএস, দ্য গার্ডিয়ানং