যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও মেক্সিকো থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর আগামী ১ আগস্ট থেকে ৩০ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হবে। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেইন এবং মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লডিয়া শেইনবাউমকে পাঠানো চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়।
স্থানীয় সময় শুক্রবার (১১ জুলাই) রাতে নিজের ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে দুটি পৃথক চিঠিতে এ ঘোষণা দেন ট্রাম্প।
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ইইউ বা মেক্সিকো যদি পাল্টা কোনো বাণিজ্যিক ব্যবস্থা নেয়, তবে তাদের পণ্যে আরও উচ্চহারে শুল্ক আরোপ করা হবে। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি একধাপ ছাড় দিয়ে ট্রাম্প বলেন, ইইউ বা তাদের কোনো কোম্পানি যদি যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য উৎপাদন বা নির্মাণ করে, তবে ওই পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করা হবে না।
মেক্সিকোর উদ্দেশে লেখা চিঠিতে ট্রাম্প বলেন, মেক্সিকো সীমান্ত নিরাপত্তায় আমাদের সহায়তা করেছে, তবে তারা যথেষ্ট করছে না।’
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে ইইউ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় পণ্য রপ্তানিকারক, যার রপ্তানি মূল্য ৫৫৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়।
এদিকে, ২৭ সদস্য দেশের ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যা যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার, এই সপ্তাহের শুরুতেই জানিয়েছিল, ১ আগস্টের আগেই ওয়াশিংটনের সঙ্গে একটি বাণিজ্যিক সমঝোতায় পৌঁছানোর জন্য তারা কাজ করছে।
চলতি সপ্তাহে কানাডা, জাপান, ব্রাজিল, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ-সহ আরও অন্তত ২৩টি দেশের নেতাদের উদ্দেশে অনুরূপ চিঠি পাঠিয়েছেন। এসব চিঠিতে বিভিন্ন দেশের ওপর ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
ট্রাম্প বলছেন, বৈশ্বিক বাণিজ্যে ‘পারস্পরিকতা’ আনার লক্ষ্যে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের ২ এপ্রিল ‘লিবারেশন ডে’তে ঘোষণা দিয়ে প্রায় পুরো বিশ্বের ওপর ১০% শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প এবং ৬০টি নির্দিষ্ট দেশের জন্য শুল্কহার আরও বাড়িয়ে দেন। এর ফলে বৈশ্বিক শেয়ারবাজারে ব্যাপক মন্দা দেখা দেয়।
তবে এক সপ্তাহের মাথায় এসব শুল্ক কার্যকরের ওপর ৯০ দিনের বিরতি দেন ট্রাম্প। এই সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ৯০টি নতুন বাণিজ্য চুক্তি করতে চায় বলে জানিয়েছিল প্রশাসন, যদিও বাস্তবে কেবল যুক্তরাজ্য ও ভিয়েতনামের সঙ্গে প্রাথমিক সমঝোতা হয়।
এরপর গত সোমবার আবারও ১ আগস্ট পর্যন্ত শুল্ক বিরতির সময়সীমা বাড়ানো হয়। ট্রাম্পের নতুন চিঠিগুলোতে ঘোষিত শুল্ক কার্যকর হবে একই দিনে।
এনবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ‘বাকি সব দেশকে আমরা জানিয়ে দিচ্ছি, তারা হয় ২০%, না হয় ১৫% শুল্ক দেবে। আমরা এটা এখন ঠিক করে নিচ্ছি।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে বিশ্ববাণিজ্যে উত্তেজনা বাড়তে পারে এবং ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার মধ্যে সম্পর্কেও প্রভাব পড়তে পারে। সূত্র: বিবিসি, সিএনবিসি
মাহফুজ/