
পাকিস্তান সরকার ডিজিটাল অপরাধ আইনে- ২০২৫ (পেকা) নতুন সংশোধনী আনার উদ্যোগ নিয়েছে। মূলত ভুয়া খবরের বিস্তার প্রতিরোধে এই আইন সংশোধন করছে সরকার। তবে এই সংশোধনীগুলোর বিরুদ্ধে দেশটির গণমাধ্যম এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো কঠোর প্রতিবাদ জানিয়েছে।
তারা বলেছে, এটি সাংবাদিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ করতে পারে এবং সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের আইনি ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই সংবাদ প্রকাশ করেছে ভয়েস অব আমেরিকা।
নতুন সংশোধনীগুলোর মধ্যে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর জন্য তিন বছরের কারাদণ্ড এবং সাত হাজার ডলার পর্যন্ত জরিমানা ধার্য করা হয়েছে। এ ছাড়া, অনলাইনে কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণের জন্য চারটি নতুন সরকারি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যা সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটি গত সোমবার সংশোধনীর অনুমোদন দিয়েছে এবং এটি এখন পাকিস্তানের সিনেটের অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করছে। গত বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে এই বিলটি পাস হয় কিন্তু বিরোধী দলের সদস্য এবং সাংবাদিকরা এটির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে কক্ষ ত্যাগ করেন।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সেক্রেটারি নায়ার আলী জানিয়েছেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টতা এটি পরিষ্কারভাবে দেখাচ্ছে, সরকার বিষয়টিকে জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যু হিসেবে উপস্থাপন করছে।’
এদিকে, পেকা আইনের মূল উদ্দেশ্য ছিল সাইবার অপরাধ এবং অনলাইন সহিংসতা প্রতিরোধ করা। তবে ২০১৭ সালে আইনে বেশকিছু পরিবর্তন আসার পর থেকেই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এই আইন ব্যবহার হতে শুরু করেছে।
গণমাধ্যম অধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এই আইনের কারণে অনেক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে তদন্ত হয়েছে এবং তাদের কাজের ওপর সরকারের চাপ বেড়েছে।
সাংবাদিকরা বলছেন, একদিকে যেমন গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে, অন্যদিকে সোশ্যাল মিডিয়াতে অনেক প্রতিবেদন এবং আলোচনা ছড়িয়ে পড়ছে, যা সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
সংশোধিত পেকা আইনে ‘ভুয়া খবর’ এবং ‘ক্ষতিকারক তথ্য’ সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, যার মাধ্যমে আদালত, সেনাবাহিনী, সংসদ এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা যাবে না। এর ফলে বিশেষ করে বিরোধী মতামত প্রকাশকারীরা আইনি ঝুঁকিতে পড়তে পারেন।
এ বিষয়ে পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আজমা বুখারি এই উদ্বেগকে ‘অযৌক্তিক’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
এই আইনটি কার্যকর হলে, সমাজে বিশৃঙ্খলা বা অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে- এমন তথ্য ছড়ানোর জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তি তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং সাত হাজার ডলারের বেশি জরিমানার সম্মুখীন হতে পারেন। তবে সাংবাদিকরা অভিযোগ করেছেন, সরকার এমন তথ্যকে ‘ভুয়া খবর’ হিসেবে চিহ্নিত করতে চাইছে, যা তাদের পছন্দমতো নয়।
পাকিস্তান ফেডারেল ইউনিয়ন অব জার্নালিস্টসসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন এই আইনটির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। সংগঠনগুলো বলছে, এই আইনটি সঠিকভাবে আলোচনার মাধ্যমে পাস হওয়া উচিত ছিল এবং মিডিয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আলোচনা না করেই এটি পাস করা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।
এদিকে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মতো পাকিস্তানের হিউম্যান রাইটস কমিশন এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সরকারের কাছে এই সংশোধনীগুলোর বিরোধিতা করে আলোচনার জন্য আহ্বান জানিয়ে বলেছে, এটি যদি আইনে পরিণত হয়, তবে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও ব্যক্তির মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সূত্র: ভয়েস অব আমেরিকা
তাওফিক/