
কানাডা, মেক্সিকো ও চীনের ওপর শুল্ক আরোপের পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ওপর শুল্ক আরোপ করবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ‘অবশ্যই’ এ কাজ করবে।
গত মঙ্গলবার থেকে কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যে ২৫ শতাংশ করে শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। অন্যদিকে মঙ্গলবার চীনের পণ্যে শুল্ক আরোপ করেছেন তিনি। বিবিসি ট্রাম্পকে ইইউয়ের ওপর কর আরোপ করা হবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন করেছিল। উত্তরে তিনি জানান, এটি অবশ্যই হবে। তবে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে পৃথকভাবে একটি চুক্তি করা যেতে পারে।
এদিকে, এশিয়ার শেয়ারবাজারে ট্রাম্পের শুল্কের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ইউরোপের শেয়ারবাজারও কাল পড়তির দিকে দেখা গেছে। বিশেষ করে গাড়ি নির্মাতাদের ওপর প্রভাব পড়েছে। শুল্ক আরোপ করা প্রসঙ্গে ট্রাম্প বিভিন্ন কারণ দেখাচ্ছেন। সেসব কারণের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে ফেনটানিল ও অন্যান্য মাদকের প্রবাহ বেড়ে যাওয়া, সীমান্ত নিরাপত্তা ইস্যু ইত্যাদি।
এদিকে, চীন, মেক্সিকো ও কানাডা দৃঢ়ভাবেই ট্রাম্পের চাপিয়ে দেওয়া শুল্কের বিরোধিতা করেছে। কানাডা ও মেক্সিকো জানিয়েছে যে তারাও যুক্তরাষ্ট্রের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের কথা ভাবছে। তবে নিজ দেশে রিপাবলিকান পার্টির নেতাদের সমর্থন পাচ্ছেন ট্রাম্প।
ট্রাম্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, মেক্সিকো আমাদের দেশে কয়েক টন ফেনটানিল পাঠায়। অন্যদিকে কানাডার দিক থেকেও সীমান্তে ফেনটানিল বাড়তে দেখা যাচ্ছে। এ কারণেই যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার মাইক জনসন বলেছেন, ট্রাম্প দেশকে নিরাপদ ও আবারও সফল হওয়ার পথে নিয়ে যাচ্ছে। ওই শুল্কগুলো আরও আগেই চাপানো উচিত ছিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি। কংগ্রেসওম্যান মারজোরি টেইলর গ্রিনও ট্রাম্পের পদক্ষেপকে সমর্থন জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, শুল্ক আমাদের রাষ্ট্রীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য প্রমাণিত ও শক্তিশালী উৎস।
তবে সব রিপাবলিকানই যে ট্রাম্পকে সমর্থন জানাচ্ছেন, তা না। সিনেটর মিচ ম্যাকনেল সতর্ক করেছেন যে, শুল্কের কারণে মার্কিনিদের জীবনযাত্রার খরচ বাড়বে। পাশাপাশি তিনি প্রশ্ন রাখেন, কেন আপনি এসব নিয়ে মিত্রে সঙ্গে বিবাদে জড়াবেন?
বড় প্রভাব পড়বে জার্মানির ওপর
ইউরোপীয় ইউনিয়নের কিছু সদস্য রাষ্ট্র ২০২৩ সালের চেয়েও গত বছর বেশি পণ্য রপ্তানি করেছে যুক্তরাষ্ট্রে। ইউরোস্ট্যাটের তথ্যানুসারে, জার্মানি, ইতালি ও আয়ারল্যান্ডের যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির মাত্রা বেড়েছে। এর মধ্যে জার্মানি সবচেয়ে বেশি পণ্য রপ্তানি করেছে সেখানে। ফলে শুল্ক আরোপ হলে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে তাদের ওপর।
জার্মানির রপ্তানি করা বেশির ভাগ পণ্যই গাড়ি ও যন্ত্র। ট্রাম্প একাধিকবার ইইউর যুক্তরাষ্ট্রে গাড়ি রপ্তানির পরিমাণ নিয়ে অভিযোগ করেছেন। তিনি জানান, সে তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে সেরকম গাড়ি ইউরোপের দেশগুলোতে রপ্তানি হচ্ছে না।
ট্রাম্পের বিশ্বাস, শুল্ক আরোপ হলে তা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে দৃঢ় করবে, চাকরির সুযোগ তৈরি করবে এবং কর থেকে আয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি করবে। তবে অনেক অর্থনীতিবিদই সতর্ক করেছেন, শুল্ক আরোপ করার বিষয়টি ব্যবসা ও ভোক্তা উভয় পক্ষের ওপরই প্রভাব ফেলবে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাবে।
এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট চাইছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের কাছ থেকে তেল ও গ্যাস কিনুক। ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার কাছ থেকে সরে আসার পর যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপীয় দেশগুলোর বৃহত্তম তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহকারীতে পরিণত হয়েছে। সূত্র: বিবিসি