রাশিয়ার চারটি সামরিক বিমানঘাঁটিতে ইউক্রেনের হামলার ঘটনা নিশ্চিত করেছে মস্কো। দেশটি এ ঘটনাকে ‘সন্ত্রাসী কার্যক্রম’ হিসেবে অভিহিত করেছে। ইউক্রেনের হামলায় ৪০টি যুদ্ধবিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইউক্রেনেও ব্যাপক হামলা হয়েছে। গত রবিবার রাতভর দেশটিতে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেনের কর্তৃপক্ষ তথ্যটি নিশ্চিত করেছে।
ইউক্রেন এ হামলার জবাবেও পাল্টা ড্রোন হামলা চালিয়েছে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, তারা ১৬২টি ইউক্রেনীয় ড্রোন প্রতিহত করেছে। এর মধ্যে বেশির ভাগই ইউক্রেনের আশপাশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ভূপাতিত করা হয়েছে। ৫৭টি ভূপাতিত করা হয়েছে কারস্ক অঞ্চলে। আর ৩১টি ভূপাতিত করা হয়েছে বেলগোরোদে।
অন্যদিকে ইউক্রেন জানিয়েছে, রাশিয়া তাদের লক্ষ্য করে ৮০টি ড্রোন ও চারটি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে, যা সবমিলিয়ে ১২টি স্থানে আঘাত হেনেছে।
রাশিয়ার যে চারটি বিমানঘাঁটিতে ইউক্রেন হামলা চালিয়েছে, সেগুলোর মধ্যে দুটির অবস্থান ইউক্রেন থেকে কয়েক হাজার মাইল দূরে। ইউক্রেনের হামলার কবলে পড়া বিমান ঘাঁটিগুলো হলো- সাইবেরিয়ার ইরকুতস্কের বেলায়া, রাশিয়ার উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে ওলেনিয়া, মধ্য রিয়াজানের ডিয়াজিলেভো ও মধ্য ইভানভো অঞ্চলের ইভানভো।
এসবিইউর এক সূত্র জানায়, পরমাণু সক্ষমতার টিইউ-৯৫, টিইউ ২২এম৩ ও এ-৫০ যুদ্ধবিমানেও হামলা হয়েছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানান, ‘স্পাইডারস ওয়েব’ নামের ওই অভিযানটি পরিচালনা করেছে এসবিইউ সিকিউরিটি সার্ভিস। হামলার সময় ১১৭টি ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে।
এসবিইউয়ের এক সূত্র বিবিসিকে বলেছেন, এ হামলার প্রস্তুতিতে প্রায় দেড় বছর সময় লেগেছে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কাঠের ভ্রাম্যমাণ কেবিনে গোপন ড্রোন রাখা হয়। পরে সেগুলো বিমানঘাঁটির কাছাকাছি অবস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে, এমন একটি সময় এসব হামলা হচ্ছে, যখন রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধবিরতি আলোচনা চলছে। দ্বিতীয় দফার বৈঠকে যোগ দিতে দুই পক্ষের আলোচক দলই ইস্তাম্বুলে উপস্থিত হয়েছে।
আলোচনার আগেই ইউক্রেনের কর্মকর্তারা ইস্তাম্বুলে জার্মানি, ইতালি ও যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। কিয়েভের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তথ্যটি নিশ্চিত করেছে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রার আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। এর পর পর্যায়ক্রমে দেশটির বেশ কিছু অঞ্চল দখলে নেয় তারা। সবমিলিয়ে এখন রাশিয়ার হাতে ইউক্রেনের মোট ভূখণ্ডের এক-পঞ্চমাংশ রয়েছে। এ অঞ্চলের মধ্যে ২০১৪ সালে রুশ অধিকৃত ক্রিমিয়া উপদ্বীপও রয়েছে।
শান্তি আলোচনার আগেই রাশিয়া জানিয়ে দিয়েছে, তারা ইউক্রেনের এলাকা ফেরত দেবে না।
ইউক্রেনের নেতৃস্থানীয়রাও মনে করছেন, বেশ কিছু এলাকা তারা ফিরে পাবেন না। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে আভাস দেওয়া হয়েছে।
প্রথম শান্তি বৈঠকের পর সবকিছু ধীরে ধীরে প্রশমিত হবে এমন প্রত্যাশা করা হলেও তা হয়নি। ওই বৈঠকের পর থেকেই ইউক্রেনে হামলার মাত্রা বেড়ে যায়। বিষয়টি এমন একটি পর্যায়ে গিয়ে ঠেকে যে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি চুপ থাকতে বলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকেও।
এদিকে, ইউক্রেনও পাল্টা জবাব দেওয়া অব্যাহত রেখেছে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে পরিচালিত সর্বশেষ অভিযানে সাফল্যের জন্য এসবিইউ প্রধান ভাসিল মালিউককে গত রবিবার অভিনন্দন জানান জেলেনস্কি। তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে চমৎকার বিষয় হলো, রাশিয়ার অভ্যন্তরে এ অভিযান পরিচালনার অফিসটি ছিল এফএসবির কাছে।’ প্রসঙ্গত, এফএসবি রাশিয়ার প্রভাবশালী নিরাপত্তা সংস্থা হিসেবে পরিচিত।
তবে হামলা চালানোর পর কাউকে ধরা পড়তে হয়নি। জেলেনস্কি জানান, অভিযানের সঙ্গে জড়িতরা হামলার আগেই নিরাপদে রাশিয়া ছেড়ে বের হয়ে গেছেন।
এসবিইউয়ের অনুমান, এ হামলায় রাশিয়ার প্রায় ৭০০ কোটি ডলারের ক্ষতি হয়েছে। এ বিষয়ে শিগগিরই বিস্তারিত জানানো হবে বলেও উল্লেখ করেছে তারা। তবে আদৌ এত বিপুল অঙ্কের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কি না, সে দাবির সত্যতা নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা যায়নি। সূত্র: বিবিসি