কাবুলে (আফগানিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) বৈঠকের আগে তালেবানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির (বামে) সাথে করমর্দন করছেন আফগানিস্তানে নিযুক্ত প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রদূত জালমে খলিলজাদ (মাঝে)। মার্কিন কর্মকর্তা অ্যাডাম বোহলার তা দেখছেন। ছবি: সংগৃহীত
ধারণা করা হচ্ছে ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও জালমায় খলিলজাদকে আফগানিস্তানে তালেবানের সঙ্গে মধ্যস্থতার দায়িত্ব দেবেন। তবে কিছু বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এটি একটি ভুল সিদ্ধান্ত হবে।
আফগানিস্তানে জন্ম নেওয়া জালমায় খলিলজাদ একজন প্রভাবশালী মার্কিন কূটনীতিক ও পররাষ্ট্র নীতি বিশেষজ্ঞ। তিনিই ২০২০ সালের দোহা চুক্তির প্রধান স্থপতি ছিলেন।এই চুক্তির পরই আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যায় মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনী। ফলে তালেবানের সঙ্গে মার্কিন বাহিনীর দীর্ঘ ২০ বছরের যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে।
গত সপ্তাহে তিনি তালেবানের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে জর্জ গ্লেজম্যান নামের এক মার্কিন বন্দীকে মুক্ত করে আবারও আলোচনার কেন্দ্রে আসেন। যদিও এবিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়, কাতারের মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসনের একটি চুক্তির আওতায় গ্লেজম্যান মুক্তি পায়।
কিন্তু গত সপ্তাহে গ্লেজম্যানের সাথে খলিলজাদকে দেখতে পাওয়া যায়। তবে আসলে খলিলজাদ নিজেই কাবুলে গিয়ে তালেবানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং গ্লেজম্যানকে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনেন। এমনকী পরে তিনি টুইটারে এই মুক্তির খবর নিশ্চিত করে বলেন, আজকের দিনটি ভালো।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসন আবারও খলিলজাদকে তালেবানের সঙ্গে আলোচনার জন্য ব্যবহার করতে পারে। বিশেষ করে, আবারও কাবুলে মার্কিন দূতাবাস চালুর সম্ভাব্য আলোচনায় খলিলজাদকেই দায়িত্ব দেয়া হবে। আর যদি এটি বাস্তবায়িত হয়, তাহলে তালেবান সরকারের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার পথে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ হবে।
ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে খলিলজাদকে আফগানিস্তানে তালেবানদের সাথে সমঝোতায় মার্কিন বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব দেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি দোহা চুক্তি ছাড়া তালেবান ও গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত আফগান নেতাদের মধ্যে ক্ষমতা ভাগাভাগির কোনো ফলপ্রসূ সমাধান করতে পারেননি।
এদিকে বাইডেন প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, খলিলজাদের চুক্তি তাদের দ্রুত সেনা প্রত্যাহার করতে বাধ্য করে। আর একারণেই তালেবানরা খুব সহজে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হয়।
খলিলজাদকে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেন। ২০০৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন। সেসময়ে তিনি ছিলেন মার্কিন প্রশাসনে সর্বোচ্চ পদধারী মুসলিম-আমেরিকান।
এর আগে, প্রথমে তিনি আফগানিস্তানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে ২০০৪ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত এবং ইরাকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে ২০০৫ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
কাবুলে বেড়ে উঠা খলিলজাদ হাইস্কুল এক্সচেঞ্জ ছাত্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে যান এবং পরে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। রিগ্যান প্রশাসনের সময় তিনি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে কাজ করেন এবং সে সময় সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধের বিষয়ে পরামর্শ দিতেন। দীর্ঘ চার দশক ধরে তিনি আফগানিস্তানের শাসকদের সঙ্গে মধ্যস্থতা করেন। ১৯৮৯ সালে সোভিয়েত সেনাদের আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহারের সময়ও তিনি যুক্ত ছিলেন।
২০১৪ সালে আফগানিস্তানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার গুঞ্জন থাকলেও শেষ পর্যন্ত তিনি প্রার্থী হননি। এমনকী ২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে খলিলজাদকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদেও বিবেচনা করেন। সূত্র: এওএলডটকম
দিনা