গত কয়েকদিনে অধিকৃত পশ্চিম তীরেও ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এবং বসতি স্থাপনকারীদের বেশ কয়েকটি সংঘর্ষে্র ঘটনা ঘটে। ছবি: সংগৃহীত
গাজা উপত্যকা যেন নরকের অপর নাম। এখানকার মানুষগুলো যেভাবে দিন কাটাচ্ছেন কল্পিত নরকেও হয়ত মানুষকে এতটা বীভৎস পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যেতে হবে না। আইডিএফ-এর বর্বরোচিত হামলায় বুধবার (১৯ মার্চ) দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস এবং রাফায় রাতভর ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ১৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বোমা হামলায় বুধবার দ্বিতীয় দিনে উপত্যকাজুড়ে প্রাণহানি আরও অনেক বেশি হবে বলে আশঙ্কা করছে হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও অনেকের মরদেহ চাপা পড়ে রয়েছে বলে জানায় একাধিক মানবাধিকার সংস্থা।
বেসামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের বরাত দিয়ে আল-জাজিরা জানায়, ইসরায়েলের হামলার পর হতাহতদের উদ্ধার করতে গিয়ে নিহতদের দেহের ছিন্নভিন্ন মাংস পাওয়া যাচ্ছে। যাদের মধ্যে বেশির ভাগ নারী এবং শিশু।
কাতারভিত্তিক সম্প্রচারমাধ্যমটি আরও জানায়, পুরো উপত্যকার আকাশে ইসরায়েলের ড্রোন। স্থানীয়রা বলছেন, অসংখ্য ড্রোনের কারণে গাজার আকাশ মেঘলা দেখাচ্ছে, ড্রোনের পাখার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে পুরো উপত্যকা থেকেই। উপত্যকার কোনো স্থানই নিরাপদ নয় জেনেও জীবন বাঁচাতে এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করছেন বাসিন্দারা।
আল-জাজিরার তথ্যমতে, নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে গাজার দক্ষিণ-উত্তরাঞ্চল থেকে মধ্য গাজার দিকে ছুটে যাচ্ছেন বাসিন্দারা। আবার মধ্য গাজায় বোমা হামলার তীব্রতায় সেখান থেকে উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলে সরে যাচ্ছেন বাসিন্দারা। প্রাণ বাঁচাতে অসহায় মানুষগুলো যেন মরীচিকার পেছনে ছুটে চলেছেন!
মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) থেকে যুদ্ধবিরতি উপেক্ষা করে গাজায় ব্যাপক হামলা শুরু করে আইডিএফ। নির্বিচারে পুরো উপত্যকাজুড়ে চলছে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। আবাসিক ভবন ও শরণার্থী শিবিরগুলো লক্ষ্য করে শুরু করা এই হামলাতে এক দিনেই প্রাণ গেছে চার শতাধিক ফিলিস্তিনির।
এমন পরিস্থিতিতে হাসপাতালগুলোতে হতাহতদের ভিড় সামলাতে বেগ পেতে হচ্ছে স্বাস্থ্যকর্মীদের। তারা বলছেন, এত বিপুলসংখ্যক মানুষকে জায়গা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু আহতদের অন্য কোথাও যাওয়ার সুযোগ নেই। পাশাপাশি, হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামও নেই। তাছাড়া উপত্যকাজুড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল। আবার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম নিয়ে ত্রাণের ট্রাকও উপত্যকায় ঢুকতে দিচ্ছে না আইডিএফ সেনারা।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক সংস্থা ওসিএইচএ বলছে, ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের (আইসিইউ) জন্য ২০টি ভেন্টিলেটর আর নবজাতকদের জন্য ৯টি ইনকিউবেটর নিয়ে সীমান্তে দাঁড়িয়ে আছে তাদের ট্রাক।
বর্তমানে গাজায় কোনো হাসপাতালই পুরোপুরি কার্যকর নয়। এর মধ্যে ১৩টি হাসপাতাল আর চারটি ফিল্ড হাসপাতাল পুরোপুরিই অকার্যকর। এমন পরিস্থিতিতে ত্রাণসহায়তা ঢুকতে না দিলে গাজায় মানবিক পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হবে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। সূত্র: আল-জাজিরা
দিনা/অমিয়/